নিজস্ব সংবাদদাতা: “লালগড়ে সিপিএমের অস্থিত্ব মুছে দিতে চেয়েছিলাম, সফল হয়েছি।…আমরা জঙ্গলমহলবাসী জানি, অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে ‘জঙ্গল মহলের মুক্তি সূর্য চির উজ্জ্বল থাকবে।” নিজের পদত্যাগ পত্রে এমনটাই লিখেছেন লালগড় তথা বিনপুর ১ ব্লকের সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া তৃনমূল যুব ব্লক সভাপতি তন্ময় রায়। সম্প্রতি তাঁকে সরিয়ে সভাপতি করা হয়েছে ছত্রধর ঘনিষ্ট রাজু হাঁসদাকে যেমনটা ঝাড়গ্রাম ব্লক সভাপতি পদে আনা হয়েছে ছত্রধর ঘনিষ্ট নরেন মাহাতকে।
লালগড়ের নেতাই গ্রামের বাসিন্দা তন্ময় রায়ের চিঠি ঝড় তুলেছে জঙ্গল মহলের ঝাড়গ্রাম জেলায়। প্রশ্ন উঠেছে যদি সিপিএমের অস্তিত্ব মুছে গিয়েই থাকে তবে এখন অশুভ শক্তিটি কে?
২০১১ সালের মে মাসে বামফ্রন্ট সরকারের পতন আর তৃণমূল সরকার গঠনের পর সারা জঙ্গলমহলে বড় বড় করে ফ্লেক্স আর ব্যানার ছেয়ে থাকত শুভেন্দু অধিকারীর ছবি দিয়ে যার তলায় লেখা থাকত জঙ্গলমহলের মুক্তি সূর্য। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার সেই ব্যানারের প্রাবল্য এতটাই ছিল যে অনেক জায়গাতেই তৃনমূল আর শুভেন্দু অধিকারী নামটা সমার্থক হয়ে গিয়েছিল।
২০১৬ নির্বাচনের পর জঙ্গলমহল থেকে ধিরে ধিরে সাংগঠনিক দায়িত্ব কমানো হয় তাঁর পরিবর্তে গুঁজে দেওয়া হয় হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রীটের একান্ত অনুগত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু শুভেন্দুর অনুগামীরা তাতে দমে যায়নি। মাঝখানে নেতৃত্ব হীন হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা। দল সামলাতে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে অজিত মাইতিকে পাঠানো হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীরা প্রমান করে দিয়েছে শুভেন্দু ছাড়া দল অচল। এরপর একে একে শুভেন্দুহীন জঙ্গলমহলে নির্বাচনে ধ্বস। শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য ছাড়েননি জঙ্গলমহলকে। একের পর এক সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচি নিয়েছেন জঙ্গলমহলে। ঝাড়গ্রাম, জামবনি, লালগড় থেকে শুরু করে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় তাঁর সাহায্যের হাত পৌঁছে গেছে ‘আমরা দাদার অনুগামী’দের হাত ধরে। সেরকমই একজন অনুগামী তন্ময় রায়।বলাবাহুল্য কে মুক্তি সূর্য আর কারা সেই অশুভ শক্তি বলার অপেক্ষা রাখেনা নতুন করে।
অবশ্য শুধুই তন্ময় রায় নয়,ঝাড়গ্রাম জেলার পাশাপাশি আশেপাশের জেলাতেও মুক্তি সূর্যের ওঠার অপেক্ষায় ‘আমরা দাদার অনুগামী’র দল। পাশাপাশি অশুভ শক্তিকেও পরাস্ত করতে চান তাঁরা। মন্ত্রী করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়ার পরই জেলায় জেলায় তাঁর রোগমুক্ত হওয়ার কামনায় শুরু হয়েছে যজ্ঞ। শনিবারও সেই যজ্ঞ হয়েছে একাধিক জায়গায়। এদিন জঙ্গলমহলের চিল্কীগড়ের কনকদুর্গার মন্দিরে শুভেন্দু অধিকারীর আরোগ্য কামনায় মহাযজ্ঞ করেন জামবনী ব্লক অফিসের কর্মী স্নেহাশীষ ভকত। এই সরকারি কর্মীর হাত দিয়েই এতদঞ্চলের মানুষের জন্য সাহায্য সহযোগিতা পাঠান মন্ত্রী।
অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের শ্রী শ্রী নর্মদেশ্বর মন্দিরে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর জননী গায়ত্রী দেবীর দ্রুত আরোগ্য কামনায় সবং ব্লকের দাদার অনুগামীদের পক্ষ থেকে পুজো ও মহামৃত্যুঞ্জয় যজ্ঞ করা হয় বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা শেখর মাইতি। এভাবেই একাধিক জায়গায় যজ্ঞ পূজা ইত্যাদি চলছে। এই প্রক্রিয়াটাও কিন্তু আরও সঙ্ঘবদ্ধ করছে শুভেন্দু অনুগামীদের। সুতরাং ২০২১ নির্বাচনে ‘মুক্তি সূর্য’টিকে খুব সহজেই নিভিয়ে দেওয়ার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে তা আপাতত সফল হবে বলে মনে হচ্ছেনা।