নিজস্ব সংবাদদাতা: কথায় আছে ধ্যাড়ধ্যাড়ে গোবিন্দপুর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সীতানগর গ্রামকে সেই অর্থে ধ্যাড়ধ্যাড়ে না বলা গেলেও খুব উন্নতও বলা যায়না। এ গ্রামের তিন কিলোমিটারের মধ্যে চন্দ্রকোনা পৌরসভা যা বাংলার ক্ষুদ্রতম পৌরসভার একটি। নামে পৌরসভা হলেও মফঃস্বলের গন্ধমাখা চন্দ্রকোনা পৌরসভা বা তার আশেপাশের এলাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব। আরও কিলোমিটার দশেক উজান বেয়ে ২৭ কিলোমিটার দুরে ঘাটাল কিংবা ৪৫ কিলোমিটার দুরে মেদিনীপুর গেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সন্ধান মেলে বটে কিন্তু গ্রামের মানুষের অতদুর গিয়ে সে চিকিৎসক দেখানোর সময় বা সামর্থ্য কোথায়? সীতানগরের রাকেশ মালসের ইচ্ছা তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার। সীতানগরের অজ গাঁ থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম দশে ঠাঁই করে নিয়েছে রাকেশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের যে ২জন পড়ুয়া প্রথম দশে এসেছে তাঁর একজন সুপর্ণা সাহু অন্যজন রাকেশ। শহরের অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ন বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুপর্ণা মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা। ৪৯১ নম্বর পেয়ে রাজ্যে নবম স্থান অধিকার করেছে সে। অন্যদিকে রাকেশ গ্রামের। রাকেশের স্বপ্ন তাঁর আশেপাশের গ্রামগুলির জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব পূরণ। না, সবটা সে পারবেনা কিন্তু একজন তো হতে পারবে।
চন্দ্রকোনা জিরাট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র রাকেশ ৫০০ নম্বরে মধ্যে ৪৯০ নম্বর পেয়ে রাজ্যে দশম স্থানে এসেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি প্রান্তিক গ্রামে থেকে এই ফল করাটা খুব একটা সহজ কাজ ছিলনা রাকেশের জন্য। একটা সময় বিদ্যুৎকেই যদি আধুনিকতার ধাপ বলা হত এখন সেই জায়গা নিয়েছে মোবাইল বা কম্পিউটার নেট ওয়ার্ক। সীতানগরে সেই নেটওয়ার্ক খুবই দুর্বল। অন-লাইনে পড়াশুনার যুগে নেটওয়ার্ক কী পরিমান সমস্যা গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য তা সীতানগর তো দুরের কথা চন্দ্রকোনা পৌরসভা এলাকাতে এলেই টের পাওয়া যায়। সীতানগরে ঘরের ভেতরে ঢুকলে নেটওয়ার্কই থাকেনা অর্ধেক সময়। তারই মধ্যে চালাতে হয়েছে পড়াশুনা। মেধার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম তো ছিলই পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবদানকে ভুলে যায়নি রাকেশ।
তবুও আফসোস রয়ে গেছে চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের বসনছোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা রাকেশের। তার ধারণা পরীক্ষা হলে আরও একটু ভালো ফলাফল করা যেত। একাদশ শ্রেণীতে ভালো ফল ছিল তার। ক্লাশে প্রথমই হয়েছিল সে। কিন্তু একাদশ শ্রেণীতে পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর যে ভুলত্রুটি তার নজরে এসেছিল তা শুধরে নেওয়ার সুযোগ মেলেনি। একই কথা জানিয়েছেন রাকেশের বাবা সমর মালসের। চাষাবাদ সাথে ব্যবসার সাথে যুক্ত সমর বাবুর ব্যবসা করোনা পরিস্থিতির কারণে তলানিতে ঠেকেছে বর্তমান চাষাবাদ করে চলে। সমরবাবু আক্ষেপ করে জানিয়েছেন, ” রেজাল্ট ভালো হয়েছে ঠিকই কিন্তু পরীক্ষা দিতে পারলে আরও ভালো ফল করতে পারত রাকেশ।”
ফল বেরুনোর পর বিকেল নাগাদ রাকেশের বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা তুলে দেওয়া হয় জেলা ও ব্লক শিক্ষা দপ্তরের তরফে,পাশাপাশি রাকেশের হাতে ফুলের তোড়া ও মিষ্টি তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর অফ স্কুল শ্রীকান্ত দোলই সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।রাকেশের এমন রেজাল্টে খুশির আবহ চন্দ্রকোনার সীতানগর গ্রামে। প্রতিবেশীরা আরও খুশি রাকেশের চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়া আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসাবে গ্রামীন এলাকায় চিকিৎসা করার ইচ্ছার কথা জানতে পেরে।