অশ্লেষা চৌধুরী: ‘এখনও ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি। ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। আপনাদের জন্য ধৈর্য ধরে রেখেছি’। ফেসবুক (facebook)লাইভে এসে আবারও বিস্ফোরক মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ‘আমার নেত্রী’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে রাজীব বলেন, ‘দলনেত্রীর আদর্শকে সামনে রেখে মানুষের পাশে থাকার কাজ করছি। নিষ্ঠার সঙ্গে ভাল কাজ করতে গিয়েছি, বাধার কথা জানানোর চেষ্টা করছি। কিছু মানুষ ভুল বুঝিয়ে অন্য পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছেন।‘ সেইসাথেই তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দলের কর্মীদের সম্মানের কথা বলেন। সেই প্রসঙ্গেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যখন দেখা যায় কর্মীদের সম্মান দেওয়া হয় না তখন কিছু বললে অন্যায়?’
এদিন, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুক লাইভে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে একপ্রকার ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘আমার মনের কথা যখন নেতৃত্বকে বলছি, তখন কয়েকজন যখন এটা উল্টোভাবে ভাবার চেষ্টা করছেন, এটাকে অন্যরকম করে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন কেউ, কই তাঁদের তো কিছু বলা হচ্ছে না? এটাই আমাকে দুঃখ দেয়। তাহলে যেটুকু বলা হবে, শুধু সেটুকুই করব? নিজের মধ্যে স্বাধীনতা থাকবে না? আমি কী করতে চাইছি, কী বলতে চাইছে, কোনও কিছু বলতে পারব না আমি?
তবে, লাইভের শুরুতে তিনি বলেন, ‘২১ নতুন বছর। অতিমারীতে অনেককে হারিয়েছি। অনেকের রোজগার চলে গেছে। ২১ যেন আপনাদের জীবনে খুব শুভ হয়। ঈশ্বরের নতুন আশীর্বাদ নিয়ে আসে। এই দিনটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আজ থেকে ভারতে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। আমি অত্যন্ত আশাবাদী এই টিকা নিয়ে কোভিডের ভয় দূর হোক।’
সেইসাথেই স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ” এই যুবসমাজ একজনকে চাইছে, যে পথ দেখাতে পারবে। খারাপ লাগে যুব ভাইবোনেরা চাকরি পেয়ে পেয়ে পাচ্ছে না। কিন্তু লক্ষ্য যদি দেখানো যায়, তাহলে অনেকে সফল হয়। অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে, অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। তখন দুঃখ হয়। তাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিনামূল্যে কোচিং সেন্টার চালু করেছি।”
এরপরেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন রাজীব। মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দলনেত্রী যে আদর্শ দেখিয়েছে, সেটাকে সামনে রেখে কাজ করেছি। কোথাও কোনও বাধা এসেছে, জানিয়েছি, তখন কিছু মানুষ তাকে ভুল বুঝিয়ে অন্যপথে চালনার চেষ্টা করছে। আমি যখন কিছু বলছি সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু ভাল কাজ বাধা দিচ্ছে সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। কেউ যখন অন্যভাবে নিয়ে বাকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাকে বলা হচ্ছে না। তাহলে কি যেটুকু বলা হবে সেটুকুই করব, নিজের কোনও স্বাধীনতা থাকবে না?’ তার সংযোজন, গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা। স্বাধীনভাবে চলতে চাই। আমার দুঃখ, যখন সত্যিকারের ভাল কাজ করার চেষ্টা করছি, কতিপয় কিছু নেতা এটার অপব্যাখ্যা করেন, এটাই কষ্ট লাগে।’
এদিনের লাইভে শেষে তিনি এও বলেন, ‘আমি কোনওদিন মানুষকে ঠকাবো না। আমার বিধানসভা কেন্দ্রে কোনওদিনও মানুষের পাশ থেকে সরে যাইনি। দলনেত্রী যে আদর্শ দেখিয়েছে, সেটাকে সামনে রেখে কাজ করেছি।’
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই রাজীব নিজে ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যে সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে আমি সবসময় সোশ্যাল মিডিয়াকেই এগিয়ে রাখি। আগামী ১৬ জানুয়ারি শনিবার ফেসবুক লাইভে আসছি।’তার এই পোস্ট ঘিরে একের পর জল্পনা দানা বাঁধতে থাকে।
উল্লেখ্য, শুভেন্দু পদ্ম শিবিরে যোগ দেওয়ার পর থেকেই বেসুরো বাজতে শুরু করে দিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। নানান জায়গায় দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন মন্ত্রী। চারদিকে তার ভক্ত ও অনুগামীরা ভরিয়ে তুলছে পোস্টার। আর সেই পোস্টার বুকে সেটে আবার জসভায় করতে দেখা গিয়েছে তাঁর ভক্ত কূলকে। সেই থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে তিনিও কী শুভেন্দুকেই অনুসরণ করে একই পথে পা পারাবেন! এই এত সবের মাঝেই আবার রাজীবের ফেসবুক লাইভের ঘোষণা, যা ফের জল্পনার সৃষ্টি করে বঙ্গ রাজনীতিতে। আগামী ১৬ জানুয়ারি, যেদিন দেশজুড়ে টিকাকরণ শুরু হবে সেদিন তিনি ফেসবুক লাইভ করবেন বলে জানান। আর আজ সেই ঘোষণা মতই লাইভে এলেন মন্ত্রী এবং একদিকে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও অন্যদিকে অভিমানী সুরে বক্তব্য রেখে দল বদলের জল্পনাও জিইয়ে রাখলেন রাজীব।