নিজস্ব সংবাদদাতা: শনিবার ৩ জন রেল কর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি বসিয়েছে রেল। কিন্তু নিহত কর্মীদের সহকর্মীরা আগেই বলে দিচ্ছেন এই গাফিলতির দায় রেলের কর্তাদেরই কারন যে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে ওপেন লাইনে রেলকর্মীদের কাজ করতে হয় তা নিয়ে বারংবার আলোচনা চেয়েও আলোচনা হয়নি। কথা শোনা হয়না কর্মীদের। রেলের কর্মীরা জানিয়েছেন, ট্রেন লাইনে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনা এই প্রথম নয়, সারা দেশ জুড়েই এই একই ঘটনা ঘটে চলেছে। তদন্ত কমিটি বসে, কিছু লোক দেখানো ব্যবস্থা হয়ত নেওয়া হয় কিন্তু আসল কাজটি করা হয়না।কী সেই আসল কাজ? কর্মীদের জবাব প্রয়োজনীয় কর্মচারীর অভাব, নিয়োগ নেই।
শনিবার বালিচক আর ডুঁয়ার স্টেশনের মধ্যে ৩ রেলকর্মীর মৃত্যু এবং ১জনের আহত হওয়ার ঘটনার পেছেনেও সেই একই কারনকে দায়ী করেছেন কর্মীরা। কর্মীরা জানান, যে লাইনে কর্মীরা কাজ করছিলেন তার পাশের লাইনে একটি মালগাড়ি যাচ্ছিল। কর্মীরা মাঝের লাইনে কাজ করছিলেন, রেলপাতের মধ্যে থাকা নাটবল্টু এবং প্যান্ডরোল ক্লিপ ইত্যাদিতে গ্রিস লাগাচ্ছিলেন ঝুঁকে। চারজন কর্মী সেই কাজ করছিলেন। মালগাড়ির আওয়াজে তাঁরা বুঝতেই পারেননি যে তাঁদের ঘাড়ের ওপরেই এসে পড়তে চলেছে আপ ফলকনামা সুপারফার্স্ট এক্সপ্রেস।
আহত রেলকর্মী যাঁকে এই মুহূর্তে কলকাতার আমরিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই কিষান বেশরা তাঁর সহকর্মীদের বলেছেন, তাঁরা ফলকনামা আসার আওয়াজ, হর্ন কিছুই শুনতে পাননি কারন ওই সময় পাশ দিয়ে মালগাড়ি যাচ্ছিল। রেলের কর্মীরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী রেললাইনে কর্মরত শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য একজন লুকআউট ম্যান থাকেন। যিনি নজর রাখেন লাইনে ট্রেন আসছে কিনা কিন্তু এখানে কোনোও লুকআউট ম্যান ছিলনা।রেলের এক কর্মী জানান,’ এখন প্রায় লুকআউট ম্যান রাখাই হয়না কারন রেল মনে করে একজনকে শুধু শুধু দাঁড় করিয়ে রাখার কোনও মানে হয়না তার চেয়ে ৩ জনের জীবন চলে যায় যাক।’
ওই কর্মী জানিয়েছেন, ” চারজনের একটি দলে একেকজন কর্মীকে ৬০টি স্লিপার দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একেকটি স্লিপার ৪ টি প্যান্ডরোল ক্লিপ থাকে। ওই চারজনের দায়িত্বে মোট ৯৬০টি প্যান্ডরোল ক্লিপ দেখভাল করতে হয়। সেগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা, না থাকলে হাতুড়ি মেরে ঠিক করা। মধ্যবর্তী অংশে নাট টাইট করা, গ্রিস করা ইত্যাদি। যত ট্রেনই আসুক এই কাজ করতে হবে। ট্রেন আসলে লাইন ছাড়তে হবে। এই টার্গেট পূরণ করার কাজেই ব্যস্ত থাকেন কর্মীরা। ফলে লাইনে ট্রেন আসছে কিনা তা দেখার জন্য একজন করে লুকআউট ম্যান থাকার কথা। কিন্তু রেল সেটা দিতে পারেনা কারন কর্মী নেই।”
রেলকর্মীদের বক্তব্য আগে যেখানে ভারতে দৈনিক ১৫হাজার জোড়া ট্রেন চলত এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ২২হাজার কিন্তু কর্মচারী সেই হারে তো বাড়েইনি উল্টে কমেছে। কিন্তু ওই ২২হাজার ট্রেন চলাচলের মধ্যেই কর্মীদের টার্গেট পূরণ করতে হচ্ছে। আর তারই অবশ্যম্ভাবী ফল হচ্ছে এই দুর্ঘটনা। ফলে যতই তদন্ত কমিটি গঠন করা হোকনা কেন এই দুর্ঘটনা এড়ানো যাবেনা।
দক্ষিণপূর্ব রেলের রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের নেতা তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুকান্ত মল্লিক বলছেন, ‘দেখুন কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করার বিষয় নয় এটা। আমরা চাইছি কর্মীদের নিরাপত্তা দেখা হোক। এর জন্য রেলের যথাযথ গাইড লাইন আছে যেখানে কর্মীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। আমরা আগেও বলেছি এখনও বলছি রেল আধিকারিক, ম্যানেজমেন্ট, কর্মীদের নিয়ে বসে আলোচনা হোক কিভাবে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হোক। আমরা আমাদের সহকর্মীদের অকাল শ্মশানবন্ধু হতে চাইনা।”