ওয়েব ডেস্ক : ইতিহাসের বিরলতম ঘটনার স্বাক্ষী হতে চলেছে পুরী, এই প্রথম দর্শকদের অনুপস্থিতিতে টানা হবে জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রার রথ। প্রথমে আদালত রথযাত্রা নিষিদ্ধ করে আদালত জানিয়ে দিয়েছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রথযাত্রার অনুমতি দিলে প্রভু জগন্নাথ আমাদের ক্ষমা করবেননা। পরে ধারাবাহিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রায় দিয়েছেন, রথযাত্রা হবে তবে তা হবে দর্শক ছাড়াই আর সেই কারনে সোমবার রাত ৯টা থেকে বুধবার দুপুর ২টা অবধি ফের পুরীতে বলবৎ করা হচ্ছে সম্পূর্ণ লকডাউন। প্রায় কারফ্যু পরিস্থিতি বজায় থাকবে এই ৪১ঘন্টা। বাড়ির বাইরে বেরুতে পারবেননা কোনও মানুষ। খুলবেনা দোকানপাট। সম্পূর্ণ দর্শক বিহীন অবস্থাতেই রথ টানা হবে। আর রথ টানতে পারবেন কেবলমাত্র তাঁরাই যাঁরা আগে থেকে পরীক্ষা করে কোভিড নেগেটিভ হবেন।
করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় এবছর পুরীর জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিমকোর্ট৷ কিন্তু শীর্ষ আদালতের এই রায়ের পর সেটি পুর্বিবেচনার জন্য প্রায় ২০ টি আবেদন পত্র জমা পড়ে। এমনকি পুরীর রাজা গজপতি দিব্যসিং দেবের তরফেও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েককে রথযাত্রার অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হয়। এরপর সোমবার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এস এ বেবডের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, পুরীর রথযাত্রা অনুমতি দেওয়া হবে তবে সেক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শর্ত থাকবে। প্রথমত, ওড়িশা সরকার, পুরীর মন্দির কমিটি ও কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে। তবে সেক্ষেত্রে জনসমাগম করা একেবারেই চলবে না। দ্বিতীয়ত, সোমবার রাত ন’টা থেকে বুধবার দুপুর দুটো পর্যন্ত পুরোপুরি তালাবন্ধ থাকবে পুরী।
এর আগে বৃহস্পতিবার শুনানিতে এবছর পুরীর রথযাত্রা স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু সে সময় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন যাতে রথযাত্রায় স্থগিতাদেশ না দিয়ে শুধুমাত্র জনসমাগমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, “রথযাত্রার অনুমতি দিলে প্রভু জগন্নাথ আমাদের ক্ষমা করবেন না। জনস্বাস্থ্য ও নাগরিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ বছর ওড়িশায় রথযাত্রার অনুমতি দেওয়া যাবে না।” কিন্তু এরপর পুরীর মন্দিরের মুখ্য সেবাইত সহ আরও বেশ কিছু মানুষের আবেদনে সোমবার ফের শুনানি হয়।
এদিন শুনানিতে কেন্দ্রের তরফে শীর্ষ আদালতে জানানো হয়, পুরীর মন্দিরে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কোনো বছর জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা বন্ধ হলে সেক্ষেত্রে পরবর্তী ১২ বছর রথ বের করা যাবে না। ফলে সেক্ষেত্রে ইতিহাস প্রাচীন এই মন্দিরে চলে আসা প্রথা ভঙ্গ হবে৷ এর জেরে স্বাভাবিকভাবেই ভক্তদের ধর্মীয় ভাবাবেগ ক্ষুন্ন হতে পারে। ফলে, আদালত অনুমতি দিলে করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে এবছর রথযাত্রা জনসমাগম ছাড়াই হতে পারে।
এরপরই সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, আদালতের তরফে কোনোরকম জনসমাগম ছাড়া পুরীর রথযাত্রার অনুমতি দেওয়া হল। কিন্তু রথযাত্রার করতে গিয়ে যদি কোনোভাবে পরিস্থিতি আয়ত্বের বাইরে চলে যায় সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে সেই মূহুর্তেই রথযাত্রা বন্ধ করে দিতে পারে। এছাড়া এদিন প্রধান বিচারপতি বোবডে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট শুধুমাত্র পুরীর রথযাত্রার অনুমতি দিয়েছেন। এছাড়া ওড়িশা কিংবা পুরীর অন্য কোনো মন্দিরের রথযাত্রার অনুমতি দেননি।