পলাশ খাঁ, গোয়ালতোড় :- আলুর বীজ কিনতে গেলে গাঁটের কড়ি খসছে বেশি আর চাষ শেষে বাজারে আলুর দাম নেই। মাঝখানে ফড়ে, গোডাউন মালিকদের রমরমা কারবার কিন্তু চাষির ঘরে পয়সা নেই। ধারাবাহিক এই অভিজ্ঞতা থেকেই আলু চাষ ছেড়ে এবার শালবনী, গোয়ালতোড়ের কৃষকরা আলুর বিকল্প হিসেবে বিনস আর ফুল চাষের দিকে ঝুঁকেছে। জঙ্গলমহলের বিশেষ করে গোয়ালতোড়, শালবনী অর্থনৈতিক ফসল হিসেবে পরিচিত আলু চাষ।এই আলুর ফলনের উপরই নির্ভর করে এলাকার আর্থ সামাজিক মাপকাঠি। কিন্তু এবার আলু বীজের লাগাম ছাড়া দাম তার সঙ্গে আনুসাঙ্গিক খরচের কারনে অনেকেই আলুর চাষের পরিবর্তে বিকল্প চাষ বেছে নিয়েছেন বিনস আর ফুল চাষকে।
গোয়ালতোড়, শালবনীর বিস্তির্ণ এলাকায় এখন বিনস ও ফুল চাষ শুরু হয়েছে। শালবনীর মৌপালের সুমিত বিষই, গোয়ালতোড়ের ধরমপুরের আলোক দাস সহ শালবনী, গোয়ালতোড়ের বিভিন্ন এলাকার চাষীরা এবার আলুর বিকল্প হিসেবে ফুল চাষ করেছেন। কেউ গাদা ফুল তো কেউ চন্দ্রমল্লিকা। ইতিমধ্যেই সেই ফুল বাজারে বিক্রি করাও শুরু করে দিয়েছেন। মৌপালের সুমিত বিষই গত কয়েক বছর ধরেই ফুল চাষ করছেন নিজের কাঠা দশেক জমিতে। তিনি মুলত গাদা আর চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ করেন। আর সেই ফুল তুলে শালবনীর ভাদুতলা, পিড়াকাটা, শালবনী, গোয়ালতোড়ের বিভিন্ন দোকানে পাইকারী দরে বিক্রি করে দেন৷ সুমিত বাবু জানান, তার এই দশ কাঠা ফুল চাষ করতে এখনো পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ছয় হাজার টাকা। ইতিমধ্যেই প্রায় দশ হাজার টাকার ফুল তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি আশাবাদী এখনো প্রায় সাত থেকে আট হাজার টাকার ফুল বিক্রি হবে । সুমিত বাবু জানান, আসলে এই এলাকায় ফুল চাষ নেই বললেই চলে। তাই এলাকার ফুল ব্যবসায়ীদের ফুল আনতে গেলে কোলাঘাট, পাশকুড়া প্রভৃতি বাজারে যেতে হয়৷ তাতে তাদের অনেক ঝক্কি সামলাতে হয় । সেই কারনেই তারা আমাদের কাছ থেকেই কখনো ষাট টাকা থেকে একশো টাকা দরে কিনে নেয়৷ তাতে যেমন আমাদেরও ফুল বিক্রির জন্য ঝক্কি পোয়াতে হয় না তেমনই আবার ফুল ব্যাবসায়ীরাও প্রয়োজন মতো টাটকা ফুল পেয়ে যান৷
অপরদিকে গোয়ালতোড়ের ধরমপুর, শাখাভাঙ্গা, কদমডিহা, চাউলি, জীরাপাড়া, হুমগড় এবং শালবনীর দেবগ্রাম, ভুলা, রাউতোড়া, চৈতা, বাবুইবাসা প্রভৃতি এলাকার চাষীরা কয়েকবছর ধরেই বিনস চাষ শুরু করেছেন। তবে এবার আলু বীজের দাম লাগাম ছাড়া থাকায় ব্যাপক হারে বিনস চাষ শুরু করেছেন চাষীরা। শাখাভাঙ্গার অজিত মাহাত, তপন মাহাত, রবীন মাহাত, দেবগ্রামের সুজিত বেরা, তাপস দাস এবার আলুর বিকল্প হিসেবে বিনস চাষ শুরু করেছেন। অজিত বাবু জানান এবার তিনি প্রায় দশ কাঠা জমিতে বিনস চাষ করেছেন।
অজিত বাবু জানান, “দশ কাঠা জমিতে বিনস চাষ করার জন্য সর্বমোট ৫ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে। এরপর ফললের উপর নির্ভর করে লাভের পরিমান। তবে দশ কাঠাতে গড়ে পনের থেকে কুড়ি কুইন্ট্যাল ফলন হয়। গড়বেতার আমলাগোড়া গেট বাজারে পাইকারী দরে বিক্রি করে দেওয়া হয়। প্রথম দিকে দশ বারো টাকা দাম থাকলেও এখন পনের থেকে কুড়ি টাকা প্রতি কেজি হিসেবে আড়তদার নিয়ে নেয়”। অজিত বাবু আরো জানান তিনি এখনো পর্যন্ত ছয় কুইন্ট্যাল বিনস বিক্রি করেছেন ষোলোশ টাকা কুইন্ট্যাল দরে ।
একই বক্তব্য এলাকার অন্যান্য চাষীদেরও৷ তারা বলেন আলু চাষ করতে আমাদের যে পরিমান খরচ হয় তার চেয়ে অনেক কম খরচেই বিনস আর ফুল চাষ করতে পারছি৷ তার উপর আলুতে লাভ হবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ফুল আর বিনস চাষ করে আমরা তিন মাসে প্রায় পনের থেকে কুড়ি হাজার টাকা লাভ পায় খরচ বাদ দিয়ে৷
এসবই চলছে পরীক্ষামূলক স্তরে এবং যে পরীক্ষা প্রায় ১০০%ই সফল। এখন কম সংখ্যায় কৃষকরা এই চাষ করছেন বটে কিন্তু সফলতার হার বাড়তে থাকলে ধিরে ধিরে কৃষক এবং কৃষি দুই এই বিকল্প চাষগুলিকেই মূল চাষে পরিবর্তিত করবেন। এলাকায় আলুর ভান্ডার বলে কথিত এলাকাতে আলু দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠলে আলু চাষের সঙ্গে সহযোগি শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা। যেমন হিমঘর গুলির সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক কিংবা ছোট বড় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরাও জীবিকা না বদলালে বিপদে পড়বেন।