নিজস্ব সংবাদদাতা: সোমবার খড়গপুর আর মেদিনীপুরের বেয়াড়া জনতাকে সবক শেখাতে নামতে হয়েছিল পুলিশকে। লকডাউনের ঘোষিত সময়ের পরও মানুষকে দেখা গেছে ফ্যান্সি স্টোর, চায়ের দোকানে ভিড় জমাতে। বাজারের মোড়ে, দোকানের ঠেকে নিত্যদিনের মতই খোস গল্পে মেতেছে মানুষ। দূরদর্শন , রেডিও, সংবাদমধ্যমে বারংবার ‘লক ডাউন’ কী বুঝিয়েও ঘর মুখো করা যায়নি অনেক মানুষকেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, লকডাউনকে অনেকে তোয়াক্কাই করছেন না। সেইসঙ্গে রাজ্যগুলির উদ্দেশে বলেছিলেন, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। ঘরে থাকার আর্জি জানিয়ে এদিনও আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী.মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। লকডাউন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরও অলিতেগলিতে চলছিল আড্ডা, জটলা। বাধ্য হয়ে ডান্ডা হাতে রাস্তায় নামতে হয়েছিল পুলিশ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই সোমবার রাত অবধি প্রায় ৫০০জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যার মধ্যে কলকাতাতেই গ্রেপ্তার ২৫৫।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা আবেদন জানিয়ে বলেছেন, “ঘরে থাকুন। প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।” হুঁশিয়ারির সুরে নগরপাল জানিয়ে দিয়েছেন, কলকাতার আনাচেকানাচে পুলিশি অভিযান চলবে।
একই ভাবে খড়গপুর এসডিপিও সুকোমল দাস সোমবার গোলবাজার , গেট বাজার, খরিদা, নিমপুরা প্রভৃতি জায়গায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে আরও কড়া হবে পুলিশ। লকডাউন ভাঙলে জায়গা হবে লক আপেই। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার , খড়গপুর কাজি সামসুদ্দিন জনতাকে পরামর্শ দিয়েছেন, ঘরে থাকুন। মানসিক ভাবে মানু্ষের সঙ্গে থাকুন কিন্তু শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখুন।
সোমবার বিকাল ৫টার পর মেদিনীপুর শহরের বড় বাজার থেকে বটতলা, এলআইসি থেকে কেরানীটোলা থেকে সিপাইবাজার, শহরের ২৫বর্গ কিলোমিটার চষে বেড়িয়েছেন মেদিনীপুর কোতোয়ালির ইনসপেক্টর ইনচার্জ পার্থ সারথি । কার্যতঃ হুমকির স্বরেই জানিয়ে দিয়েছেন, ”কোনও বেয়াদপি বরদাস্ত করা হবেনা লকডাউন নিয়ে, হয় ঘরে থাকবেন নয় লকআপে।”
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে ৭৫জনের শরীরে কোভিড-১৯ পজিটিভ মিলেছে। সোমবার মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। এরপরই কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ৩০টি রাজ্যে পূর্ণ লকডাউনের। মোট ৫৪৮টি জেলা পড়ছে লকডাউনের আওতায়। কলকাতায় এক করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে.সোমবার। পরিস্থিতি যখন ক্রমশ জটিল হচ্ছে তখনও জনগণের একাংশের মধ্যে উদ্বেগের লেশমাত্র নেই।
রবিবার জনতা কার্ফুর দুপুর থেকেই একের পর এক রাজ্য লকডাউন ঘোষণা করতে শুরু করে দেয়। কিন্তু তা ছিল আংশিক। বাংলাতেই যেমন বেছে বেছে এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করেছিল নবান্ন। কিন্তু সোমবারের অভিজ্ঞতা দেশজুড়ে বিশেষ ভাল না। রাজ্যের যেসব জায়গায় লকডাউন ছিল না সেসব জায়গায় দেখা গিয়েছে বাজার-হাট, চায়ের দোকানে ভিড় জমিয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। খেলার মাঠে চলছে চুটিয়ে খেলাধূলা।
সন্ধের পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে বাংলার বহু জেলায়। জটলা দেখলেই লাঠি নিয়ে তাড়া করে.পুলিশ। বহু জায়গায় নামানো হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীও। কলকাতায় গ্রেফতারির সংখ্যা দেখেই ঠাওর হচ্ছে প্রশাসন ঠিক কতটা কড়া হাতে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে চাইছে।
সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ড্যাশবোর্ড অনুযায়ী ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ৪৭১-এ। এরমধ্যে রয়েছেন ৪১জন বিদেশি নাগরিক। অনেকের বক্তব্য ভারতে করোনা ভাইরাস তৃতীয় স্টেজ অর্থাৎ গোষ্ঠী সংক্রমণে ঢুকে গিয়েছে। এদিন বিকেলেই ডোমেস্টিক তথা অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবাও বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। এবার লকডাউনকে সম্পূর্ণ করতে রাস্তায় নেমে পড়ল প্রশাসন। পুলিশের পরিষ্কার ঘোষনা, ”আপনি পরিস্থিতিকে ভয়ংকর করে তুললে পুলিশও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। জামিন পাওয়ার জন্য উকিল জুটবেনা।”