নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘ তারও চেয়ে কিছু বেশি দিতে পারি বেনির সঙ্গে মাথা।’ কবিগুরুর সেই বিখ্যাত কবিতায় এভাবেই প্রতিফলিত হয়েছিল শিখ সম্প্রদায়ের আত্মমর্যাদা বোধ। যে আত্মমর্যাদা রক্ষায় নিজেদের মাথার চুল কেটে দিতে বলায় মোঘল সম্রাটকে মাথা সহ চুল উপহার দিয়েছিলেন শিখ বীর। ৮ ই অক্টোবর বিজেপির নবান্ন অভিযানে বিজেপি নেতা প্রিয়াংশু পান্ডের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী বলবিন্দর সিংয়ের পাগড়ি খুলে পড়া নিয়ে এমনই আত্মমর্যাদার লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছিল। যে লড়াইয়ে ভারতীয় ক্রিকেট তারকা হরভজন সিং থেকে জড়িয়ে পড়েছিলেন পাঞ্জাবের মূখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। আপাতত সেই বিতর্কের অবসান হতে চলেছে। জানা গেছে আর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই, শনিবার মুক্তি পেতে চলেছেন বলবিন্দর।
শনিবারই ছেলের হাত ধরে নবান্নের সামনে স্বামীর মুক্তির দাবিতে অনশনে বসার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বলবিন্দর সিংয়ের স্ত্রী করমজিৎ কউর। কিন্তু সেই অনশন আর করতে হচ্ছেনা। শুক্রবার রাতে দিল্লি শিখ গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও আকালি দলের মুখপাত্র মনজিন্দর সিং সিরসার টুইট করে জানিয়েছেন, বলবিন্দরকে সসম্মানে মুক্তি দিতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মনজিন্দর এই কারনে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলবিন্দরের স্ত্রী করমজিৎ। তারপরই তিনি বলেন , শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে বলবিন্দরকে ছাড়া না হলে ছেলেকে পাশে নিয়ে নবান্নের সামনে তিনি আমরণ অনশনে বসবেন। তার আগে শুক্রবার রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ডিজি বীরেন্দ্র। যেখানে ঠিক হয় বেআইনি অস্ত্র সঙ্গে রাখা সহ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ খারজি করা হবে। এবং তাঁকে শীঘ্রই সসম্মানে মুক্তি দেওয়া হবে। সেই খবরই জানানো হয় মনজিন্দরকে।
এরপরই ট্যুইট করেন আকালি দলের মুখপত্র। যেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, কলকাতার শিখ সঙ্গত, রাজ্য পুলিশের ডিজি ও আপামর রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মনজিন্দর সিং সিরসা। তিনি আরও জানিয়েছেন, আসন্ন দুর্গাপুজো উপক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলবিন্দর সিংয়ের স্ত্রী করমজিৎ কউরের জন্য একটি সালওয়ার সুটই পাঠিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর এই ভালবাসায় তাঁরা গভীরভাবে আপ্লুত।
উল্লেখ্য বিজেপির ‘নবান্ন চলো’ অভিযানে হাওড়া ময়দান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সহ ধরা পড়েছিলেন বলবিন্দর। প্রাক্তন সেনা জওয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল বে-আইনি ভাবে অস্ত্র রাখার। অভিযোগ করা হয়েছিল পুলিশের তরফেই। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় বলবিন্দরের পাগড়ি খুলে যাওয়ায়। পুলিশের দাবি ধস্তাধস্তিতে খুলে গিয়েছিল পাগড়ি কিন্ত শিখ সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের দাবি পাগড়ি খুলে দিয়েছিল পুলিশ। বিজেপির দাবি ব্যাপক মারধরের পাশাপাশি পুলিশই পাগড়ি খুলে দেয়। আপাতত সেই বিতর্কে রাশ টানল পুলিশ। ৯ দিন পর বলবিন্দরকে মুক্ত করতে রাজি হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ।