নিউজ ডেস্ক: স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলেই মিলছে চিকিৎসার সুযোগ! সত্যি কী তাই? না কি শুধু কিছু পজিটিভ কেস সামনে এনে ভোটের বাজার তৈরির চেষ্টা? নেতা আর মন্ত্রীর ফটো সেশন আর ভোটের আগে মিডিয়ায় নাম কেনার মরিয়া প্রচেষ্টা? আড়ালে নাকি প্রচুর নেগেটিভ কেস রয়েছে যা পজিটিভ কেসের কয়েক’শ গুন বেশি? এমনটা দাবি অবশ্য বিরোধীদের। ঘটনা যাই হোকনা কেন আপাতত খবরে এসেছেন পিঙ্কি, মালদার হরিশচন্দ্রপুরের পিঙ্কি দাস। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত পিঙ্কির রয়েছে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড।তবুও মিলছে না চিকিৎসা পরিষেবা। আর চিকিৎসার জন্য ঘুরে ঘুরে কোনো উপায় না মেলায় হতাশ পিঙ্কি স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়ে দ্বারস্থ হয়েছে পঞ্চায়েতের কাছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে চাঁচলের মহকুমা প্রশাসন । দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ওই রোগীর বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর থানা বারোডাঙ্গা গ্রামে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের অন্তর্গত হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বারোডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা পিংকি দাস।বয়স ২৪ বছর। প্রায় ১০ বছর আগে পার্শ্ববর্তী তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মিরজাতপুর গ্রামের রঞ্জিত দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ছোট দুই সন্তান রয়েছে। কিন্তু পিংকির অভিযোগ বিয়ের ২ বছর পর থেকেই স্বামী প্রচন্ড অত্যাচার করত। স্বামী ছেড়ে দেওয়ার পরে বাধ্য হয়েই কয়েক বছর ধরে বাবার বাড়িতে চলে আসে সে। পিংকির বাবা দীপক দাস পেশায় ভ্যানচালক। মা লক্ষ্মী দাস দিনমজুর। ভাই বিট্টু দাসও দিনমজুরের কাজ করে।
স্বাস্থ্য সাথী কার্ড রয়েছে তাদের । কিন্তু একমাস ধরে বিভিন্ন সরকারী এবং বেসরকারী হাসপাতালে ঘুরেও মেলেনি চিকিৎসা। অবশেষে শনিবার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের বিডিওর দ্বারস্থ হয় অসহায় এই পরিবার । বাবার ভ্যানে করেই অসুস্থ পিংকিকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্লক অফিসে অভিযোগ জানাতে। সেখানে পিংকির মা লক্ষ্মী দাস আবেদন জানান যাতে তার মেয়ের চিকিৎসা হয়। নইলে পরিবারের সকলে স্বেচ্ছামৃত্যুর ব্যবস্থা করে দাও।
পিংকি দাস বলেন,” সারা শরীর এবং মাথায় প্রচন্ড ব্যথা। শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমার স্বামী আমাকে দেখে না। আমার কিছু হয়ে গেলে ছোট দুই সন্তান অনাথ হয়ে যাবে। দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে চিকিৎসা করা সম্ভব না। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড আছে। কিন্তু চিকিৎসা পাচ্ছি না। মমতা সরকার তো সকলকে ফ্রিতে চিকিৎসা দেয়। আমিও আবেদন জানাচ্ছি যাতে আমি চিকিৎসা পায়।”
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন,”আমরা এই নিয়ে একটা অভিযোগ পত্র পেয়েছি তবে তাতে পরিষ্কারভাবে কিছু নেই । আমাদের বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে । প্রশাসন অবশ্যই পাশে দাঁড়াবে । আর যেসব হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী লিস্ট এর অন্তর্ভুক্ত সেখানে গিয়ে চিকিৎসা না পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । জেলায় সমস্ত ব্যাপারটি জানানো হবে ।”
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন,”ঘটনাটি সত্যি বেদনাদায়ক।আমি হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে যোগাযোগ করেছি।পরে চাঁচল রেফার করা হয় সেখানেও যোগাযোগ করেছি।আমি তাদের উপদেশ দিয়েছে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে যেতে।আমরা সেখানে সম্পূর্ণ রকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেব।অসহায় মানুষের পাশে তৃণমূল কংগ্রেস সব সময় আছে।’
অন্যদিকে স্থানীয় বিজেপি নেতা রূপেশ আগারওয়াল বলেন,’ তৃণমূল সরকারের সম্পূর্ণটাই ভাওতাবাজি। কেন্দ্র সরকারের আয়ুষ্মান যোজনা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এদিকে সংবাদমাধ্যম খুললেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ প্রতিদিন উঠে আসছে। আজ আমাদের হরিশ্চন্দ্রপুর বারোডাঙ্গা গ্রামের একটি পরিবার চিকিৎসা না পেয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছে। এর থেকে দুঃখজনক আর কি হতে পারে?”