শশাঙ্ক প্রধান: রবিবার সাত সকালে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার। টোকিও অলিম্পিকে ইতিহাস তৈরি হওয়ার কয়েক কদম আগেই থমকে যেতে হয়েছে পিংলার প্ৰণতি নায়েককে। কিন্তু যোগ্যতা নির্ণয়ের প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে যেতে হয়েছে বাংলার এই জিমন্যাস্টকে।
যোগ্যতা অর্জনের রাউন্ডে দুর্দান্ত লড়াই করেও দ্বাদশ স্থানে শেষ করায় এবারের মতো অলিম্পিক সফর শেষ হল তাঁর। জিমন্যাস্টিকের অলরাউন্ড ক্যাটাগরিতে ৪ ধরনের পরীক্ষায় নেমেছিলেন তিনি। যার সর্বমোট স্কোর দাঁড়িয়েছিল ৪২.৫৬৫ পয়েন্ট। স্থানের দিক থেকে দ্বাদশ । ফলে এই পর্বে বিদায় নিতে হয়েছে প্ৰণতিকে।
রবিবার ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ৬ টায় ইনডোরে নেমেছিলেন প্ৰণতি। শুরুটা ভালোই হয়েছিল। আশা জাগিয়ে ভল্টে স্কোর তুলে নিয়েছিলেন ১৩.৪৬৬। ফ্লোরের লড়াই থেকেও ১০.৬৩৩ পয়েন্ট অর্জনের পর আশা ছিল। কিন্তু পরের দুটি লড়াই জমেনি। আনইভেন বারে ৯.০৩৩ এবং ব্যালেন্স বিমে ৯.৪৩৩ পয়েন্ট ঝুলিতে ভরেন তিনি। ফলে চূড়ান্ত পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়া।
ওদিকে সকাল সকাল করকাই চককৃষ্ণদাস গ্ৰামে তখন হুলুস্থুল কান্ড! ক’দিন আগেই বাজ পড়ে নষ্ট হয়ে গেছিল প্রণতির বাড়ির কেবল লাইন। যদিও ঠিকঠাক করে দিয়েছিল অপারেটর। কিন্তু রবিবার সকালে টিভি খুলতেই সব সাদা। প্রণতির বাবা মা তো বটেই। তাঁদের বাড়িতে চলে এসেছিল প্রতিবেশীরাও। তড়িঘড়ি ছুটে আসেন কেবল অপারেটর। কিন্তু নির্দিষ্ট চ্যানেল বলতে না পারায় ধরানো যায়নি চ্যানেল । বাধ্য হয়েই প্রণতির বাবা শ্রীমন্ত ও মা প্রতিমা সহ বাকিরা ছুটে যান প্রতিবেশী বিশ্বনাথ মালাকারের বাড়িতে। হাজির হন। সেখানেই প্রায় আড়াই মাস পরে প্রণতিকে টিভির পর্দায় দেখেন।
জয় আসেনি মেয়ের তবুও অনেকদিন পরে মেয়েকে দেখতে পেয়ে চোখে জল প্রতিমার। বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে এসেছিল প্ৰণতি। মেয়েটা মাছের টক আর আলুভাজার ভক্ত। আর সন্ধ্যাবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে করকাই বাজারে গিয়ে ফুচকা খাওয়া। মা চাইছেন, এবার ঘরে আসুক মেয়ে। ক’দিনের জন্য কাটিয়ে যাক পরিবারের সঙ্গে। ওখানে কি সব খাচ্ছে কে জানে! নিজের হাতে রেঁধে খাওয়াবেন তাকে। আফসোস আছে কিন্তু কষ্ট ঝেড়ে ফেলেছে পিংলার করকাই চককৃষ্ণদাস গ্রাম। গত প্রায় আড়াই মাস ধরে প্ৰণতির সাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে পিংলা ও চককৃষ্ণদাস গ্রাম। সেই মেয়ে পদক পাক আর নাই পাক তাদের কাছে সোনারই মেয়ে। এবছর না হল, পরের বার আবার হবে।