Homeএখন খবরঘরের ছেলে হারিয়ে জলচকের ঘরে ঘরে কান্না! মাত্র ৩৬ বছরেই কোভিড কেড়ে...

ঘরের ছেলে হারিয়ে জলচকের ঘরে ঘরে কান্না! মাত্র ৩৬ বছরেই কোভিড কেড়ে নিল পিংলার চিকিৎসক সন্তানকে

শশাঙ্ক প্রধান: আর কোনও শনিবার পিংলার জলচক কিংবা মালিগ্রামে বসবেন না ডাক্তারবাবু। ‘থাকলে দাও, না থাকলে দিওনা। অন্য কোনও দিও।’ এই বাজারেও মাত্র ১০০টাকা ভিজিট নিতেন তিনি সেটাও ছেড়ে দিতে হত অনেককেই। উল্টে কাউকে কাউকে দিতেন কোম্পানীর স্যাম্পল, এমন কি ওষুধ কেনার টাকা। লক ডাউনেও চেম্বার থামেনি। শেষ চেম্বার করেছিললে ২১দিন আগে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুরেন্দ্র কুমার বেরা আর ফিরবেন না।

এমবিবিএস করার পর এম.এস করেছিলেন ডঃ বেরা। চাকরি জীবন শুরুই করেছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে, মাত্র কয়েক বছরের সেই চাকরি শেষ হয়ে গেল বুধবার রাত ৯টা নাগাদ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনার কাছেই সঁপে দিলেন নিজেকে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার জলচকের পশ্চিমচকের কৃতি সন্তান। জলচক নাটেশ্বরী নেতাজি বিদ্যায়তন স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছোট থেকেই সমাজ সেবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। চার ভাইয়ের ছোট ছিলেন সুরেন্দ্র। বাবা অমল বেরা হোমিওপ্যাথিতে ডিপ্লোমা কিন্তু অসম্ভব ভাল হাতজশের কারনে গ্রামীন এলাকায় এ্যলোপ্যাথি চিকিৎসা করতেন। ভিড় উপচে বাড়িতে। গ্রামের মানুষের জন্য একজন পাশ করা ডাক্তার দরকার ভেবেই ডাক্তারি বিদ্যার পাঠ নিয়েছিলেন তিনি।

তাঁর সহপাঠী স্থানীয় জলচক বাজারে একটি ওষুধ দোকানের মালিক শুভজিৎ বাগ জানিয়েছেন, ‘গ্রামের কথা ভেবেই প্রতি শনিবার নিয়ম করে আসতেন। পিংলার দুটি প্রান্তে একবেলা করে রোগি দেখতেন। এমন উদার পরোপকারী মানুষকে হারিয়ে পিংলা যেন অনাথ হয়ে গেল। কী ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের, আমরা যারা প্রান্তিক এলাকায় বসবাস করি।”

পিংলায় রোগি দেখতে এসে নাকি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে আক্রান্ত হন তিনি এটা নিশ্চিত করে বলা যায়নি তবে একটি সূত্র দাবি করেছে দিন কুড়ি আগে মেডিক্যাল কলেজে একজন করোনা আক্রান্ত প্রসূতির সিজার করেছিলেন তিনি। যেহেতু করোনা প্রসূতি তাই পরীক্ষা করেন নিজের। তারপরই তাঁর করোনা ধরা পড়ে। যদিও পাশাপাশি পিংলা এলাকাতেও যেহেতু বর্তমানে অত্যন্ত সংক্রমন বেশি তাই রোগিদের কাছ থেকেও তিনি সংক্রমিত হতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

কিছুদিন আগেই তাঁকে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে বাড়ির লোকেদের সাথে ভিডিও কলে বুধবার সকালেও কথা বলেছিলেন তিনি। বাবা মা তিন দাদা বৌদি পরিপূর্ণ পরিবারের পাশাপাশি স্ত্রী এবং ৫বছরের এক সন্তান ছাড়াও রেখে গেলেন মাত্র তিন মাস বয়সী আরেক সন্তানকে। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে বজ্রাহত জলচকের ঘরে ঘরে আজ সম্বল শুধুই চোখের জল।

RELATED ARTICLES

Most Popular