Homeএখন খবরখুন করা হয়েছে ছেলেকে, ২ মেডিকেল কলেজ সহ ৩হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের...

খুন করা হয়েছে ছেলেকে, ২ মেডিকেল কলেজ সহ ৩হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের বাবা-মা

ওয়েব ডেস্ক: দিনভর ঘুরেছেন একের পর এক হাসপাতাল কিন্তু ভরতি নেয়নি কেউই৷ সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চোখের সামনেই জলজ্যান্ত ১৮ বছরের ফুটফুটে ছেলের মৃত্যু দেখল বাবা-মা। সদ্য উচ্চমাধ্যমিক দেওয়া শুভ্রজিৎ-কে যে আর কোনওভাবেই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়, কঠিন হলেও সেই সত্যি মেনে নিয়েছেন ইছাপুরের চট্টোপাধ্যায় দম্পতি। তবে এভাবে তো ছেলের মৃত্যু মেনে নেবেন না বাবা মা ! ছেলে যখন নেই তখন পিছুটানও নেই। ফলে ছেলের মৃত্যুর সুবিচারের আশায় রয়েছেন তাঁরা। ফলে ইতিমধ্যেই রাজ্যের দু’টি সরকারি এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে বেলঘরিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ইছাপুরের সদ্য ছেলে হারানো এই দম্পতি।

তবে শুধুমাত্র বিনা চিকিৎসাতেই ওই কিশোরের মৃত্যুর পরও থেমে থাকেনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুর পর তাঁর দেহ নিয়েও টালবাহানা করে হাসপাতাল। যদিও সরকারিভাবে মৃত কিশোরের করোনা পরীক্ষা করেনি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এমনকি স্বাস্থ্যভবনের কাছে কিশোর যে করোনায় আক্রান্ত ছিল সেই রেকর্ডও মেলেনি। তবুও বেসরকারি হাসাপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই কিশোরকে করোনা আক্রান্ত বলেই ধরা হয়। সেক্ষেত্রে শুভ্রজিতের দেহ দাহ করা নিয়েও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের তরফে নানা টালবাহানা শুরু হয়। মৃত কিশোরের বাবা বলেন, “সরকারি নিয়মানুযায়ী আমরা নিরাপদ দূরত্ব থেকে সন্তানকে শেষ দেখা দেখতে পারি। হাসপাতালের তরফেও প্রথমে সে কথাই বলা হয়েছিল। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে হাসপাতালের মতের পরিবর্তন হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে শেষপর্যন্ত ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে দিতেও রাজি হয়নি। এমনকি সন্তানকে দেখতে দেওয়ার কথা বলায় দুর্ব্যবহার করে।”

ছেলেকে শেষবার দেখতে পাওয়া নিয়ে হাসপাতালের এমন অমানবিক ব্যবহারে শুভ্রজিতের মায়ের গলাতেও হতাশার সুর। ছেলে হারানোর শোকে চোখের জল আটকাতে পারছেন না তিনি। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, “ছেলেটা আমায় ৩ দিন মা বলে ডাকেনি জানেন, আর কোনোদিন ওর মুখে মা ডাক শুনতে পাবো না।” একজন সন্তান হারানো মায়ের যন্ত্রনা দেখে চোখের জল ধরে রাখা যায় না৷ তবে ছেলের মৃত্যুর সুবিচারের আশায় রয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে বেলঘরিয়া থানায় ওই বেসরকারি হাসপাতাল মিডল্যান্ড, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ইছাপুর নেতাজী নগরের চট্টোপাধ্যায় দম্পতি। মৃত শুভ্রজিতের বাবা-মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই ওই বেসরকারি হাসপাতাল মিডল্যান্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সদ্য উচ্চমাধ্যমিক দেওয়া বছর ১৮-র কিশোর। রাতে বাবা-মাকে না জানালেও ভোর ৪টে নাগাদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই কিশোর। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট৷ আচমকা এভাবে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় প্রথম অবস্থায় কি করা উচিত তা বুঝে উঠতে পারেনা পরিবারের সদস্যরা৷ কিন্তু তরুণের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করলে ভোর ৫ টা নাগাদ প্রথমে তাঁকে কামারহাটির ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেই সময় তার রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যন্ত বেশি থাকায় চিকিৎসা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর সেখান থেকে বেলঘরিয়ার মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও চিকিৎসার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয়। অভিযোগ, রোগীর অবস্থা সংকটজনক বলা সত্ত্বেও কোনো হেলদোল ছিলনা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের। অবশেষে পুলিশি সহায়তায় নার্সিংহোমের তরফে কিশোরের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করানো হয়। এরপর রিপোর্টে জানা যায় সে করোনায় সংক্রমিত। কিন্তু রিপোর্ট পজিটিভ জানার পরে মিডল্যান্ড নার্সিংহোমের তরফে ভরতি নিতে অস্বীকার করে। এরপর ফের তাকে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়৷ সেখানেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় বেড নেই। এরপর আবারও কামারহাটির ইএসআই হাসপাতালে ফিরে যান তাঁরা। হাসপাতালে পৌঁছে অসুস্থ সন্তানকে ভরতি নেওয়ার জন্য রীতিমতো কাকুতিমিনতি করতে থাকে বাবা-মা। কিন্তু তাতেও বরফ গলেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

এরপর কি করবেন বুঝতে না পেরে অবশেষে তাঁরা লালবাজারে যোগাযোগ করেন। পুলিশের সহযোগিতায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ছেলেকে নিয়ে যায় বাবা-মা। কিন্তু সেখানেও বেড না থাকার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়৷ একেই প্রত্যেকটি হাসপাতাল একইভাবে ভরতি নিতে অস্বীকার করছে, তার ওপর ছেলের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। ছোট হয়ে আসছে শ্বাস। এই পরিস্থিতিতে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন মা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রীতিমতো তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায়। এমনকি ছেলের চিকিৎসা না করে তাকে ফিরিয়ে দিলে সেখানেই আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকিও দেন তিনি। এরপরই টনক নড়ে হাসপাতালের৷ স্ট্রেচারে করে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অভিযোগ, সেই সময় কোনও স্বাস্থ্যকর্মী তাঁদের সহযোগিতা করেননি, এমনকি তাদের ধারে কাছেও আসেননি। কিন্তু ভরতি করেও আর লাভ হলনা দীর্ঘ ১২ ঘন্টা কলকাতার নানা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যু হয় ১৮ বছরের কিশোরের।

পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালগুলির গাফলতিতেই মৃত্যু হয়েছে তাদের ছেলের। তারা যদি এভাবে ভরতি নিতে অস্বীকার না করতেন তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসায় সন্তানকে প্রাণে বাঁচানো যেত। কিশোরের মায়ের অভিযোগ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বারংবার অনুরোধ করলেও তাদের জানানো হয় বেড নেই কিন্তু শেষমেশ ভরতি করা গেলে ভেতরে দেখা যায় ৪ টে বেড খালি পরে রয়েছে অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৪ ঘন্টা ধরে তাদের মিথ্যে বলে গেছে৷ এদিকে যেহেতু বেসরকারি হাসাপাতালে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছিল তার ওপর ভিত্তি করে দেহ দেবে না বলে জানিয়ে দেয় মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মৃত কিশোরের বাবার অভিযোগ, সাধারণত সরকারিভাবে করোনা টেস্টের রিপোর্ট আসতে অন্তত ১ দিন সময় লাগে। কিন্তু বেলঘরিয়ার ওই বেসরকারি হাসপাতাল ৫ মিনিটেই করোনার রিপোর্ট পজিটিভ বলে দিল। এমনকি কোনো রোগী করোনা পজিটিভ হলে তা সরকারিভাবে স্বাস্থ্যভবনে জানানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু কিশোরের বাবা স্বাস্থ্যভবনে ফোন করে জানার চেষ্টা করলে স্বাস্থ্যভবনের তরফে তাদের জানানো হয় ওই নার্সিংহোম থেকে এদিন করোনা পজিটিভের রিপোর্ট জমা পড়েনি৷

এদিকে এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই দেহ দিতে অস্বীকার করেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমনটা কি দেহ দাহ করার সময় ছেলেকে শেষ দেখাও দেখার সুযোগ দেয়নি কলকাতস মেডিক্যাল কলেজ। এরপরই রবিবার কলকাতার তিন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায় মৃত শুভ্রজিতের বাবা- মা।

RELATED ARTICLES

Most Popular