নিজস্ব সংবাদদাতা: বেশ কিছুক্ষন ধরেই পুলিশের কড়া ডিফেন্স ভেঙে নবান্নে ঢোকার কৌশলটা খুঁজছিলেন সেক ইব্রাহিম। পাঁশকুড়ার এই বিধায়ক বরাবরই পুলিশকে নাকানি-চোবানি খাইয়ে এসেছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ হাড়ে হাড়ে চেনে এই বামপন্থী তরুনটিকে।ছোটবেলায় দাড়িয়াবান্দা আর কাবাডি খেলেছেন পাঁশকুড়া থানার জয়কৃষ্ণপুরের এই যুবক। ডিফেন্স ভাঙার কৌশলটা তাই ভালো ভাবেই জানেন, সহজেই খুঁজে নিতে পারেন প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের দুর্বল দিক। আর এভাবেই জেলা পুলিশকে বারংবার ধোঁকা দিয়েছেন তিনি কিন্তু তা বলে নবান্নের ভেতরে মোতায়েন থাকা কলকাতা পুলিশের বিশেষ অধিকারিকদেরও যে এভাবে ধোঁকা দেওয়া যায় তা বুঝিয়ে দিলেন ইব্রাহিম, বুঝিয়ে দিলেন তিনিই পারেন সমস্ত রক্ষণভাগ চুরমার করে দিয়ে নবান্নে ঢুকে পড়তে।
এদিন প্রথম থেকেই চড়া মেজাজেই নবান্ন অভিযানে মরিয়া ছিল ১০টি বাম সংগঠনের যুবরা দলে দলে সামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন জেলা উঁচিয়ে। হাওড়া আর শিয়ালদহ স্টেশন উপচে পড়েছিল সাদা, নীল আর লাল পতাকার ভিড়ে গিজ গিজ করেছে কলকাতা আর হাওড়ার রাজপথ। নবান্নমুখি ক্রুদ্ধ যুবদের প্রবল চাপে ভেঙে যায় ডোরিনা ক্রসিংয়ের একটি ব্যারিকেড। ততক্ষণে হাওড়া ব্রিজ ধরে বিরাট মিছিলের ছবি। ১০টি বাম ও কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের নবান্ন অভিযান ঘিরে ক্রমশ কলকাতা উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কলকাতা।
ওদিকে গঙ্গার ওপারে হাওড়ায় রাজ্য প্রশাসনিক কেন্দ্র নবান্ন ভবন ঘিরে দক্ষিণ বঙ্গের জেলাগুলি থেকে যাওয়া মিছিল বিভিন্ন স্থানে আটকে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাওড়া জেলা পুলিশের বিশাল বাহিনি জলকামান নিয়ে তৈরি। নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা।
এরপরই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কলকাতায় ধর্মতলা ডোরিনা ক্রশিং এলাকায় যে পরপর ব্যারিকেডের প্রথমটি একটি ভেঙে বাম সংগঠনগুলির মিছিল এগোতেই শুরু হয় লাঠি চার্জ। জলকামান চার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হতেই মিছিল আরও মারমুখী হয়ে ওঠে।ওদিকে নবান্নের গেটে নিজের সতীর্থদের নিয়ে পৌঁছে গেছেন পূর্ব পাঁশকুড়ার সিপিআইএম বিধায়ক ইব্রাহিম আলি। গেটের সামনে শ্লোগান আর বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন এই তরুণ বিধায়ক। পুলিশ ব্রজ্র আঁটুনি এঁটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছিল। ভাবখানা এমন, কী করবি কর।
ইব্রাহিম দেখছিলেন তাঁদের ভিড়টা যেদিকে বেশি সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের দলও সেদিকেই ভিড় জমাচ্ছে। মুহূর্তে মাথায় বুদ্ধি খেলে যায় তাঁর। পুরো ভিড়টাকেই পূর্ব দিকে ঠেলে দিয়ে নিজে একা থেকে যান ডানদিকে। সেই ভিড়টাই এবার হঠাৎই শ্লোগানের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে গেট ধরে ঝাঁকাতে থাকে। শ্লোগান ওঠে যাহা ছাপান্ন তাহাই নবান্ন। শ্লোগান ওঠে, চাল চোর সরকার, আর নেই দরকার। মুহূর্তে পুলিশের পুরো দলটি ইব্রাহিমকে উপেক্ষা করে চলে যান মারমূখী যুবকদের সামলাতে আর তারই মধ্যে গেট টপকে নবান্নে ঢুকে পড়েন পাঁশকুড়া পূর্বের বিধায়ক। পেছনে পেছনে ইব্রাহিমের আরেক সঙ্গী। হতচকিত ভাব কাটিয়ে উঠে পুলিশ বুঝতে পারে বোকামিটা। বিধায়ক ও তাঁর সঙ্গীকে ঘিরে নেয় পুলিশ। টেনে হিঁচড়ে ২জনকে তোলা হয় গাড়িতে। আটক করা হয় তাঁদের। পরে অবশ্য ২জনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়।