নিজস্ব সংবাদদাতা: ১০ মাস কাজ করার পর ছুটি পেয়ে প্রিয় জাহাজের গায়ে চুমু খেয়ে বলেছিলেন, ফের আসছি। যে সে জাহাজ নয়, কার্নিভাল ক্রুজ! দুনিয়ার জল সাম্রাজ্য যাকে কুর্নিশ করে সেই মার্কিনী বাণিজ্য তরী। একবার পেছনে ফিরে দেখেও ছিলেন স্বপ্নটাকে। মাস কয়েক ঘরে কাটিয়ে ফের জাহাজে ফেরার স্বপ্ন। কিন্তু সব এলোমেলো করে দিল করোনা। সুদীর্ঘ লকডাউন কার্ত্তিক মাইতিকে রেখেই দিল পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার বাহারপোতা গ্রামেই। ফেরা হলনা জাহাজে। কার্নিভাল ক্রুজের কুক এখন পাঁশকুড়ার বাজারে সবজি বেচছেন!
কার্তিকের স্বপ্নের গল্পটা শুরু হয়েছিল বারো মাস আগেই। অনেক কষ্টে, অভাবের মধ্যেই হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করেছিলেন। স্বপ্ন বিদেশে পাড়ি দিয়ে পয়সা উপার্জন করে মিটিয়ে দেবেন সংসারের অভাব। পাশ করার পর সুযোগ চলেও এল। কাজের সুযোগ মিলল মার্কিনী বাণিজ্য জাহাজ কার্নিভাল ক্রুজে। সুযোগ এল বটে কিন্তু আমেরিকা পাড়ি দেওয়ার টাকা কোথায়? বাবা দিনমজুর, বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ভিটে মাটি বন্ধক দিয়েই চড়া সুদে টাকা ধার করেই পূর্ব মেদিনীপুর পাঁশকুড়া থানার বাহারপোতা গ্রাম থেকে মার্কিন মুলুকে উড়ে গিয়েছিলেন কার্তিক। মনে একটাই আশা, কাজ করে শোধ করে দেবেন সমস্ত টাকা।
টানা দশ মাস কাজ করার পর ছুটিতে বাড়িতে এসে উপার্জন করা অর্থ দিয়ে চড়া সুদের টাকা ধার নেওয়া শোধ করে দিয়েছিল কার্তিক। বাড়তি কিছু অর্থ তুলে দেয় বাবার হাতে। কিন্তু আমেরিকা থেকে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই নেমে এলো কালো মেঘ। করোনা নামক এক ভাইরাস রোগ গ্রাস করেছে গোটা পৃথিবী কে। বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। কয়েক হাজার কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর আছে আমেরিকা থেকে। এর পরেই গোটা ভারতবর্ষের জুড়ে শুরু হয় লকডাউন। জমানো অর্থ ক্রমেই শেষ হতে থাকে। এখনই কোন জায়গায় গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। কারন দেশের সমস্ত রেস্তোরা, হোটেল বন্ধ। বিদেশ যাওয়া এখন বিশ বাঁও জলে। তাই গ্রামের সবজি বিক্রি পথ বেছে নেন কার্তিক।
কার্তিক জানান, ‘ বাবার কাজ নেই লকডাউনে। আমাকেও এখন আর কেউ কাজ দেবেনা কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে তাই আপাতত সবজিই বিক্রি করা ছাড়া উপায় কি?’ মানুষকে সবজি দিতে গিয়ে দাঁড়ি পাল্লায় চোখ রাখেন কার্তিক কিন্তু মন পড়ে থাকে কার্নিভাল ক্রুজের কাছেই । কবে আবার ভাসবে স্বপ্নের জাহাজ!