নিজস্ব সংবাদদাতা: এ যেন পচা শামুকেই পা কাটল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের। নবান্ন অভিযানে বিজেপি যে সাফল্য আদায় করতে পারেনি সেই সাফল্য একাই এনে দিচ্ছেন বিজেপির যুব নেতার দেহরক্ষী বলবিন্দর সিং একাই। নবান্ন অভিযানের পর সেই অভিযানের সাফল্য নিয়ে যখন গলার স্বর ক্ষীণ হয়ে এসেছিল কৈলাশ বিজয়বর্গীয় থেকে দিলীপ ঘোষদের তখন পাগড়ি বিতর্ক চাঙ্গা করে দিয়েছে তাঁদের।
শুক্রবার ফের হিন্দুত্ববাদীদের চাঙ্গা করে দিলীপ ঘোষ তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বর্ধমানের এক সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘মাথায় পাগড়ি ছিল বলেই পুলিশ বলবিন্দর সিংকে অপমান করে গ্রেফতার করার সাহস দেখিয়েছে। মাথায় গোল টুপি থাকলে পুলিশ এই সাহস দেখাতে পারত না৷’ বলা বাহুল্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে সেই ‘মুসলিম তোষন’ অভিযোগকেই আরও একবার খুঁচিয়ে তুলেছেন।
অন্যদিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা তথা বিজেপির রাজ্য পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় টুইটারে অসন্তোষ প্রকাশ করে লেখেন, পুলিশ শুধু ওই জওয়ানকে টানাহেঁচড়াই করেনি৷ তাঁর পাগড়ি খুলে অপমানও করেছে৷ তিনি লেখেন, সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ান বলবিন্দর সিংকে মারধর করেছে কলকাতা পুলিশ৷ তাঁর পাগড়ি খুলে দেওয়া হয় ৷ উনি একজন দক্ষ জওয়ান যিনি একাধিক মিলিটারি ট্রেনিং কোর্স করেছেন৷ এরকম একজন সাহসী মানুষের উপর মমতার সরকারের অপমান বেদনাদায়ক৷
রাজনৈতিক এই বিতর্কের মধ্যেই শুক্রবার ভারতীয় ক্রিকেট তারকা হরভজন সিং শিখ ভাবাবেগকে হাজির করেছিলেন। তিনি মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে বলেছিলেন বিষয়টি দেখার জন্য। কারন তাঁর কাছে বিষয়টি শিখ ভাবাবেগ এবং ধর্মের ওপর আঘাত মনে হয়েছে। হরভজনের সেই রিট্যুইটের পরে রাজ্য পুলিশ ঘটনার সাফাই দিয়ে তাঁদের পেজে একটি ভিডিও আপলোড করে জানায়, পুলিশের পক্ষ থেকে বলবিন্দরের পাগড়ি খোলা হয়নি। ধস্তাধস্তিতে তা খুলে যায়। পুলিশ একটি ছবিও আপলোড করে দেখায় যে আদালতে পেশ করার আগে তাঁকে পাগড়ি পরতে বলে হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের সেই ভিডিও কেটে প্রকাশ করা হয়েছে বলে পুলিশের পেজেই কেউ কেউ কমেন্ট করে। পুলিশের পেজেই যেমন কিছু মানুষ পুলিশকে বাহবা দেন তেমনি একাধিক ব্যক্তি পুলিশের তীব্র সমালোচনায় ফেটে পড়ে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে শনিবার পাঞ্জাবের মূখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং বলেন, ‘এটা
ঠিক হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে এক শিখ যুবকের গ্রেফতারির সময় তাঁর পাগড়ি খুলে ফেলা হয়েছে। ওই যুবকের মানহানির ঘটনায় স্তম্ভিত মুখ্যমন্ত্রী। এই কাণ্ড যিনি ঘটিয়েছেন সেই পুলিশকর্মী শিখ সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন করেছি।’
বিষয়টি নিয়ে শিরোমণি অকালি দলনেতা সুখবীর সিং বাদলও মুখ খুলেছেন। ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘শিখ দেহরক্ষী বলবন্দর সিংয়ের উপর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের আক্রমণ ও তাঁর পাগড়ি খুলে নেওয়ার ঘটনার কড়া নিন্দা করি। এই ঘটনা গোটা বিশ্বের শিখ সম্প্রদায়কে খেপিয়ে তুলেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাই।’
শনিবারই বলবিন্দরের পাগড়ি হীন মুক্তকেশ পুলিশের ঘাড় ধাক্কা দেওয়া ছবি বুকে নিয়ে কলকাতায় ধিক্কার মিছিলে সামিল হন মহানগরের শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের শাস্তি না হলে আরও বড় আন্দোলনের ডাক দিয়ে গেছেন তাঁরা। সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে বলবিন্দর সিং যেন পুলিশের বানানো ভিলেন থেকে সমস্ত শিখ সম্প্রদায়ের আইকন হয়ে উঠছেন। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে বলবিন্দর হেনস্থায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকছেনা রাজ্য সরকারের।