নিজস্ব সংবাদদাতা: অন্য সময়ে তাঁরাই অসুস্থ, আহত মানু্ষের পাশে আশা ভরসা হয়ে দাঁড়ান। কেউ নার্স, কেউ আয়া, কেউ আবার মেডিক্যাল স্টোরের কর্মী। এক কথায় সবাই স্বাস্থ্যকর্মী কিন্তু আজ যেন তাঁদের দেখলেই ভূত দেখার মত চমকে উঠছেন মেদিনীপুর শহর। শহরের বিভিন্ন পাড়ায়, শহরতলীতে এদের বাস। কিন্তু ঘরে থাকার উপায় নেই। যে বেসরকারি হাসপাতালে এঁরা কাজ করেন তার নাম শুনলেই ছিটকে যাচ্ছেন মানুষ। চিৎকার করে বলে উঠছেন, তফাৎ যাও। কখনও বা জুটছে দুর্ব্যবহার।
সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ওই হাসপাতালের ডিরেক্টর পার্থ মণ্ডল। তিনি জানালেন, ”তীব্র মানসিক যন্ত্রনা আর সামাজিক অবহেলার সম্মুখীন আমরা। আমি নিজে থেকে শুরু করে হাসপাতালের ১২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী কার্যত সামাজিক বয়কটের শিকার। বাদ যাচ্ছে না নার্সিংহোমের মারকেটিং স্পেশালিস্ট থেকে ওষুধ দোকানের কর্মীরাও। আমরা বুঝতেই পারছিনা যে আমাদের অপরাধ কোথায়?”
উল্লেখ্য এই হাসপাতালে গত ২রা এপ্রিল ভর্তি হয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার থানার একটি গ্রামের প্রাক্তন শিক্ষক। ৭তারিখ এই হাসপাতাল থেকে তাঁর বাড়ির লোকেরা তাঁকে নিয়ে যায় ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে যেখানে তাঁর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। খবর পাওয়ার পরই ওই গ্রাম সিল করে দেওয়া হয় এবং স্যানিটাইজ করা হয় পুরোগ্রাম। পাশাপাশি হাসপাতালটির যে সমস্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী বৃদ্ধের সংস্পর্শে এসেছিলেন এমন ১৯ জনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কোয়ারেন্টাইনে। এঁদের করোনা টেষ্টও করা হয় যার প্রতিটি ফলই নেগেটিভ ছিল।
কিন্তু মেদিনীপুর শহর এসব কিছুই মানতে চাচ্ছে না। প্রতিটি পাড়াতেই আশে পাশে সবাই জানে কে কোথায় কাজ করে। আর তাই ওই বেসরকারি হাসপাতালের নাম শুনলেই ছিটকে যাচ্ছে মানুষ। রোষ ক্ষোভ ফেটে পড়ছে এঁদের দেখলেই আর তার ফলে পাড়া ছাড়া এলাকা ছাড়া হয়ে হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে ওই ১২৭জনকে।
গুজবের আগুন শহর থেকে শহরতলি হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেও। মেদিনীপুর শহর থেকে ২০কিলোমিটার দুরে কেশপুরের একটি গ্রামে রবিবার বাড়ি ফিরতে গিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে ফিরে আসতে হয়েছে তিন মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে। সমস্যা হচ্ছে শুধুই স্বাস্থ্যকর্মীরাই নন, বিভিন্ন জায়গায় হেনস্তা হতে হচ্ছে তাঁদের কর্মীর পরিবারকেও।
এই সমস্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে আগামী ১৪ দিনের জন্য নার্সিং হোমের সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা ঘোষনা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।রোগীদের কথা মাথায় রেখে চালু থাকছে নার্সিংহোমে ডায়ালাইসিস ইউনিট ও ডায়াগনস্টিক ইউনিট। মানু্ষের এই অজ্ঞতা আর অমানবিকতা দুর করতে কি উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন তাঁর উত্তর অবশ্য মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। উত্তর এসেছে, ভেবে দেখা হচ্ছে।
সামজিক বয়কটের মুখে মেদিনীপুর শহরের ১২৭ স্বাস্থ্যকর্মী, দিন কাটছে আতঙ্কে
RELATED ARTICLES