অশ্লেষা চৌধুরী: পথ দুর্ঘটনায় নিহত এক লেপার্ড ক্যাট শাবকের মৃত্যুর মাত্র ঘন্টা খানেকের মধ্যেই হাপিস হয়ে গেছে মৃতদেহ। সেই মৃতদেহের খোঁজে জোড়া কুকুর নামিয়ে দিনভর তল্লাশির পরও সেই মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারেনি দেহ। বৃহস্পতিবার ভোরে ওই শাবকের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে ছুটেযান বনদপ্তরের পদস্থ কর্তারা কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে গেলেও সেই দেহের কোনও হদিস পায়নি বনদপ্তর। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে ঘটনাস্থল থেকে টাটকা মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে কেউ বা কারা সেটি রান্না করে বা পুড়িয়ে খেয়ে ফেলতেও পারে।
ঘটনায় চূড়ান্ত উদ্বেগে বন দপ্তর কারন নিয়ম অনুযায়ী লুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর তালিকায় থাকা প্রাণীগুলির দেখভালের দায়িত্বে বনদপ্তরের। এই ধরনের প্রাণীর মৃত্যু হলে ময়নাতদন্ত করে তার মৃত্যুর কারন নির্ধারণ করতে হয়। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে আলিপুরদুয়ার জেলার ৪৮ নম্বর এশিয়ান হাইওয়ের মাদারিহাট ও হাসিমারার মাঝখানে কোনো চলন্ত গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় ওই লেপার্ড ক্যাটের যাকে স্থানীয় ভাষায় চিতা বাঘ বলা হয় যদিও ‘চিতা’ নামক প্রাণীটি বর্তমানে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েই গেছে। ঘটনার পর স্থানীয়রা এসে ভিড় জমান সেখানে, কেউ কেউ মোবাইল ক্যামেরায় সেই আহত লেপার্ডের ছবি তোলেন যা পৌঁছে যায় বনকর্তাদের কাছে। সেই ছবিতে দেখা যায় লেপার্ডটির পেছনের পা দুটি পিষে দিয়েছে কোনো গাড়ি। তার ফিমার বোন এবং পেছনের থাই দুটির মাংসল অংশ থেঁতলে গেছে গাড়ির চাকায়। ওই অবস্থায় আহত লেপার্ডটি ঘষটে ঘষটে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
বনদপ্তরের হাতে সেই ছবি ও খবর পৌঁছনোর সাথে সাথে ছুটে আসেন বনকর্তারা। কিন্তু জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ওই এলাকায় বনকর্মীরা পৌঁছানোর আগেই রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে যায় মৃত শাবকটির দেহ। ছবি এবং ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা রক্তের দাগ দেখে বনবিভাগ নিশ্চিন্ত হয় যে লেপার্ডটি গুরুতর আহত হয়েছে। এরপরই তাকে উদ্ধার করতে আশেপাশের লোকালয়ে তল্লাশি শুরু হয়।
এদিন জলদাপাড়া বন দপ্তরের অতিরিক্ত বন্যপ্রাণ আধিকারিক সহ বনদপ্তরের একাধিক কর্তারা দিনভর তল্লাশি চালিয়েছেন বনদপ্তরের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দুই স্নিফার ডগ টফি ও রাণীকে নিয়ে । উধাও হয়ে যাওয়া ওই বন্য প্রাণীটির মৃতদেহ খুঁজে বের করার জন্য ময়দানে নেমে বিশেষ কিছু সুবিধা করতে পারেনি বন দপ্তরের ওই দুই জার্মান শেফার্ড। দুর্ঘটনাস্থলের কাছে হলং বাজারের লোকালয়ে চলে চিরুনি তল্লাশি,। তারপরেও এখনও রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে যাওয়া লেপার্ড ক্যাটটির কোন হদিস করতে পারেননি বনদপ্তরের জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বনকর্মীরা । এই ঘটনায় এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, বেপরোয়া গতির বলি প্রায়ই হয়ে থাকে বন্য প্রাণীরা। গতবছর ফেব্রুয়ারিতে রোহিনীর কাছে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে একটি পূর্নবয়স্ক পুরুষ লেপার্ডের। তার দেহ উদ্ধার করতে সক্ষমও হয় বনদপ্তর কিন্তু বৃহস্পতিবার যে ভাবে সকলের নাকের ডগা দিয়ে আজ লেপার্ড ক্যাটের মৃতদেহ যেভাবে উধাও হয়ে গেল, তা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়। আরও আশ্চর্য এই যে দিনভর তল্লাশির পরও তার টিকিও খুঁজে পায়নি বনদপ্তর। এই অঞ্চলে কোনও কোনও গোষ্ঠী বন্য প্রাণীর দেহ রান্না করে অথবা পুড়িয়ে খায়। প্রশ্ন উঠছে সেরকমই কিছু হয়ে গেল নাকি? অবশ্য সেরকমও কোনও নিদর্শন মেলেনি এখনও।