Homeপশ্চিম মেদিনীপুরবেলদাআর বাংলা সাহিত্য পড়া হবেনা, আফসোস আইসিএসই তে পূর্বাঞ্চলের সেরা বেলদার রাইমি

আর বাংলা সাহিত্য পড়া হবেনা, আফসোস আইসিএসই তে পূর্বাঞ্চলের সেরা বেলদার রাইমি

বিশেষ সংবাদদাতা: ভাবেন নি কেউ , না বাবা, না মা! ভাবেননি পশ্চিম বাংলার এক প্রান্তে পড়ে থাকা বেলদার মত জায়গায় এত বড় আলো জ্বলিয়ে দেবে ওই ছোট্ট মেয়েটা। কেন্দ্রীয় বোর্ডের পূর্বাঞ্চলীয় মানচিত্রে বড় বড় শহর, নগরকে পেছনে ফেলে উঠে আসবে বেলদার নাম, যে নাম এতদিন হয়ত শোনেনইনি আইসিএসই বোর্ডের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তারা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী রাইমি মিত্র

এইবার আই সি এস ই পরীক্ষাতে শুধু মাত্র জেলার টপার না, পূর্বাঞ্চলের অন্যতম সেরা । তবে সাদামাটা মেয়ের এই নিয়ে বাড়তি কোনও রকম উচ্ছাস নেই। রাইমির মতো তার বাবা, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মী, সুব্রত মিত্রও বলেন রেহেনি যে টপার হবে সেটা তিনি বা তার মেয়ে এতটা আশা করেন নি।
সারা বছর যখন সে নিয়ম মেনে ও ভালো করে পড়া করেছে তখন তার পরীক্ষার রেজাল্ট যে ভালো হবে সেটা নিয়ে সে নিশ্চিত ছিল । কিন্তু ৯৮.৬শতাংশ নম্বর পেয়ে সে যে অন্যতম ‘টপার’ হবে তা ভাবে নি। সে , অর্থাৎ বেলদার রাইমি মিত্র ।
ইংরেজি সাহিত্য, বায়োলজি, ইতিহাস, ভূগোল, হোম সায়েন্স বিষয়ে একশোর মধ্যে একশো পেয়েছে রেহেনি । ইংরেজি ( ল্যাঙ্গুয়েজ) বিষয়ে ৯৩, বাংলা ও রসায়নে ৯৮, পদার্থ বিজ্ঞানে ৯৯ নম্বর পেয়েছে সে। রাইমি প্রি বোর্ড পরীক্ষাতে পেয়েছিল ৯৬ শতাংশ নম্বর । চুড়ান্ত পরীক্ষায় সে বাড়িয়ে নিয়েছে আরও ২.৬%।

পরীক্ষার আগে দিনে দশ ঘন্টা পড়া করেছে । আর সারা বছর নিয়ম মেনে । প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা প্রাইভেট টিউটর ছিল । তবে শুধু মাত্র বইয়ের পাতায় চোখ রাখা নয়, ভালো লাগে রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা পড়তে।

তার এই সাফল্যের কারণ কী? এর উত্তরে সে জানিয়েছে, ” বোর্ড পরীক্ষার জন্য আমার বিশেষ কোনও পরিকল্পনা ছিল না । তবে আমি ক্লাসে ও পড়ার সময় আমি মনোযোগী থাকতাম । কোনও জায়গায় কোনও রকম বুঝতে অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করে বিষয়টি জেনে ও বুঝে নিয়েছি। ” তার সঙ্গে সে জানিয়েছে, সে তার বাবা মা ও শিক্ষকদেরকাছে কৃতজ্ঞ কারণ তারা সবাই মিলে তাকে এমন পরিবেশ দিয়েছে যাতে সে কোনও রকম মানসিক চাপ ছাড়া পড়া করতে পারে ।

পরীক্ষাতে এই সাফল্যের পরে তার পরামর্শ, অন্য যারা পড়েছে, তারা নিজেদের বইয়ের পড়া ঠিক মতো করুক । আর সবচেয়ে বড় কথা হল, সব সময় চাপ মুক্ত থাকতে হবে । আর এই সঙ্গে ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট ‘ খুব জরুরী । ‘ সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে । সঠিক সময়ের মধ্যে পড়তে হবে ও লেখার অভ্যাস করতে হবে। পরীক্ষার সময় সব প্রশ্নর উত্তর লেখার সময় এই টাইম ম্যানেজমেন্ট খুব দরকার । আর চেষ্টা করতে হবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রর সবকটির উত্তর দেওয়ার ।

ভবিষ্যতে কী হতে চাইছে মেয়ে তা নিয়েও মেয়ের ওপর কোনও রকম চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন না তার বাবা মা । রাইমির মা অনিমা মিত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা । মেয়ের পড়ার সময় যতটা সম্ভব পেরেছেন মেয়েকে সাহায্য করেছেন।

মেয়ের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাবাও। তবে কোনও বাড়তি উচ্ছাস দেখাচ্ছেন না তিনি। সুব্রত মিত্র শুধু মাত্র বলেন, মেয়ের শিক্ষকরা নিশ্চিত ছিল যে রাইমি ভালো ফল করবে । কিন্তু আমি ও আমার স্ত্রী বা মেয়ে কেউ আশা করি নি যে ও অন্যতম টপার হবে । কি নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইছে ও ভবিষ্যতে তা নিয়েও আমরা কোনও চাপ সৃষ্টি করতে চাইছি না ।
বেলদা থানার কাছেই তাদের বাড়ি । তার বাবা জানিয়েছেন যে রাইমির প্রথাগত পড়ার ওপর কোনও রকম চাপ সৃষ্টি করবেন না তারা। মেডিক্যাল সায়েন্স বা পদার্থবিজ্ঞান, ভবিষ্যতে যেটা ইচ্ছা হবে সেটা নিয়েই পড়বে তাদের কন্যা।

সপ্তম শ্রেণীতে পড়া পর্যন্ত বাংলা পড়তে পারত না রাইমি। তার পর তার বাবা তাকে পড়তে দেন বাংলা কিছু ছোট গল্প । রবীন্দ্রনাথের । তার পর পড়েছে বঙ্কিমচন্দ্র, শরদিন্দুর সাহিত্য। এখন সে ভর্তি হয়েছে সি বি এস ই বোর্ডের বিজ্ঞান বিভাগে। তার আফশোস যে সে আর স্কুলে বাংলা সাহিত্য পড়তে পারবে না। তবে নিজের পড়ার বাইরে ঘরে পড়বে বাংলা সাহিত্য ।

RELATED ARTICLES

Most Popular