নিজস্ব সংবাদদাতা: ৩রা মে প্র লক্ষডাউন প্রত্যাহৃত হলেও সুখ নেই পশ্চিম মেদিনীপুরের কপালে, আরও ২১দিন ঢুকে যেতে হল লকডাউনের কবলেই। বৃহস্পতিবার রাতেই এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের আরও ৬টি জেলাকে রেড জোনের আওতায় নিয়ে এসেছেন আর সেই তালিকায় ঢুকে গেছে পশ্চিম মেদিনীপুরও। আর সেই নির্দেশিকা মোতাবেক দেশের সংশোধিত নতুন তালিকায় যুক্ত হয়েছে ১৩০টি জেলার নাম যার মধ্যে পশ্চিম বঙ্গের আগের চারটি জেলার সাথে যুক্ত হল পশ্চিম মেদিনীপুর সহ আরও ছ’টি জেলা।বাদ বাকি ৫টি নতুন জেলা হল দার্জিলিং, কালিম্পং জলপাইগুড়ি, মালদা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। আর পুর্বের চারটি জেলা হল উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া ও কলকাতা।
পাশাপাশি দেশের ২৮৪টি জেলাকে কমলা জোন ঘোষনা করেছে কেন্দ্র যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৫টি জেলা মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া ও হুগলি রয়েছে। বাদবাকি দেশের ৩১৯ সবুজ জোনের মধ্যে রয়েছে ৮টি জেলা আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম।
পশ্চিম মেদিনীপুরের রেড জোনের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার পেছনে খড়গপুরের আর.পি.এফ কান্ডই দায়ী বলেই মনে করা হচ্ছে। কারন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে যে তিনটি কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়েছিল তারপরেই ঘোষিত হয় কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের জোন তালিকা যেখানে পশ্চিম মেদিনীপুর ছিলনা। দ্বিতীয় তালিকা ঘোষনার পূর্বে সেই তিনজনই বর্তমানে কোভিড-১৯ নেগেটিভ। শুধুমাত্র ১জন ঘাটালের রয়েছে যা প্রথম তালিকার পরে ধরা পড়ে কিন্ত এরকম এক আধজন আক্রান্ত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক জেলা সবুজ তালিকায় রয়েছে। সমস্যা হয়েছে সেই আর.পি.এফ কান্ড যেখানে এক সাথে খড়গপুর যোগে ১১জন আক্রান্ত হয়েছেন।
মনে করা হচ্ছে গতকাল কেন্দ্র নতুন তালিকা প্রস্তুত করার আগে বিভিন্ন রাজ্যে পর্যবেক্ষন রত কেন্দ্রীয় দলের পরামর্শ ও তালিকা খতিয়ে দেখেছে। পশ্চিমবঙ্গ সফররত দুটি কেন্দ্রীয় দলও রিপোর্ট পাঠিয়েছে এবং সেই রিপোর্টে উল্লেখিত হয়েছে খড়গপুরের আক্রান্তদের নামও। আর খড়গপুরকে ধরেই জেলার কেস হিস্ট্রি মোতাবেক অনায়াসে ঢুকে গেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নামও ।
গতকলই রাজ্য গুলিকে এই তালিকা পাঠিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে সংক্রমণের হার, কতদিনে সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে, কতজন ব্যক্তি সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসছেন, তা পর্যালোচনা করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
আর আগামী দিনেও কেন্দ্রের গাইডলাইন মেনে করোনা সংক্রমণ মুক্ত ঘোষণা করতে হবে। সেক্ষেত্রে লকডাউন শিথিলের বিষয়েও রাজ্যের হাতে ততটা ক্ষমতা থাকছে না। তবে স্বাস্থমন্ত্রকের স্পষ্ট নির্দেশ, কেন্দ্রকে না জানিয়ে কোনও জোন করোনা সংক্রমণ মুক্ত ঘোষণা করতে পারবে না রাজ্যগুলি। আর সেই গাইড লাইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে ৩ মে দ্বিতীয় দফা লকডাউন শেষ হবার পর দেশের লকডাউন সীমা বাড়ুক অথবা নাই বাড়ুক রেড জোন এলাকায় পরের ২১দিন লকডাউন থাকছেই।
এই চিঠিতে জানানো হয়েছে, গত ২১ দিনের মধ্যে কোনও জেলায় যদি একটিও সংক্রমণের ঘটনা না ঘটে তবে সেই এলাকাকে গ্রিন জোন ভুক্ত করা যাবে। তবে সেই সঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে, এই তালিকা প্রতি মুহুর্তেই পরিবর্তনশীল, সংক্রমণের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে।
এই চিঠিতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে জেলায় থাকা পুরসভাগুলিতে আলাদা এলাকা হিসাবে ধরা যাবে। অর্থাৎ কোনও জেলায় তিনটি পুর
সভা থাকলে তিনটি আলাদা জোন, সঙ্গে বাকি জেলা আরও একটি জোন। যদি কোনও পুরসভা এলাকায় গত ২১ দিনে একটিও সংক্রমণের ঘটনা না ঘটে, তবে সেই পুরসভা রেড জোন ভুক্ত জেলার মধ্যে থাকলেও, তা অরেঞ্জ জোন হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে।
এই চিঠিতে কনটেনমেন্ট জোনে কোভিড সংক্রমণ শৃঙ্খল ভাঙার জন্য চারটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
১। সংক্রমিত এবং তাঁর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করা ২। সংক্রমিত এবং সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের দূরত্ব বৃদ্ধি নিশ্চিত করা ৩। কনটেনমেন্ট এলাকা সঠিক ভাবে চিহ্নিত করণ ৪। প্রয়োজনীয় নিয়ম এবং বিধির সঠিক ভাবে প্রয়োগ। এই চিঠিতে বলা হয়েছে কী ভাবে কনটেনমেন্ট জোন চিহ্নিত করা হবে। সেই সঙ্গে কনটেনমেন্ট জোনে কি কি বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে তাও বলা হয়েছে।
চিঠিতে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কনটেনমেন্ট জোনের বিধি। সেই বিধি অনুযায়ী ১। কনটেনমেন্ট জোনে ঢোকা-বেরনোর সুনির্দিষ্ট রাস্তা চিহ্নিত করণ ২।চিকিৎসা এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া সমস্ত কিছুর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা৩। শারীরিক পরীক্ষা ছাড়া ওই এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা।৪। ওই এলাকা থেকে বেরোতে গেলেও করতে হবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা। ৫। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের অসুস্থতা আছে কি না, তা খোঁজ নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া৬। কেন্দ্রীয় গাইডলাইন মেনে নমুনা পরীক্ষা এবং আক্রান্তদের সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তি চিহ্নিত করতে হবে। এই চিঠিতে বলা হয়েছে, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শ্বাসকষ্ট জনিত উপসর্গ থাকা সমস্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা করা দরকার। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী রাজ্যগুলিকেও জোন ভাগ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বলা হয়েছে।এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক পশ্চিমবাংলার জোন গুলি।
রেড জোন- দার্জিলিং, কালিম্পং জলপাইগুড়ি, মালদা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ও কলকাতা।
অরেঞ্জ জোন- মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া ও হুগলি।
গ্রিন জোন- আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম।