অশ্লেষা চৌধুরী: করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে যা হচ্ছে হোক, তৃনমূল ভাইরাস তাড়ানোর ভ্যাকসিন তাঁরা বের করেছেন বলে দাবি করলেন বিজেপি সভাপতি দীলিপ ঘোষ। দিন ১৫আগে থেকেই ৮ই জানুয়ারি নন্দীগ্রামে সভা করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার নন্দীগ্রামের স্টেট ব্যাঙ্ক সংলগ্ন ময়দানের সেই সভা এদিন নজরকাড়া ভিড়ে ঠাসা ছিল। সেই সভাতেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের পতন আসন্ন বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, ‘২০২১-এ বাংলায় নতুন সরকার আসবে। করোনা কবে যাবে আমি জানি না, তবে করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর ভাইরাস তৃণমূল কংগ্রেস কবে যাবে, তা আমি জানি, তার ভ্যাকসিন আমরা আবিষ্কার করে ফেলেছি। আর আগামী মে মাসের ২০ তারিখের পর অবশ্যই চলে যাবে। তৃণমূল বলে কোনও ভাইরাস পশ্চিমবঙ্গে থাকবে না।‘ নন্দীগ্রামে তাঁর প্রবেশ আজ অনায়াস সাধ্য হওয়াটই শাসকদলের পতনের ইঙ্গিত তা ব্যাখ্যা করে বঙ্গ বিজেপি সেনাপতি বলেন, ‘নন্দীগ্রাম থেকেই পরিবর্তনের পরিবর্তন শুরু হবে। যাঁরা গতবছর আমায় আটকে ছিলেন তাঁরাই আজকে আমায় ডেকেছেন।” জনসভার পাশাপাশি বিজেপির যোগদান মেলার এই নন্দীগ্রাম কর্মসূচিতে দীলিপ-শুভেন্দু ছাড়াও এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয় সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারা। সেই সাথেই উপস্থিত ছিলেন শহীদ পরিবারের অনেকেই। সভার শুতেই এদিন
নন্দীগ্রামে এদিনের সভা ঘিরে ছিল টানটান উত্তেজনা। সভায় কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘নন্দীগ্রামে গুলিচালনার পর আদবাণীজির সঙ্গে প্রথম নন্দীগ্রামে ঢুকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই NDA-র সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তিনি।’ এদিন মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারীকে চাণক্য বলে উল্লেখ করে কৈলাস। তিইনি বলেন, নন্দীগ্রামে গুলিচালনায় অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের শাস্তির বদলে পুরস্কার দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম করে তারা কে কোনও পদে আসীন তা হাজির জনতাকে বলেন বিজেপি নেতা। তিনি আরও বলেন, ‘তৃণমূলের এমন অবস্থা যে পুলিশ দিয়ে দলের নেতাকে বাড়ীতে আটকে রাখতে হচ্ছে। পাছে বিজেপিতে যোগদান করে।’ বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে বলে দাবী করেন দীলিপ।
তবে এদিনের সভায় বেশি কিছু বলতে শোনা যায়নি শুভেন্দু অধিকারীকে। শুভেন্দু সবার শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন এদিন। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি চাইব সূর্য ডোবার আগে আপনারা সবাই বাড়ী চলে যান। আজ সভায় ইট মেরে সভা ভন্ডুল করার চেষ্টা হয়েছিল। আমি সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়েছি, কিন্তু সিপিএমও তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও সভায় কোনওদিন ঢিল ছোঁড়েনি। ৪১টি শহিদ পরিবারের মধ্যে ৩০টি পরিবার আজ এখানে উপস্থিত রয়েছে। এর পর শুভেন্দু বলেন, ৭ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে সভা করার কথা ছিল তৃণমূলের। সেই সভা হয়নি। আগামী ১৮ তারিখ তারা সভা করবে বলে জানিয়েছে। আগামী ১৯ তারিখ খেজুরিতে আমাদের পালটা সভা হবে। ১৮ তারিখের উত্তর সেই দিন দেব।
‘উল্লেখ্য, এদিন শুক্রবার সভা চলাকালীন সভামঞ্চের ডান দিকে উপস্থিত কর্মীদের লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা ইট ছোঁড়ে বলে অভিযোগ পদ্ম শিবিরের। তৃণমূল থেকে দল বদলে বিজেপিতে যোগ দিতে যাওয়া নেতাদের একটি মঞ্চে বসানো হয়েছিল। তাঁদের দেখেই ক্ষেপে ব্যারিকেড ভেঙে রে রে করে তেড়ে যান বিজেপির লোকজন বলে অভিযোগ। কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে বার বার বক্তব্য থামাতে হয়। যেগদান মেলায় যেগদান আটকে যায়। সভা শেষে মাইক্রোফোন নিয়ে যোগ দিতে আসা প্রত্যেককে দলে নেওয়া হল বলে ঘোষণা করেন দিলীপ ঘোষ। কর্মীদের মধ্যে সাময়িক আতঙ্ক তৈরি হয়। শুভেন্দু সহ মঞ্চে উপস্থিত বিজেপি নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপরে সভা শেষে শুভেন্দু বলেন, ‘আমার ওপর আপনাদের ভরসা আছে তো?’ তিনি সভায় উপস্থিত সকলকে সাহস দেন ও আশ্বস্ত করে বলেন, সূ’র্য ডোবার আগে আপনারা সবাই বাড়ী চলে যান। আপনারা যাওয়ার এক থেকে দেড় ঘন্টা পরেই আমি নন্দীগ্রাম ছাড়ব।‘