রাজকুমার আচার্য; নন্দীগ্রাম: ২০২১ যেন ১০বছর আগের ২০১১ আর সেদিনের সিপিএমের মতই এখন অবস্থা তৃনমূল কংগ্রেসের। শুধু জায়গার নামটা একই আছে, নন্দীগ্রাম। ধিকিধিকি করে শাসক বিরোধী ক্ষোভ জ্বলছে নন্দীগ্রামের বুকের ভেতর আর সেই ক্ষোভের আগুনে শুকনো কাঠ ফেলে দিয়ে গেছে আমফান। ক্ষতিপূরণের টাকা বিলিবন্টন হয়েছে তৃনমূল নেতানেত্রী এবং তাঁদের ভাইভাগারি শ্বশুরবাড়ি অবধি। যাঁদের সত্যিকারের ঘর উড়েছিল তাঁরা চালচুলো হীন। সেই লুট ধরা পড়ার পর টাকা ফেরৎ দিয়েছেন অনেক নেতাই কিন্তু রাগ কমেনি মানুষের কারন কাটমানি সহ নানা দুর্নীতির পাঁকে গলা অবধি ডুবে শাসক এমনই অভিযোগ।
সোমবার সেরকমই ক্রোধের বিস্ফোরণ ঘটল নন্দীগ্রামে। পথশ্রী প্রকল্পের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই ক্ষীপ্ত জনতা ভেঙে দিলেন অনুষ্ঠান মঞ্চ। প্রশাসনিক আধিকারিকদের ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনি পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জনতার দাবি গত ১০বছরে একের পর এক রাস্তার বেহাল দশা করে বিধানসভার আগে ফের জনগণকে ধোঁকা দিতে আনা হচ্ছে পথশ্রী প্রকল্প।
সোমবার এই ঘটনা ঘটেছে নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের সিঁদুরটিয়া এলাকায়। সিঁদুরটিয়া বাসস্ট্যাণ্ড থেকে দীনবন্ধু প্রধানের চেম্বার পর্যন্ত পথশ্রী অভিযান প্রকল্পের কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল এদিন। সেই মতো অনুষ্ঠান মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। উপস্থিত হয়েছিলেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে উত্তেজিত জনতা অনুষ্ঠান মঞ্চ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম ভেঙে দেয়। আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকে এলাকার মানুষজন আটক করে রেখেছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে নন্দীগ্রামের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট খারাপ হয়ে থাকায় বারবার এলাকার মানুষজন প্রতিবাদ করে আসছেন। কোথাও কোথাও বেহাল রাস্তায় ধান চারা পুঁতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। এই এলাকার মানুষজনও দীর্ঘদিন ধরে বেহাল রাস্তাটি কংক্রিট দিয়ে ঢালাই করার কথা বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন করে আসছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। এদিন এলাকার মানুষজন বলেন, ‘আজ হঠাৎ দেখলাম রাস্তার পাশে একটি সরকারি অনুষ্ঠান হওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সাইনবোর্ড লেখা রয়েছে যে, পথ পুননির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ! বিডিও সাহেব সুরজিৎ রায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম রাস্তা ঢলাই করা হবে না। ছাই ফেলে মেরামত করা হবে। এ কথা জানার পর এলাকার মানুষজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। প্রশাসনের দেওয়া দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতির বির্সজনের অনুষ্ঠান হচ্ছে দেখে ক্ষিপ্ত জনতা ভেঙে দিয়েছেন অনুষ্ঠান মঞ্চ।’
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহসভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘ভোটের আগে কাটমানি খাওয়ার জন্য মমতা ব্যানার্জী এই পথশ্রী প্রকল্প চালু করেছেন। যা নন্দীগ্রামের ভুক্তভোগী জনসাধারণ ভাল চোখে দেখছেন না। তাই গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করেছেন।” তৃণমূলের দাবি ঘটনার পেছনে বিজেপির উস্কানি রয়েছে। তারাই নন্দীগ্রাম জুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে উন্নয়নকে ব্যাহত করতে চাইছে।