নিজস্ব সংবাদদাতা: ২বছরের শিশুটিকে কোলে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তরুনী। গা ঠেসেই দাঁড়িয়ে স্বামীও। অসম্ভব ভিড়ে সন্তান সহ মা প্রায় চিঁড়ে চ্যাপ্টা হওয়ার যোগাড় দেখে লোকাল ট্রেনে বসে থাকা মহিলাদের অনুরোধ করেছিলেন যদি একটু সরে গিয়ে জায়গা করে দেন কোলের সন্তান সহ মাকে। মনে ক্ষীন আশাও ছিল মহিলা হয়ে মহিলার অবস্থা তারা বুঝবে। কিন্তু ফল হল বিপরীত।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
‘আলাদা গাড়ি করে যেতে পারতে।’ ‘দাঁড়াতে পারবেনা যদি ট্রেনে ওঠা কেন ?’ ‘আরও অনেকেই তো দাঁড়িয়ে আছে কই তারা তো কিছু বলছেনা।’ প্রবল টিপ্পনী ভেসে আসতে মৃদু প্রতিবাদ তারপর বচসা এবং অবশেষে চড় কিল লাথি ঘুষি। পুলিশ ছুটে আসতে আসতে ট্রেনেই মৃত্যুর কবলে ঢলে পড়ল যুবক। অভিযুক্তরা আশি শতাংশই মহিলা। বৃহস্পতিবার মুম্বাই লোকাল ট্রেনের এই ঘটনায় স্তম্ভিত সারা দেশ। মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেন, বরাবরই মারাত্মক ভিড়ে ঠাসা। সেই ভিড় ঠেলেই এক আত্মীয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে পৌঁছতে সপরিবারে রওনা দিয়েছিলেন সাগর। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছনো হল না তাঁর। গণপিটুনিতেই মারা গেলেন ২৬ বছরের যুবক। ঘটনার নৃশংসতায় চমকে উঠছে গোটা দেশ। আরও অবাক করা কান্ড গোটা আক্রমনই চালিয়েছে মহিলারাই!
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
পুলিশ জানিয়েছে বুধবার রাতে কল্যাণ থেকে মুম্বই-লাতুর-বিদর এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন সাগর। স্ত্রী জ্যোতির কোলেই ছিল দু’বছরের দুধের শিশু। জেনারেল কামরায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। কোনওক্রমে এক কোণে দাঁড়িয়েছিলেন তিনজন। স্ত্রী যাতে সন্তানকে নিয়ে বসতে পারেন, তার জন্য সামনের আসনে থাকা মহিলাদের তিনি খানিকটা সরে বসতে বলেন। অনুরোধের সুরেই একটু অ্যাডজাস্ট করে বসতে বলেছিলেন। কিন্তু যাত্রীরা সে কথা কানে তোলেননি। উলটে সাগরকে কটূক্তি করতে থাকেন মহিলারা। তারপরই শুরু হয় বচসা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
রেলওয়ের এসপি দীপক সাতোরি জানান, প্রথমে কথা কাটাকাটি আর তারপরই হাতাহাতি শুরু হয়। ৯ জন যাত্রী রীতিমতো চণ্ডাল মূর্তি ধারণ করেন। যাঁদের মধ্যে ছিলেন ছ’জন মহিলা। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে সাগরকে মাটিতে ফেলে কিল-চড়-ঘুষি-লাথি মারতে থাকেন যাত্রীরা। উত্তেজিত যাত্রীদের কাছে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চান জ্যোতি। একহাতে মেয়েকে সামলান আর অন্যহাতে মার থেকে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। অপ্রীতিকর অবস্থা দেখে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন জ্যোতি। কিন্তু নিষ্ঠুরতার চরম নিদর্শন তৈরি করে শেষমেশ সাগরকে মরার জন্য ছেড়ে দেন সকলে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
প্রায় এক ঘণ্টা এমনটা চলার পর দাউন্দ স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে ছুটে আসে রেল পুলিশ। সাগরকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তবে বাঁচানো যায়নি তাঁকে। ঘটনায় ছয় মহিলা ও তিন পুরুষ যাত্রীকে আটক করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করার আগে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২বছরের ছেলেকে নিয়ে অথৈ জলে সাগর।