নিজস্ব সংবাদদাতা: বর্ষশেষ ও বর্ষবরন উদযাপন কড়াকড়ি ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে মহারাষ্ট্র সহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে। মহারাষ্ট্রে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে আগামী ৫ই জানুয়ারি অবধি রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা অবধি নাইট কার্ফু ও ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয়েছে। ১১টার মধ্যেই সমস্ত রেস্টুরেন্ট, হোটেল, দোকানপাটের সাটার নামিয়ে ফেলতে হবে। মূখ্যমন্ত্রী উদ্ধ্বব ঠাকরে রাজ্যের জনগনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, অন্য সময়গুলিতেও ১০বছরের নীচে এবং ৬০ বছরের উর্দ্ধে ব্যক্তিরা যেন ঘরের বাইরে না বেরোন। প্রকাশ্যে কোনও প্রকার ধর্মীয় বা আচার আচরণ করাও যাবেনা। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সৈকত, শহরে ৩৫হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে কঠোরভাবে কোভিড বিধি বলবৎ করার জন্য।
ঠিক একই ভাবে কার্ফু বলবৎ করা হয়েছে রাজস্থানের জয়পুর এবং কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালুরু সহ গুরুত্বপূর্ণ শহর গুলিতে। কোথাও ৪ আবার কোথাও ৫তারিখ অবধি নাইট কার্ফু বলবৎ করা হয়েছে। অন্যদিকে লখনউয়ে বর্ষবরণের উৎসবে জমায়েতে রাশ টানা হয়েছে। ১০০ জনের বেশি কোনও অনুষ্ঠানে থাকা যাবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছে যোগী সরকার। সতর্ক করা হয়েছে নয়ডা, গৌতম বুদ্ধ নগর শহ দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ শহর গুলিকেও। সর্বাধিক ৫০% জমায়েতে নিয়ে হলের মধ্যে অনুষ্ঠান করা গেলেও ডিজে ইত্যাদি সরঞ্জাম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য বর্ষশেষ এবং বর্ষবরণে উল্লাসের জেরে করোনার প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। এই অবস্থায় বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব চিঠি দিয়েছিলেন দেশের সবকটি রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব এবং মুখ্যসচিবদের। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে করোনার ‘সুপার স্প্রেডার’ রুখতে প্রয়োজনে নৈশ কারফিউ জারি করতে পারে রাজ্যগুলি। ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি প্রয়োজনে বর্ষশেষ ও বর্ষবরণের রাতে উৎসবে রাশ টানতে কড়াকড়ি করতে পারে রাজ্যগুলি। যদিও সেই সিদ্ধান্ত রাজ্যগুলির উপরেই ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
যদিও কেন্দ্রের এই প্রস্তাব আপাতন মানছে না রাজ্য সরকার। বুধবার নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখনই এরাজ্যে নৈশ কারফিউ জারির প্রয়োজন নেই। তবে বর্ষ বরণের সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। মানতে হবে সামাজিক দূরত্বের বিধি।
এদিন মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী সকলকে সতর্কতার সঙ্গে উৎসব পালনের অনুরোধ করেছেন। অকারণে হুল্লোর না করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। পার্ক স্ট্রিটে বর্ষবরণের রাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। থাকছে ১০০টি পুলিশ অ্যাসিস্টেন্স বুথ। সেখান থেকে বিতরণ করা হবে মাস্ক ও স্যানিটাইজার। চলবে মাইকে প্রচার। মুখ্যষচিব এ দিন এ ব্যাপারে বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।
ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্ট বর্ষ বরণের উৎসবে রাশ টানার নির্দেশ দিয়েছে। পুজোর মতোই বর্ষবরণের উৎসবের আনন্দেও রাশ টানতে হবে বলে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। করোনা সংক্রমণের কোনও ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। জমায়েত বন্ধ করতে পুলিস প্রশাসন কী পদক্ষেপ করল তা মুখ্যসচিব পুলিস কমিশনারকে জানাতে বলেছে আদালত। এর আগে পুজোর সময়ও তাই বলা হয়েছিল। রাজ্য সরকার সাফল্যের সঙ্গে তাতে নিয়ন্ত্রণ এনেছিল।
এদিকে ঠিক বুধবার সকালেই কলকাতায় করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের সন্ধান মিলেেছ। কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন লন্ডন ফেরত সেই যুবক। কলকাতায় আসার পরেই তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মেলে। তারপর থেকেই তাঁকে কলকাতা মেডিকেল কলেজে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। গোটা দেশে ইতিমধ্যেই ২০ জন করোনার নতুন স্ট্রেনে সংক্রমিত হয়েছেন।