হায়দরাবাদ: করোনা আর লকডাউন নিশ্চিতভাবেই অনেক কিছুই শিক্ষা দিয়ে যাবে এ দেশকে যার মধ্যে ভাল আর মন্দ দুইই থাকবে। তারমধ্যে মাইলের পর মাইল হাঁটা পরিযায়ী শ্রমিকদের যন্ত্রনা , মৃত্যুর মত মর্মান্তিক ঘটনার পাশাপাশি লেখা থাকবে এই মায়ের কথাও যিনি ৫০বছর বয়সে তাঁর সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে ১৪০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিলেন স্কুটিতে করে। তেলেঙ্গানার সেই মা রাজিয়া বেগমের কথাই এখন সারা দেশ জুড়ে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে।
জানা গেছে তেলেঙ্গানার নিজামাবাদ জেলার বোধন ডিভিসনের রাজিয়া বেগম একটি সরকারি স্কুলের প্রিন্সিপাল। রাজিয়া বেগম নিজামাবাদের একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তাঁর ছোট ছেলে মহম্মদ নিজামুদ্দিন চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যে প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত ১২ই মার্চ নিজামুদ্দিন তাঁর বন্ধুর অসুস্থ বাবাকে দেখার জন্য প্রতিবেশি রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোরে গিয়ে লকডাউনের জন্য আটকে পড়ে। ১৫ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন রাজিয়া। ১৯বছরের নিজামুদ্দিন ছাড়াও তাঁর বড় ছেলেও রয়েছে। বড় ছেলেকে পাঠালে পাছে তাঁকে পুলিশ ধরে তাই নিজেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। হায়দরাবাদ থেকে আরও প্রায় ২০০ কিলোমিটার দুরে নিজামাবাদের কামারেড্ডি শহর থেকে রওনা দেওয়ার আগে রাজিয়া বোধন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ভি জয়পাল রেড্ডির সঙ্গে দেখা করেন এবং অনুমতি নেন। রেড্ডি তাঁকে একটি চিঠিও লিখে দেন।
সোমবার (৬এপ্রিল )সকালে স্কুটি চালিয়ে যাত্রা শুরু করেন এবং মঙ্গলবার দুপুরে তিনি নেল্লোরে পৌঁছান। ছেলেকে নিয়ে ওই দিন ফের যাত্রা শুরু করে ফের বুধবার সন্ধ্যেবেলা কামারেড্ডি শহরে নিজের বাড়ি ফেরেন তিনি। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজিয়া জানিয়েছেন, “একজন মহিলার পক্ষে একটি ছোট দু চাকার গাড়িতে করে এতটা রাস্তা যাওয়া সত্যিই খুব দুরূহ ব্যাপার। তবে ছেলেকে ফিরিয়ে আনার দৃঢ়তা আমার সমস্ত ভয়কে ছাপিয়ে গিয়েছিল।” পাশপাশি তিনি জানিয়েছেন, রাতের বেলা রাস্তায় কোনও ট্রাফিক না থাকায় ও লোকজন না থাকায় যাত্রা আরও ভয়ঙ্কর হয়েছিল। রাস্তায় অবশ্য পুলিশ কোনও সমস্যা করেনি। সহকারী পুলিশ কমিশনারের চিঠিকে সম্মান দিয়ে পথ ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা পাশাপাশি রাজিয়াকে পরামর্শ দিয়েছেন, প্রতি দু’ঘন্টা স্কুটি চালানোর পর যেন সামান্য ব্রেক নিয়ে নেন তিনি। রাজিয়া জানিয়েছেন দিনের বেলায় কোথাও কোথাও ব্রেক নিলেও রাতে একটানা ৫ঘন্টা স্কুটি চালিয়ে গেছেন।
রাজিয়া বলেন, প্রথমে তিনি ঠিক করেছিলাম গাড়ি নিয়েই যাব কিন্তু তাহলে সঙ্গে আরও একজনকে নিতে হয়, রাস্তায় গাড়ি কোনও কারনে ব্রেক ডাউন হলে গ্যারেজ না পাওয়ার সম্ভবনা বেশি। স্কুটি খারাপ হলে হয়ত আশেপাশের এলাকায় ম্যানেজ হয়ে যেতে পারে তাই স্কুটি চালিয়েই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। স্কুটি অবশ্য খারাপ হয়নি।
উল্লেখ্য তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ কোনও ভাবেই এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য যাতায়ত করতে দিচ্ছেনা। তারা নিজের রাজ্যে আটকে পড়া ভিন রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য হোস্টেল বা পেয়িং গেস্টের ব্যবস্থা করেছে। তাছাড়া পুলিশের পাশাপাশি জনতাও সক্রিয় আন্তরাজ্য যাওয়া আসা আটকানোর জন্য। একমাত্র রাজ্যে ফিরে আসার পর ১৪দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে রাজি হবে এমন মানুষদেরই ফিরতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। বোধনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রেড্ডি বলেন, ‘ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য মায়ের আকুতি ও সাহস আমাকে আপ্লুত করেছিল আর সে কারনেই তাঁকে সাহায্য করার জন্য আমি বোধন থেকে শুরু করে নেল্লোর অবধি যাত্রাপথের দুই রাজ্যেরই কর্মরত পুলিশ কর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে দিয়েছিলাম। উনি ফিরে এসে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।” ঘটনা শোনার পর গর্বিত সারা তেলেঙ্গানা রাজ্যই ।