নিজস্ব সংবাদদাতা: ওপাশে গড়াবেতা আর এপাশে কেশিয়াড়ি দু’জয়গাতেই জনপ্রিয় দেবী সর্বমঙ্গলা তাই ভোটের বাজারে জঙ্গলমহলের জয়জোহারের সাথে সর্বমঙ্গলাকেও টুইস্ট করে এদিন খড়্গপুরের জনসভায় বক্তব্য শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে চৌত্রিশ কোটি দেবদেবীর অন্ততঃ কয়েকজনের নাম নিতে পারলে ভালো হয়, মমতা ব্যানার্জীর সেই এক্সপেরিমেন্টের কিছুটা হলেও প্রয়োগ করেছেন মোদি। যদিও ইনসা আল্লাহ বলেননি মুখ্যমন্ত্রীর মত কারন তাতে হিন্দু ভোট ‘খাতরা হ্যায়।’
তবে যে সোশ্যাল মিডিয়াকে চেপে ধরার জন্য ইতিমধ্যে অর্ডিন্যান্স জারি করে আইন আনতে চলছে কেন্দ্র সেই সোশ্যাল মিডিয়া শুক্রবার রাতে ঝপ করে বসে যাওয়ায় তিনিও কতটা উদ্বেগে ছিলেন তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন জনসভায়। বলেছেন, কাল রাতে ৫০ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল , মানুষ অধীর হয়ে উঠছিলেন।” পাশাপাশি এদিন নাম করেছেন, ক্ষুদিরাম বসু, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, ঈশ্বরচন্দ্রের। অবশ্যম্ভাবী ভাবেই বলেছেন বিজেপির ডি.এন.এতে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রয়েছে। তবে তার সাথে হাল্কা করে পাঞ্চ করে দিয়েছে শ্যামাপ্রসাদের পিতৃদেব আশুতোষ মুখার্জীর নাম যিনি পুত্রের বিপরীতে ঔপনিবেশিকতা বিরোধী ভাবধারার উজ্জ্বল চরিত্র ছিলেন।
মোদি এদিন কংগ্রেস, বাম আর তৃনমুল জমানার ৭০ বছরের গাড্ডায় চলে যাওয়া বাংলাকে তুলে আনার জন্য মাত্র ৫বছর সময় চেয়েছেন জনতার কাছে। বলেছেন, “আমাদের ৫ বছর সময় দিন। আসোল পরিবর্তন করে দেখিয়ে দেব।যে সব রাজ্যে বিজেপি সরকার আছে সেই সব রাজ্যে ডাবল ইঞ্জিন সরকার কাজ উন্নয়নের কাজ করছে। বাংলায় দিল্লি ও বাংলার শক্তি দিয়ে উন্নয়ন করতে হবেসবার সাথে সবার বিকাশের কাজ করতে হবে।”
বলেছেন, “দিদি উন্নয়নের নাম দুর্নীতি, বিশ্বাসঘাতকতা করেছেদিদি ১০ বছর আপনি মানুষের সঙ্গে বিস্বাসঘাতকতা করেছেনবাংলায় কাটমনি বন্ধ করতে হবে। বাংলায় এখন তৃণমূলভোট ব্যাংকের খেলা চলছে। রাজ্যে দিদির পার্টি হচ্ছে নির্মমতার পার্টি, সিলেবাস হচ্ছে তোলাবাজি, দুর্নীতির।”
মোদি এদিন অভিযোগ করেছেন, তৃনমূলের আমলে বাংলায় সমৃদ্ধি আনতে গিয়ে তাঁদের ১৩০জন কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে সাবাসি দিয়ে বলেছেন, ‘দিলীপ ঘোষের ওপর অনেকবার ‘জান লেওয়া’ বা খুন করার জন্য হামলা হয়েছে কিন্তু তবুও তিনি লড়ে যাচ্ছেন নির্ভিক ভাবে।
খড়গপুরকে মিনি ভারত বলে উল্লেখ করে মোদি বলেছেন, “এখানে বড় রেল কারখানা, দেশের প্রথম আইআইটি রয়েছে। খড়গপুরের মানুষের বিরাট ভূমিকা রয়েছে এই কারখানার পেছনে।” যদিও কারখানা এখন ক্রমশ শুকোচ্ছে। রেল বেসরকারি করনের ঘন্টা বাজছে এসব কোনও সমাধানের চেষ্টা করছেন কিনা বক্তৃতায় উঠে আসেনি। জনসভায় বিরোধীরা যখন প্রশ্ন তুলেছেন, ৭ বছর আগে পেট্রল-ডিজেল-গ্যাসের দাম কমানোর ভাষণ দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এখন দাম বাড়ছে কেন?
কিংবা যখন নির্বাচনী জনসভাতে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, ৫ বছর সময় পেলে যিনি বাংলাকে ৭০ বছরের পাওনা মিটিয়ে দেবেন বলছেন সেই মোদির ৭ বছরে দেশের জিডিপি ৭০বছরের চেয়ে নীচে নেমে মাইনাসে চলে গেল কেন? কেন তাঁর সাত বছরে দেশের বেকারত্ব গত ৫০বছরের চাইতে খারাপ হল? অথচ তিনি বছরে ২কোটি বেকারের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন! না এসবের জবাব মেলেনি খড়গপুরের জনসভায়। প্রধাানমন্ত্রী নয় বিজেপি নেতা হয়েই খড়গপুর ছাড়লেন মোদি।