নিজস্ব সংবাদদাতা: বৃহস্পতিবার ভোর ভোর ফেসবুক যন্ত্রনায় কঁকিয়ে উঠেছে শহর। মেদিনীপুরের বিশিষ্ট ব্যক্তি সহ বহু সাধারন মানুষের ওয়ালে ঝরে পড়ছে চোখের জল, শিক্ষক আশিস কর নেই। মেদিনীপুর শহরের কলেজিয়েট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আশিস কর বুধবার মধ্য রাতে মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর পরিচিতরা।
গত ৩১ তারিখ থেকে শালবনী করোনা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। জানা গেছে ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় বুধবার রাত ৯ টা নাগাদ তাঁর অক্সিজেন খুলে নেওয়া হয়। রাত ১১টা নাগাদ তীব্র অস্বস্তি শুরু হলে ফের অক্সিজেন দেওয়া হয় কিন্তু অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে গড়াতে থাকে। এরপরই চিকিৎসকরা তাঁকে ভেন্টিলেশনে নিয়ে যান কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসায় সাড়া দিতেই পারেননি তিনি।
শালবনী হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, “সব চেষ্টা করা হয়েছিল স্যারকে বাঁচাতে কিন্তু ব্যর্থ হলাম আমরা। কোভিড-১৯ য়ের এও এক লক্ষন যেখানে দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার তাই মনে হয়েছে।”
খুবই খোলামেলা উদার মনের মানুষ ছিলেন আশিস কর। নিজে পড়াশুনা করেছেন এই স্কুলেই তারপর মেদিনীপুর কলেজ। ফলে দুটি প্রতিষ্ঠানেরই প্রাক্তনী সভার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীববিদ্যায় স্নাতকোত্তর হয়েছিলেন তিনি। কৃতবিদ্যা এই শিক্ষকের পরামর্শ আর তত্ত্বাবধানে বহু ছেলে মেয়ে আজ চিকিৎসকের পেশায় নিযুক্ত আছেন খবরটা পেয়ে শোকে পাথর হয়ে যাওয়ার অবস্থা তাঁদের।
কলেজিয়েট স্কুলের এক শিক্ষক জানালেন, “অসম্ভব দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন ছিলেন স্যার। আমাদের স্কুলে কিছু পরীক্ষার আসন পড়েছে। উনি গতকাল সকালেই আমাদের ফোন করে জানিয়েছিলেন স্যানিটাইজ করার জন্য কী কী করতে হবে? এই ব্যাপারে হাসপাতালে বসেই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষর সাথে কথাও বলেছিলেন তিনি। পরীক্ষা নিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের সাথে যাবতীয় কথাবার্তা তিনি হাসপাতালে বসেই চালাচ্ছিলেন।” বরাবরই দক্ষিনপন্থী মানুষ ছিলেন আশিস কর কিন্তু সেই পন্থা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি অন্য মতের মানুষের কাছে যেতে। তৃনমূল শিক্ষা সেলের নেতৃত্ব পর্যায়ে থেকেও অন্য মতের শিক্ষকদের সঙ্গে সখ্যতা ও সদ্ভাব ছিল।
যুক্তিবোধ সম্পন্ন মানুষটি সংগঠনের অভ্যন্তরে বা নিকট জনদের কাছে বর্তমান সরকারেরও কিছু নীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। কিন্তু সব কিছুর উর্দ্ধে ছিল তাঁর ছাত্রপ্রীতি। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যুর খবর ফেসবুকে পোষ্ট করে শোক প্রকাশ করেছেন বহু মানুষ সেখানেই নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে এক অভিভাবক জানিয়েছেন, “স্কুল নেই, গৃহ শিক্ষক নেই, ছেলেকে একটা বিষয় বোঝাতে পারছিলাম না। আশিস স্যার কে ফোন করতেই যেতে বললেন। বুঝিয়ে দিলেন। ভাল থাকুন স্যার।” ভাল থাকুন স্যার, এই কামনাই এখন আছড়ে পড়ছে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে চলে যাওয়া মানুষটির জন্য। কাঁদছে মেদিনীপুর শহর, যেন অনেক দিন ভাল করে কাঁদা হয়নি।