নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউনের বাজার। পারিবারিক আয় ঠেকেছে তলানিতে। বাড়তি আয়ের খোঁজে পেঁয়াজ বিক্রি করতে সাপ্তাহিক হাটে যাচ্ছিলেন যুবক কিন্তু নিয়ম না মেনে হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোয় হাটে যাওয়ার পথেই একটি পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ দিয়ে মাশুল দিতে হল তার।
শনিবার সেরকমই মর্মান্তিক দৃশ্যের স্বাক্ষী রইল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর থানা। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ কেশপুর মেদিনীপুর রাজ্য সড়কে একটি পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই ২৪বছরের যুবকের। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মৃত যুবকের নাম সনজিৎ ঘোষ। তাঁর বাড়ি কেশপুর থানারই ধলহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন চকপ্রসাদ গ্রামে। সনজিৎ ঘোষের পিতা তুষার ঘোষ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত মৎসচাষি হিসাবে পরিচিত। যুবক নিজে ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি ছিল।
একটি সূত্র মারফৎ জানা গেছে এদিন সকালে বাড়ি থেকে ১০কিলোমিটার দূরত্বে ২ বস্তা পেঁয়াজ নিয়ে পাঁচখুরি হাটে গিয়েছিলেন সনজিৎ। বাড়ির সুপার স্প্লেন্ডার বাইক নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে রাজ্য সড়কের ১২মাইল নামক বাস স্টপেজের কাছাকাছি দোগাছিয়া নামক স্থানে। উল্টো দিক অর্থাৎ মেদিনীপুরের দিকে যাওয়া কোনও লরি সরাসরি ধাক্কা মারে সনজিৎ সহ তার বাইককে। বাইক থেকে বেশ কিছুটা দুরে পিচ রাস্তার ওপর ছিটকে পড়েন যুবক। যুবকের মাথা এবং শরীরের বাঁদিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গলগল করে রক্তে ভেসে যায় পিচের রাস্তা।
ঘটনাটি নজরে আসার পরই ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জল দিয়ে সেবা শুশ্রসা করার চেষ্টা করেন বটে কিন্তু সম্ভবতঃ দুর্ঘটনার সাথে সাথেই প্রাণ হারিয়েছিলেন ওই যুবক। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ‘ঘটনাটি ঘটার সময় আমাদের কারও নজরে পড়েনি। হয়ত পাঁচ-দশ মিনিট পরেই দেখেছি আমরা। আমরা যখন যাই তখনই নিস্পন্দ ছিল যুবক। তাঁর বাইকে থাকা একটি পেঁয়াজ বস্তা ছিঁড়ে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছিল। অন্যটি অটুট ছিল। যুবকের মাথার বাঁদিক থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল, মুখের বাঁ দিক ক্ষতিগ্রস্ত ছিল এবং বাঁ পায়ে ক্ষত ছিল, বাঁ হাতে চোট ছিল। আমরা নিশ্চিত যে লরি বা ম্যাটাডোর জাতীয় গাড়ির ধাক্কাতেই এটা হয়েছে কারন লকডাউনের কারনে বাস চলছেনা। কেবলমাত্র মাল পরিবাহী যান চলাচল করছে। আমরা যুবকের মোবাইল ফোনটা রাস্তার ধারে পেয়েছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম তাঁর বাড়ি কিংবা পরিচিত কাউকে খবর দিতে কিন্তু ফোন লক থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। যুবকের আঙুল ছুঁয়েও লক খোলা সম্ভব হয়নি। হয়ত প্যাটার্ন লক করা ছিল।
পরে পুলিশ আসে এবং মৃতদেহটি উদ্ধার করে। তখনই জানা যায় ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দুরে চকপ্রসাদ গ্রামের বটেশ্বর মন্দিরের কাছে বাড়ি যুবকের। যুবকরা দু’ভাই। সনজিৎ বড়। সে ইলেক্ট্রিকের কাজ করত। বিভিন্ন বাড়িতে ওয়ারিং করত। পুলিশ এসে যুবককে নিয়ে কেশপুর হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন তাঁকে।
প্রত্যক্ষদর্শিরা জানিয়েছেন, সম্ভবতঃ বগছড়ি এলাকার কোনও রাস্তা ধরে রাজ্য সড়কে উঠে আসছিল ওই যুবক তখনই দুরন্ত গতিতে থাকা কোনও গাড়ি নিয়ন্ত্রণ সামলাতে না পেরে ধাক্কা মারে তাঁর বাঁ দিকে। যুবকের মাথায় হেলমেট ছিলনা। যদি হেলমেট থাকত তবে বেঁচে যেতে পারত সে। কারন তাঁর শরীরের আঘাত খুব গুরুতর ছিলনা।