নিজস্ব সংবাদদাতা:লকডাউনে কাজকর্ম নেই, নেই উপার্জন তাই সংসার চলেনা মেয়ের। নিজে কিছুটা স্বাবলম্বী তাই মাঝে মধ্যে নদীর ওপারে মেয়ের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসতেন চাল, ডাল, আটা,আলু। কিন্তু সমস্যা হল ওই ব্যক্তির আধার কার্ড নেই। পরিচয়পত্র ছাড়া লকডাউনে পুলিশ এ গ্রাম ও গ্রাম করতে দেয়না। রাস্তায় বাঁকুড়া আর পশ্চিম বর্ধমানের সীমান্তে সেতুর ওপর পুলিশের কড়া নজর। পুলিশের নজর এড়াতে তাই নদী পেরিয়ে যাতায়াত। কিন্তু শেষ রক্ষা হলনা মঙ্গলবার। দামোদর পেরিয়ে মেয়ের বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফিরতে গিয়ে নদীর জলে ডুবে মৃত্যু হল ওই ব্যাক্তির।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত ব্যক্তির নাম মারু বাউরী(৫৫)।
ঘটনাটি ঘটেছে রানীগঞ্জ এলাকার বল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বাঁকুড়ার মেজিয়া থানার কদমতলা এলাকার নামো মেজিয়ার বাসিন্দা । মেজিয়ার তারাপুর ঝিলে কেয়ার টেকারের কাজ করতেন। মারু তাঁর স্ত্রীকে সাথে নিয়ে দিন চার-পাঁচ আগে নদী পেরিয়ে ওপারে রাণীগঞ্জ থানার আমড়াসতা গ্রামে এসেছিলেন। মেয়ের বাড়িতে জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়ে দু’দিন কাটিয়ে সোমবার নদীর পাড়েই নুপুর গ্রামে রাত কাটান। মঙ্গলবার সকাল আটটা নাগাদ ফের নিজের বাড়ী ফেরার জন্য নদী পের হতে নেমেছিলেন। কিন্তু বুঝতে পারেননি যে নদীর জল গত কয়েকদিনে বেড়ে গিয়েছে।
মৃতের স্ত্রী জনিয়েছেন, ‘যেদিন আমরা মেয়ের বাড়ি গিয়েছিলাম সেদিন বুক অবধি জল ছিল।কিন্ত আজ সেই জল গলা অবধি উঠে আসে। আমি ও আরেকজন সামনে ছিলাম পেছনে আমার স্বামী। ওর একটু শরীর খারাপও ছিল। পাড়ে উঠে পেছন ফিরে দেখি ও নেই।’ স্ত্রীর চিৎকার করলে নেপুর গ্রামের জনা কয়েক গ্রামবাসী ঘটনা টের পান। কিছুক্ষন পরেই তারা নদীতে মৃতদেহ ভেসে আসতে দেখে, তা, বাঁশ দিয়ে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিকেলের মর্গে ময়না তদন্তে পাঠায়। জানা গেছে পারাপারের জায়গা ঘেঁষেই আরও গভীর অংশে চলে গেছিলেন মারু। ‘মেয়ের বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। লকডাউনে জামাইয়ের দিন মজুরির কাজ বন্ধ। কদিন আগেই ফোন করে জানিয়েছিল বাচ্চাগুলো খেতে পাচ্ছেনা দু’বেলা। মায়ের মন তাই থাকতে পারিনি। কিছুটা চাল ডাল আলু নিয়ে গেছিলাম। ওদের মুখে হাসি ফুটেছে দেখে ফিরে আসি। বলেছিলাম পরে আবার যাব। কিন্তু এমন হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি।’ কান্নায় ভেঙে পড়ে জানালেন মারুর স্ত্রী।