Homeএখন খবর৫ঘন্টার লড়াই শেষ, বাঁচানো গেলনা ৩বছরের কন্যাকে, গড়বেতায় মর্মান্তিক পারিবারিক অশান্তির বলি...

৫ঘন্টার লড়াই শেষ, বাঁচানো গেলনা ৩বছরের কন্যাকে, গড়বেতায় মর্মান্তিক পারিবারিক অশান্তির বলি স্বামী-স্ত্রী ও শিশু

নিজস্ব সংবাদদাতা: চিকিৎসকরা মরনপন চেষ্টা চালিয়ে গেছেন শিশুটিকে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শল্য চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মীরা স্বস্তি পেয়েছিলেন ৩বছরের শিশুটির অপারেশন শেষ করে। সঙ্কট না কাটলেও কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় একটু নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন তাঁরা কিন্ত ওই ছোট্ট শরীরে প্রায় এক ডজন ছুরির আঘাত শেষ অবধি মৃত্যুকেই অবধারিত করল। সোমবার বিকাল ৫টা নাগাদ যন্ত্রনার চির অবসান ঘটল। সাতসকালেই মারা গিয়েছিল বাবা মা, বিকালে সেই পথেই চলে গেল মেয়ে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অতিরিক্ত রক্তক্ষরন তো ছিলই তার সঙ্গে শরীরের এতগুলো শিরা উপশিরা ছুরির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল যে
অনেক মেরামতের পরেও শেষ রক্ষা হলনা।
সোমবার সকাল বেলাতেই মর্মান্তিক ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ৩ বছরের পূজার মা মালতী ও বাবা কাঞ্চনের। তিনদিন আগেই শালবনীর কুসুমডাঙ্গা গ্রাম থেকে মামাবাড়ি গড়বেতার বিহারীশোল গ্রামে বেড়াতে এসেছিল পূজারা। বাড়িতে আরও দুই দিদি রয়েছে পূজার। তাদের রেখেই বাবা মার সাথে এসেছিল। লকডাউনের পর প্রথম বাড়ির বাইরে এসে প্রান খোলা আনন্দেই ছিল প্রথম ২দিন। তিনদিনের রাতটাও ভাল কেটেছে।রাতে খাওয়া দাওয়ার পর বাবা মার মাঝখানেই ঘুমিয়েছিল প্রতিদিনের মতই।

তারপরই সোমবারের সেই অভশপ্তশ  ভোর। কেন বাবা মাকে মারল, কেন তাকে মারল আর কেনই বা বাবা নিজেকে শেষ করে দিল তা জানা হলনা। মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আগেই চলে এসেছিল বাবা মার লাশ, বিকালে পূজাও গিয়ে তাদের মাঝখানে শুয়ে পড়ল টুক করে, অবিকল কাল রাতের মতই।
কেন এই ঘটনা তার উত্তর পরিষ্কার নয় পুলিশের কাছেও। শুধুমাত্র একটি পারিবারিক কলহ ছাড়া আর কোনোও ব্যখ্যা নেই আপাতত। কোনও সদুত্তর নেই মৃত মালতীর দাদা মঙ্গল সরেন ও বৌদি বাসন্তী সরেনের কাছেও।

বাসন্তী বলেন, “তিনদিন আগে আমাদের বাড়িতে এসেছে। বাড়িতে গোলমাল হলেও এখানে তেমন কিছু গোলমাল হয়নি। বাসন্তী বলেন, রবিবার রাতে এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে গেছে ওরা। তিনি বলেন, আমাদের দুটি বাড়ি। আবাস যোজনার পাকা বাড়িতে একটি রুমকে মাঝখানে ভাগ করে দুটি করা হয়েছিল। তারই একটি রুমে ওরা ঘুমাচ্ছিল। ভোর চারটা নাগাদ “আমাদেরকে মেরে দিল গো” বলে জোরে চিৎকার করে আমার নন্দ মালতি। আমি ও আমার স্বামী মঙ্গল উঠে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিলেও খুলেনি। তখন রুমের ভেতর দিয়ে যেখানে রুমটি ভাগ করা ছিল, তার ওপর দিয়ে কোন রকমে টপকে ভেতরে ঢুকে আমার স্বামী মঙ্গল। দরজা খুলতে দেখি নন্দাই কাঞ্চনের হাতে একটি ছুরি। সবাই রক্তাক্ত। ছোট মেয়েটাকে উদ্ধার করতে গেলে তাকে টানাটানি করছে। হাতের ছুরিটা কোন রকমে আমি ছাড়াই। মঙ্গল ছোট্ট পূজাকে উদ্ধার করে। তখনও কাঞ্চন চিৎকার করতে করতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। তারপর আর নড়াচড়া করেনি।”

একসময় রাইস মিলে কাজ করত কাঞ্চন। বছর চারেক আগে ছেড়ে দিয়েছে। তারপর দিন মজুরি ও কখনও কখনও ইট ভাটায়। লকডাউনে সে কাজ আপাতত বন্ধ। সংসারে টুকটাক অশান্তি ছিল। একটু হুট মেজাজিও ছিল। বাড়িতে তিন মেয়ে, হয়ত সমস্যাও ছিল কিন্তু তার জন্য বউকে, মেয়েকে খুন করে নিজেও আত্মঘাতী হল কেন সেটাই ভাবাচ্ছে সবাইকে।

RELATED ARTICLES

Most Popular