নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রথম দিনেই মাইক গোলমাল করছিল আর দ্বিতীয় দিনে সরাসরি তাঁকে আঘাত করার অভিযোগ আনলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে আঘাতে তাঁর বাঁ পায়ে এবং কপালে চোট লেগেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। দ্রুত তাঁকে কলকাতায় আনা হচ্ছে তাঁকে। রাতে হেলিকপ্টারে সমস্যা হতে পারে তাই গ্রীন করিডোর করে সড়ক পথে আনা হচ্ছে তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, চার-পাঁচজন চক্রান্ত করে ধাক্কা মেরেছে। মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের ভাড়া বাড়িতে রাত কাটানোর পর বুধবার তিনি হলদিয়া যান মনোনয়নপত্র জমা দিতে। পরে ফের নন্দীগ্রামে এসে একাধিক মন্দিরে যান মমতা।
বিকেলে তিনি যান রানিচক গিরি বাজার মন্দিরে তিনি একটি হরিনাম সংকীর্তনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখান থেকে বেরনোর সময় তিনি পড়ে যান। মমতার দাবি, তাঁকে পিছন থেকে চার পাঁচ-জন ধাক্কা মারে। তাঁর কথায়, ‘‘ভিড়ের মধ্যে ৪-৫ জন বাইরে থেকে ঢুকে পড়েছিল। ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আমাকে। ইচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা মারা হয়। এর পিছনে ষড়যন্ত্র ছিল।’’ পড়ে গিয়ে পা ফুলে গিয়েছে বলেও জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘দেখো কিতনা ফুল গয়া।’’
ঘটনা অবশ্য আগে বোঝা যায়নি। রানিচক থেকেই ফিরছিলেন বটতলার ভাড়াবাড়িতে। কিন্তু এরই মাঝে যন্ত্রনা অনুভব করেন। ভাড়াবাড়ির কাছাকাছি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। এরপরই দেখা যায় সামনে পা ধরে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন তিনি। বরফ দেওয়া হয় তাঁর পায়ে কিন্তু তাতেও যন্ত্রণার উপশম হচ্ছেনা দেখে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়। তিনি জানিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামে শিবরাত্রির পুজো দিয়েই কলকাতা ছাড়বেন কিন্তু তা আর হলনা। যন্ত্রনায় কাতর হয়ে বুধবারই নন্দীগ্রাম ছাড়তে হয় তাঁকে।
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন সারা দিন অনুষ্ঠান করেছেন তিনি কিন্তু কোথাও তাঁর সঙ্গে পুলিশ সুপার ছিলেন না। উল্লেখ্য কে বা কারা চক্রান্ত করছে তিনি অবশ্য তা নাম করে বলেননি কিন্তু তিনি যা ইঙ্গিত দিয়েছেন তা মারাত্মক বলেই মনে করা হচ্ছে। জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পান তিনি। সেই নিরাপত্তা ভেদ করে তাঁর কাছে চারপাঁচ জন পৌঁছে গেল কী করে সেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ গুরুতর। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে তদন্ত করা উচিত।’ যদিও বিজেপির সাংসদ অর্জুন সিং কটাক্ষ করেন, মুখ্যমন্ত্রী তো রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী। তিনি যেখানে যান, তার দু’কিলোমিটার আগে থেকেই গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। যদি কেউ ধাক্কা মেরে থাকেন, তাহলে তাঁর ফাঁসি হওয়া উচিত। সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, মমতা আগেও মিথ্যা কথা বলেছেন। এখন হারবেন জেনে মিথ্যা কথা বলে সহানুভূতি নেওয়ার জন্য নাটক করছেন।
অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দাবি করেন, রাজনৈতিক ভাবাবেগের জন্য রাজনৈতিক ‘ভণ্ডামি’ করছেন মমতা। কংগ্রেসের অভিযোগ যখনই মমতা কোনোও সমস্যায় পড়েন তখনই দেখা গেছে সহানুভূতি আদায়ের জন্য এসব করেছেন। শেষ খবর পাওয়া অবধি তাঁকে এস এস কে এমে আনা হচ্ছে। ৫বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দল গঠন করা হয়েছে তাঁকে দেখার জন্য। যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছিল সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বড় গাড়ি আটকানোর জন্য রাস্তায় খুঁটি পোঁতা ছিল। মমতা ব্যানার্জী দরজা খুলে মানুষজন কে নমস্কার করছিলেন। তখনই তাঁর চালক গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান। বারে ধাক্কা লেগে দরজা বন্ধ হয়ে তাঁর আঘাত লাগতে পারে।