অশ্লেষা চৌধুরী: ২০১৬ থেকে ২০১৯, ম্যাজিকের মত বদলে গেছে উত্তরবঙ্গ। বিধানসভায় ভাল ফল করার পর লোকসভায় শূন্য আসন তৃনমূলের! এরপর ২০২১, উত্তরবঙ্গকে ফের নিজের থলেতে আনার জন্য কল্পতরু হলেন মমতা ব্যানার্জী। সোমবার ১৪ই ডিসেম্বর তিনদিনের জন্য উত্তরবঙ্গ সফরে এসে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি এবিপিসি ময়দানের জনসভা দিয়েই শুরু করলেন একগুচ্ছ প্রকল্পের যার মধ্যে রয়েছে জলপাইগুড়ির জন্য দু’দুটি পৌরসভা আর সঙ্গে দু’দুটি ব্লকও। এদিন মমতা জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ও ফালাকাটাকে পুরসভা এবং বানারহাট ও ক্রান্তিকে ব্লক ঘোষণা করেন।
ফালাকাটায় পৌরসভার দাবি বহুদিনের, সেই বাম আমল থেকেই। তার সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরে ময়নাগুড়ির বাসিন্দারাও দাবি করেছিলেন নিজেদের এলাকাকেও পৌরসভা করার জন্য।
২০২১য়ের চ্যালেঞ্জ কী হবে তার জন্য হয়ত আরও কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে কিন্তু লাভের মধ্যে জলপাইগুড়ির বাসিন্দারা পেয়ে গেলেন দুটি পৌরসভাই। এরসঙ্গে এদিন জলপাইগুড়ি পেয়েছে দু’দুটি ব্লকও। জলপাইগুড়ি ভেঙে আলিপুরদুয়ার করার পরই প্রশাসনিক ভাবে বানারহাট ও ক্রান্তিকে পৃথক ব্লক করার প্রয়োজনীয়তা ও দাবি ছিল। মূখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার সেই দাবিও পূরণ করেছেন। মঙ্গলবার জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই বলেন যে, ‘পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার মানুষ ১০০% সরকারি পরিষেবা পান, পাশাপাশি, জলপাইগুড়ির ৯৫% মানুষ সম্পূর্ণভাবে সরকারি পরিষেবা পান। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের এই দুই জেলায় সর্বাধিক উন্নয়ন হয়েছে।‘
তিনি আরও বলেন, “সবরকম উন্নয়ন করেছি”। দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে নেত্রী বলেন যে, উত্তরবঙ্গের মানুষের বরাবরেরই একটি হাইকোর্ট তৈরির দাবী ছিল, সেই দাবীকে সামনে রেখেই জলপাইগুড়িতে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।‘ নেত্রী বলেন, উত্তরকন্যা তৈরি এই জেলাতে, বেঙ্গল সাফারি তৈরি করা হয়েছে, পাশাপাশি, আলিপুরদুয়ারে মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির কাজ খুব শীঘ্রই শুরু করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হবে। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার এই দুই জেলায় উদ্বাস্তু কলোনিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের উন্নয়নকল্পে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরি হচ্ছে।‘
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে রয়েছে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ। তৃণমুল ক্ষমতায় আসার পর রাজবংশী ও কামতাপুরী ভাষার সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছে। রাজবংশী ডেভেলপমেন্ট অ্যাণ্ড কালচারাল বোর্ড গঠন করে দিয়েছে, যার সদর দপ্তর রয়েছে কোচবিহারে। কাজ শুরু করার জন্য মোট ২৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এদিন চা সুন্দরী প্রকল্পের ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেই প্রকল্পে চাবাগানের ৩৭০ চা শ্রমিককে পাকা বাড়ী দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পাশাপাশি বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের ভাতা ও বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেছেন তিনি।
তবে এদিন আক্ষেপ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এত কাজ করে উত্তরবঙ্গে লোকসভা ভোটে একটাও আসন পেলাম না, কিন্তু বিধানসভায় চাই, বিধানসভা ভোটে আপনাদের আশীর্বাদ চাই। ” নেত্রী আরও বলেন, ” বাংলাকে গুজরাত বানাতে দেব না।” শেষে সভামঞ্চ থেকে জনগণের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ” করোনায় থমকে বিশ্ব, এগোচ্ছে বাংলা।”
এদিন এবিপিসি ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় লক্ষ্য করা যায় উপচে পড়া ভিড়। এদিনের এই সভায় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক, গৌতম দেবসহ সকল নেতা মন্ত্রীরা।
জলপাইগুড়িতে জনসভা সেরেই এরপর কোচবিহারে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে পৌঁছেই তিনি কোচবিহার মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ান মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি এদিন নারায়নী ব্যাটেলিয়ানের হেডকোয়ার্টারেরও উদ্বোধন করেন। এছাড়াও এদিন জেলাশাসককে ক্যাম্পাসের সামনের রাস্তা টিকে সুন্দর করে গাছ লাগিয়ে সাজিয়ে তোলার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি যান শিবযজ্ঞ মন্দিরে৷ সেখানে যজ্ঞানুষ্ঠান দেখেন ও দীর্ঘক্ষন সময় কাটান পুরোহিতদের সাথে। মন্দিরের সামনে রাস্তায় পায়ে হেঁটেও যান মুখ্যমন্ত্রী৷ জানা গিয়েছে, শিবযজ্ঞ মন্দিরের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার।