ভীষ্মদেব দাশ: ওয়ার্ম-আপ শুরু হয়ে গিয়েছিল ডিসেম্বরেই, মেদিনীপুর শহরের জনসভার মধ্যে দিয়ে। এবার ফাইনালি ব্যাটিং শুরু মমতার আর ওপেনার হিসাবে পিচে নামছেন নন্দীগ্রামেই। সোমবার, ১৮ইজানুয়ারি জমি আন্দোলনের মাটি থেকেই ২০২১ বিধানসভার জন্য চূড়ান্ত লড়াই শুরু করে দেবেন তৃনমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই সভাকে বর্তমান রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। কারন এই প্রথম শুভেন্দু অধিকারীকে ছাড়া নন্দীগ্রামের মাটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা হবে। এলাকা দখলের লড়াইয়ে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মাটি থেকে কি বার্তা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর । সভার প্রস্তুতি তুঙ্গে, রবিবার অর্থাৎ আজ বিকেল ৪টের মধ্যেই সভামঞ্চ প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার দিনভর মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল পরিদর্শন করেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। সভায় ৩লক্ষ লোক জমায়েত হবে বলেও দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের।
সোমবার বেলা ১টা নাগাদ নন্দীগ্রামের তেখালিতে হেলিকপ্টারে করে উপস্থিত হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার জন্য সভামঞ্চ সংলগ্ন অস্থায়ী হেলিপ্যাড ময়দান তৈরি করা হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে হেলিপ্যাড ময়দানে মহড়া করলেন পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা। সভামঞ্চ সংলগ্ন বিস্তীর্ন মাঠে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার জন্য মেডিক্যাল ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। শুধু কোভিড নয় প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাবস্থাও থাকবে। পাশাপাশি পানীয় জল, দমকল বাহিনী সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী সভা পরিচালনার জন্য থাকবেন।
নন্দীগ্রাম ব্লক তৃণমূল নেতা সেক সাহবুদ্দিন বলেন, নন্দীগ্রামে ঐতিহাসিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সভা মঞ্চের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৩লক্ষ মানুষ সভায় উপস্থিত থাকবেন। নন্দীগ্রামের মানুষতো থাকবেন। তাছাড়া দুর থেকে বাস বা ছোট গাড়িতে আসা কর্মী-সমর্থকদের গাড়ি রাখার জন্যও জায়গা নির্ধারন করা হয়েছে। খেজুরি, ভগবানপুর, ইটাবেড়িয়া, কাঁথি, এগরা, দীঘা এলাকার মানুষরা সড়কপথে হেঁড়িয়া থেকে বোগা রোড ধরে তেতুলতলা থেকে তেখালির উদ্দেশ্য রওনা দেবেন। পাশাপাশি মেছেদা, হলদিয়া, তমলুক সহ জেলা তথা রাজ্যের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা আসবেন চন্ডীপুর হয়ে।
নন্দকুমার-দীঘা ১১৬বি জাতীয় সড়ক ধরে কর্মীরা চন্ডীপুর থেকে বাঁদিকে সরাসরি নন্দীগ্রাম পৌঁছে যাবেন। নন্দীগ্রাম থেকে খেজুরির দিকে প্রায় ৭কিলোমিটার গেলেই সভাস্থল। খেজুরি ও নন্দীগ্রামের মধ্যবর্তী স্থানেই সভা অনুষ্ঠিত হবে। তেখালি ব্রিজ থেকে নন্দীগ্রামের দিকে গেলেই মাঠে সভা অনুষ্ঠিত হবে। তবে ভিড় এড়াতে খেজুরির বারাতলা হয়ে সভার উদ্দেশ্যে আসা সকল গাড়িকেই তেখালি ব্রিজের আগে নির্ধারিত স্ট্যান্ডে গাড়ি রাখতে হবে। একই ভাবে নন্দীগ্রামের দিক থেকে আসা সকল গাড়িকে সভাস্থল থেকে ২কিলোমিটার আগে গাড়ি রাখতে হবে। তৃণমূল কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ কর্মীদের সুশৃঙ্খলভাবে সভাস্থলে পৌঁছাতে সাহায্য করবেন। পানীজল, ঔষধের পাশাপাশি থাকবে মাস্ক, স্যানিটাইজারও।
মমতা বন্দোপাধ্যায়ের জনসভায় মোট তিনটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে মূল মঞ্চ বক্তব্য রাখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপর দুটি মঞ্চের একটিতে থাকবেন নন্দীগ্রামের শহীদ পরিবারের সদস্যরা এবং অপরটিতে দলীয় নেতৃত্ব থাকবেন। গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ জমায়েত হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। একুশের নির্বাচনের আগে শুভেন্দুকে ছাড়া নন্দীগ্রামে তৃণমূল কর্মীদের উজ্জীবিত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ধরনের সভা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মমতার সভা ঘিরে তৃণমূলের পতাকায় ভরে উঠেছে খেজুরি থেকে নন্দীগ্রাম আবার চন্ডীপুর থেকে নন্দীগ্রামের পথ। পতাকা, ফ্লেক্সে ভরছে রাস্তার দুপাশ। “স্বাগতম মুখ্যমন্ত্রী” ব্যানারে কার্যত চাপা পড়ল বিজেপির পতাকা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “নেত্রীর জনসভায় সব রকম প্রস্তুতি ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। মূল তিনটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মুল মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখবেন নেত্রী। তিন লক্ষ মানুষের জমায়াতের টার্গেট রয়েছে এই জনসভায়।”