নিজস্ব সংবাদদাতা: কেউ ছুটছেন ভোর চারটায় তো কেউ পাঁচটায়! সকালে ঘুম থেকে উঠেই তড়িঘড়ি সবাই ছুটছেন কাঁসাই বা কংসাবতীর পাড়ে। মঙ্গলবার থেকে ফের ফিরেছে শীত ফলে বুধবার রাতে যতটা উৎসাহ নিয়ে নদীতে মকরস্নানে যাওয়ার জন্য লাফিয়ে ছিল কচিকাঁচার দল, বৃহস্পতিবার ভোরে সে উৎসাহ চুপসে গেছে তাদের। লেপ তোষকের ভেতর থেকে বেরুতেই চাইছেনা কেউ। জোর করে তাদের বগলদাবা করে নিয়ে কাঁসাইয়ের পাড়ে ছুটছেন সবাই, দেরি হলে মহেন্দ্রক্ষণ নষ্ট হওয়ার জোগাড়।
কাঁসাইয়ের উত্তর এবং পূর্ব পাড় জুড়ে উঠে এসেছে মেদিনীপুর শহরের বড়বাজার, মানিকপুর, বল্লভপুর, রাজাবাজার, মিরবাজার, কাঁতকালি,ধর্মা, জগন্নাথমন্দির, নতুনবাজার, পালবাড়ি আবার পূর্বপাড়ে পাটনাবাজার, মহাতাবপুর, জজকোর্ট, অরবিন্দনগর। আর কাঁসাইয়ের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড়ে মাতকাতপুর, মোহনপুর, সতকুই, ইন্দা, বড়কলা, বরগাই, গোকুলপুর, লিলুয়াকোলা, মহেশপুর। হৈ হট্টগোল, মাইক, ডিজে বাজিয়েও কোথাও কোথাও মকরস্নানের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার মকর স্নানে ঠাসা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে কাঁসাইয়ের দুই পাড়েই। খড়গপুর কিংবা মেদিনীপুর শহর ছাড়াও গ্রামীন খড়গপুর বা মেদিনীপুরের কাঁসাই তীরেও ভিড় নজরে পড়েছে নজরকাড়া। আর সেই ভিড়ের চাপে হারিয়ে গেছে করোনা বিধি সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম। মাত্র কয়েক মাস আগেই যে দুই শহরে করোনা দাপিয়ে বেড়িয়েছে তা দেখে বোঝার উপায় ছিলনা। মাস্ক, স্যানেটাইজার তো দুরের কথা নুন্যতম সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।
এদিন কাঁসাইয়ের দক্ষিণপাড়ে অর্থাৎ মোহনপুরের দিকে স্নান করতে এসেছিলেন খড়গপুর শহরের বিদ্যাসাগরপুরের অনাথ ও সুস্মিতা চক্রবর্তী। বাইকে করেই ৭কিলোমিটার এসেছেন তাঁরা। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ১২বছরের ছেলেকেও। ৫০বছর বয়সী অনাথ বাবু জানালেন, ‘এক সময় বাবার হাত ধরে আসতাম। বাবা সাইকেলে করে আমাকে নিয়ে মকর স্নান করাতে আনতেন। তখন আমরা ওয়ালিপুর হয়ে পুরানো কাঁসাইয়ে যেতাম। এরপর ছেলে কে নিয়ে আসি। আসলে পুজা ব্রত ইত্যাদির বাইরে গিয়েও যদি ধরি তবে বলতে হয়, বছরে একবার অন্ততঃ এই মকরের ছলেই নদীর কাছে, প্রকৃতির কাছে আসা হয়। তাই কোনও ভাবেই মিস করিনা দিনটা।’
একই কথা জানিয়েছেন, মেদিনীপুর শহরের মানিকপুরের বাসিন্দা সুপ্রভাত মাইতি। পালবাড়ির ঘাটে চান করতে আসা মাইতিবাবু বলেন, ‘ছোটবেলায় মকরস্নানের পর নতুন জামা কাপড় পরে ঘরে এসে পিঠে খাওয়া। আগের দিনই নানারকমের পিঠে বানিয়ে রাখতেন মা, কাকিমা, ঠাকুমা। তখন যৌথ পরিবার। বাড়িতে সেদিন ভাত রান্না হতনা। পিঠে খেয়েই কাটত সারাদিন। না পোষালে চিড়া, মুড়ি। পরের দিন খোলা বিশ্রাম। ওইদিন খাসির মাংস আর ভাত। এখন পিঠের দিন আর নেই। আছে শুধু এই মকরস্নান টুকুই রয়ে গেছে। ফি বছর আসি।