নিজস্ব সংবাদদাতা: লা জবাব খড়গপুর! তোমাকে হাজার বার সালাম করলেও তোমার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। একই ছাদের তলায় আজ খড়গপুরের কয়েকজন যুবক এনে দিয়েছে ৫০০ জনেরও বেশি তরতাজা যুবককে, আধার কার্ডে যাঁদের ঠিকানায় লেখা আছে ঝাড়খন্ড, বিহার, তামিলনাড়ু, কেরল, পাঞ্জাব, অসম, মনিপুর আরও কত প্রদেশের নাম। আর এই বাংলার নদীয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ সহ একাধিক জেলার ৫০০ শতাধিক যুবক , যাঁদের বয়স ২৪ থেকে ২৮ কিংবা সামান্য কম বেশি যাঁদের আহারের ঠিকানা এখন খাতির-ই-খড়গপুর। না, এমন নজির এখনও অবধি মেলেনি।
খড়গপুরের এই বেনজির ছবি দেখতে হলে আসতে হয় শহর তথা সংলগ্ন এতদ অঞ্চলের প্রাচীনতম উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, সিলভার জুবিলী হাই স্কুল যেখানে খড়গপুর রেসকিউ ফাউন্ডেশন আর স্বাগত খাঁড়া, সৌম্য সরখেল, বাবলু পান্ডে, উত্তম বাঁকুড়া সহ কয়েকজন যুবক মিলে জ্বালিয়ে রেখেছেন ওই প্রায় ৬০০ যুবকের খিদে মেটানোর উনুন আর সেই উনুনের যোগান হিসাবে চাল ডাল তরিতরকারি মশলাপাতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ওই যুবকের দল বিভিন্ন কোম্পানির ঘর গেরস্থালি আর প্রসাধনের ব্যবসা করতেন। ব্যবসা মানে কোম্পানির ঘর থেকে দ্রব্য তুলে মানুষের বাড়ি বাড়িতে বিক্রি করা। বিক্রির ওপর কমিশন সঙ্গে নতুন করে ছেলে যোগান দিতে পারলে তার বিক্রি বাবদ কমিশন। খড়গপুর শহরের এক প্রান্তে কৌশল্যা এলাকায় শুধু এভাবেই ৬০০ জন তরুন থাকতেন লক ডাউন না হলে জানাই যেতনা। জানতেন না স্বাগত বাবলু সৌম্য উত্তমরাও।
স্বাগত জানান, ‘লকডাউনের বাজারে কৌশল্যা সংলগ্ন ভুতিয়াডাঙা ও দু’একটি জায়গার গরিব মানুষদের রেঁধে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলাম কয়েকদিন। একদিন দেখলাম তরুণ তরতাজা কয়েকজন যুবক হাতে খাবার পাত্র নিয়ে জিজ্ঞাসা করছে, খাবার পাওয়া যাবে কিনা! দেখে চমকে উঠি, এত সুন্দর বেশভূষা, জোয়ান ছেলেরা খাবার চাইছে কেন?খোঁজ নিয়ে জানতে পারি কৌশল্যা, বুলবুলচটি, ঝাপেটাপুর, মিরপুর সহ সংলগ্ন এলাকায় রয়েছেন এরকম শত শত যুবক।”
এরপরই পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এই যুবকের দল।এসডিপিও সুকোমল দাস এবং স্থানীয় পুলিশের তরফে জায়গাটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। সঙ্গে কিছু চাল ডাল তেল। কিন্তু পুলিশ আর কত দেখবে সমস্তটাই দেখতে হচ্ছে তাঁদের।
স্থানীয় মানুষ বন্ধুবান্ধব রা এরপরে বাড়িয়ে দিয়েছে চাল ডাল আলু। কিন্তু তাতেও কী চলে? চাল ডাল আলু ছাড়াও মশলাপাতি, গ্যাস, সব মিলিয়ে দিনে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। গত ২০ দিন এভাবেই চলছে।
পাশাপাশি বজায় রয়েছে আশেপাশের এলাকার গরিব মানুষেদের রান্না করা খাবার পরিবেশন আর সেই সংখ্যাটাও কয়েকশ। গত ৪০ দিন ধরেই এঁদের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। এত মানুষের রান্নার কাজ করছেন খড়গপুর রেসকিউ ফাউন্ডেশনের কয়েকজন যুবক। এদিকে সব মিলিয়ে নিজেদের সঞ্চয় প্রায় শেষ হতে চলেছে।
ব্যবসাপত্র বা ওই ধরনের কিছু করে চলে খড়গপুরের এই যুবকদের। সেই ব্যবসা এখন বন্ধ। প্রথম প্রথম অনেকেই এটা ওটা বাড়িয়ে দিয়েছেন কিন্তু তারাই বা কত করবেন! তারই মধ্যে চালিয়ে যেতে হচ্ছে খাতির-ই-খড়গপুরের হেঁসেল, খড়গপুর যে অন্যকে খিদেয় রেখে খেতে পারেনা। বাবলু পান্ডেদের তাই অনুরোধ যত দ্রুত সম্ভব এঁদের ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ নিন প্রশাসন। একটি তালিকাও তাঁরা পৌঁছে দিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। যতদিন তা না হয় খড়গপুর তো আছে! খড়গপুরেরই তো আরেক নাম মিনি ইন্ডিয়া।