নিজস্ব সংবাদদাতা: দিন ২০ আগে বাবার সঙ্গে উঠোন পেরিয়ে মাঠে যাওয়ার সময় তুলতুলে ক্ষুদে জীবটি কে দেখে অবাক হয়ে গেছিল দেবজ্যোতি। ছোট দুটো গোল চোখ জ্বল জ্বল করছিল আর বলের মত গোল মাংসপিণ্ডটা থরথর করে কাঁপছে। জীবটি যে একটি পাখির বাচ্চা এটুকুই শুধু বোঝা যাচ্ছিল। দেবজ্যোতির বাবা লক্ষণ চন্দ্র সাহু অবশ্য বুঝেছিলেন যে এটি প্যাঁচার বাচ্চা। তিনি গা করেননি কিন্তু নাছোড়বান্দা ১০বছরের দেবজ্যোতির জেদ বাচ্চাটিকে সে বাড়ি নিয়ে যাবেই, তাকে খাইয়ে দাইয়ে বড় করবে। প্যাঁচা যে পোষ মানেনা আর ওই টুকু বাচ্চাকে তার মা ছাড়া বাঁচানো অসম্ভব এটা বোঝানো যায়নি দশগ্রাম সতীশ চন্দ্র সর্বার্থ সাধক শিক্ষাসদনের ক্লাশ ফাইভের ছাত্র দেবজ্যোতিকে। আর সেই থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের দশগ্রাম অঞ্চলের হরেকৃষ্ণ বুথের সুকান্ত পল্লীর বাড়িতেই বড় হচ্ছে লক্ষী।
লক্ষী আসলে সেই প্যাঁচা শাবক, নাম দিয়েছে দেবজ্যোতিই। দিনের আলো অর্থাৎ সকালের আলো ফোটার পর থেকে সন্ধ্যের আগে পর্যন্ত দেবজ্যোতির সাথেই বড় হচ্ছে লক্ষী। মুড়ি গুঁড়ো করে, আটার পিটুলি ইত্যাদি তৈরি করে নিজের হাতে খাইয়ে দেয় দেবজ্যোতি। আর সন্ধ্যের পর ঠিক যে গাছটির তলায় লক্ষীকে পড়ে থাকতে দেখা গেছিল সেই গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া ঝুড়িতে রেখে দেওয়া হয়। রাতে লক্ষীর মা আসে, লক্ষীকে খাওয়ায়, তার কাছে সময় কাটায় আর আলো ফুটলে চলে যায়। লক্ষী আবার চলে আসে দেবজ্যোতির হাতে। গত ২০ দিন এভাবেই চলছে, বড় হচ্ছে লক্ষী, তাঁর গায়ে পালক গজাচ্ছে, ডানা বাড়ছে তার।
দেবজ্যোতির বাবা লক্ষন চন্দ্র জানালেন, ” দেবজ্যোতির জেদের কাছে হার মেনে শাবকটিকে ঘরে আনার প্রথম ক’দিন শাবকটিকে ঘরেই রাখি কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এ পাখি দিনে কিছুই দেখতে পায়না প্রায় আর রাতে যখন ওর চোখ জ্বলে তখন আমরা ঘুমাই। এরপরই আমরা ঠিক করি ওকে রাতে এমন একটায় রাখব যাতে ওর মা ওকে সঙ্গ দিতে পারে। সেই মত আমরা ঝুড়ি ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম। সৌভাগ্য যে ওর মা ওকে খুঁজে পেয়েছে এবং প্রতিদিনই মা আসে। লক্ষীকে খাওয়ায়, আদর করে। আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ওকে বাড়িতে নিয়ে আসি কারন তা না হলে অন্য পাখিরা ওকে মেরে ফেলত।”
গ্রামের সকলেই এক কথায় স্বীকার করে নিয়েছে যে, দিনের বেলায় যে প্যাঁচার শাবকটি পড়ে গিয়েছিল তাকে বাঁচানো যেতনা যদি না দেবজ্যোতি ওকে জেদ করে তুলে আনত। আর শুধুই তুলে আনা নয় তাকে পরম মমতায় উষ্ণতা দিয়ে চলেছে সে। বনকর্মীরা জানিয়েছেন, ”যে প্যাঁচার শাবকটিকে দেবজ্যোতির সঙ্গে দেখা যাচ্ছে সেটি আসলে খুঁড়ুলে পেঁচা। ছোট আকারের এই প্যাঁচার দল ঘুরে বেড়ায় গ্রামে গঞ্জে ধানের ক্ষেতে। ইঁদুর, পোকা মাকড় ইত্যাদি এদের খাদ্য। পেঁচার শাবকটি আর দিন কয়েকের মধ্যেই উড়ে যেতে পারবে।”
লকডাউনের বেশির ভাগ সময়টাই দেবজ্যোতির কেটেছে লক্ষীর সাথে। ঘুম ভাঙলেই লক্ষীকে ঝুড়ি থেকে নামিয়ে ঘরে আনে সে। সন্ধ্যা হলে ঝুড়িতে রেখে আসে তার মায়ের জন্য । এমন করেই বড় হয়ে গেছে লক্ষী। এবার ওড়ার সময় এগিয়ে আসছে। তাতে অবশ্য মন খারাপ হয়নি তার। তার বিশ্বাস আকাশে মায়ের সাথে উড়ে গেলেও মাঝে মাঝে তার সাথে দেখা করতে আসবে লক্ষী