নিজস্ব সংবাদদাতা: কারও পৌষ মাস তো কারও সর্বনাশ! লকডাউনে সব চেয়ে বড় সর্বনাশের মুখে দিন মজুর শ্রমিকরা। কাজ নেই, পকেটে পয়সা নেই, আর বাড়ি যাওয়ার উপায় নেই। আর সেই সর্বনাশের সুযোগ নিয়ে ফাঁদ পেতে বসে আছে এক শ্রেনীর মানুষ। যে যেমন করে পারছে লুটে নিচ্ছে। এমনই এক লুটের স্বাক্ষী রইল এ রাজ্যের আসানসোল। তিল তিল করে ঘাম ঝরিয়ে কেনা তিন থেকে চার হাজার টাকার সাইকেল কিনে নিল এক শ্রেণীর লোভি মানুষ। শুক্রবার এমনই ঘটনা ঘটল বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমান্তে।
অভিযোগ আটকে পড়া শ্রমিকদের ফেরানোর উদ্যোগ নিচ্ছেনা ঝাড়খন্ড সরকার। শুক্রবার এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শ্রমিকদের দল। ঘটনাস্থলে কুলটী থানা ও চৌরঙ্গী ফাঁড়ির পুলিশ ও মাইথন থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে ! পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে দক্ষিনবঙ্গ পরিবহন নিগমের বেশ কয়েকটি বাসে আটকে থাকা শ্রমিকদের ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কুলটি থানা শ্রমিকদের খাবার ও পানীয় জলের বোতল ও খাবার পরিবেশন করার পর তাঁদের বাসে ওঠার ব্যবস্থা কিন্তু সমস্যা এখানেই।
স্থানীয় কারখানা বা খনিতে কাজ করা শ্রমিকদের অনেককেই কাজের এলাকা থেকে ২ থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। প্রথম দিকে ওই পথ হেঁটেই যাতায়াত করেন তারপর ধিরে ধিরে টাকা জমিয়ে সাইকেল কেনেন সুবিধার জন্য। সময় ও শ্রম দুটোই সাশ্রয় হয়। ক্ষমতা মত তিন থেকে চার হাজার টাকা দিয়ে এরা সাইকেল কিনেছিলেন।
বাসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় শ্রমিকদের সঙ্গে থাকা সাইকেল নেওয়ার সুযোগ বাসে নেই। বাড়ি ফিরতে হলে সাইকেল ছাড়তে হবে ।সাইকেল সাথে নেওয়া যাবেনা। একদিকে দীর্ঘদিন বাড়ি না ফেরার যন্ত্রনা অন্যদিকে পরিশ্রমের টাকা জমিয়ে কেনা সাইকেল! দুইয়ের মধ্যে পড়ে মানুষ সাইকেল ছেড়েই বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা চান সাইকেল গুলো বিক্রি করে দিতে। আর এরই সুযোগ নেয় স্থানীয় কিছু জনতা। সাইকেল পিছু দাম ওঠে ১০০ টাকা। না, এর এক টাকাও বেশি দাম দিতে রাজি হয়নি কেউ।
বাধ্য হয়ে ওই ১০০ টাকাতেই অনেকে সাইকেল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়ে যায়। অনেকের কপালে তাও জোটেনি, সাইকেল কেনার জন্য ভিড় করা মানুষ ছিনিয়ে নেয় কারও কারও সাইকেল। চোখের জল ফেলতে ফেলতে সাইকেল ছেড়ে বাসে উঠে যায় শ্রমিকের দল! বাসে ওঠার আগে চোখের জলেই তাঁরা জানিয়ে যান কেউ দু’মাস কেউবা ছ’মাস আগেই কিনেছিলেন সাইকেল।