Homeএখন খবরসেতু চাই, ভারতীকে দেখেই ঢল নামছে জনতার! ভিড় সামাল দিতে নাজেহাল নিরাপত্তা...

সেতু চাই, ভারতীকে দেখেই ঢল নামছে জনতার! ভিড় সামাল দিতে নাজেহাল নিরাপত্তা রক্ষীরা

ভিড়ের চাপ থেকে এভাবেই আগলে রাখতে হচ্ছে ভারতী ঘোষকে

নিজস্ব সংবাদদাতা: দুহাত প্রসারিত করে জনতাকে যতদূর সম্ভব দুরে রাখার চেষ্টা করছেন এক নিরাপত্তা রক্ষী। তাঁর দু’বাহুর মাসল লাল হয়ে আছে অনেকক্ষন ধরে। কপালের ঘাম গাল বেয়ে গলা চুঁইয়ে যাচ্ছে। মোছার উপায় নেই কারন হাত সরালেই জনতার চাপে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যেতে পারেন ম্যাডাম। ম্যাডাম ভারতী ঘোষ। হ্যাঁ, ৬ নিরাপত্তা রক্ষী তাঁকে এই নামেই ডাকেন। দিনের প্রায় ৮ ঘন্টা জনতার এই চাপ নিতে হচ্ছে তাঁদের। আর তাতেই মালুম হয়েছে, ‘বঙ্গাল কী ভোট মে ইতনা প্রেসার হোতা হ্যায় কেয়া?’

গত চারদিন ধরে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় প্রচার শুরু করেছেন ভারতী ঘোষ একেকদিন ১২কিলোমিটার অবধি র‍্যালি চলছে। হুডখোলা গাড়িতে যতক্ষন যাচ্ছেন ঠিক আছে কিন্তু মাটিতে নামলেই টেনশনে পড়ে যাচ্ছেন তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৬ জওয়ান। জনতাকে দুরে রাখার একটা অদৃশ্য ব্যারিকেড তাঁরা গড়ার চেষ্টা করছেন বটে কিন্তু সেসব কিছুই কাজ করছেনা। মাটিতে নামলেই ছুটে আসছেন কয়েকশ মানুষ যাঁর সম্মুখ ভাগে থাকছেন মহিলা। আর তখুনি সমস্যায় পড়েছেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। মহিলাদের ঠেলে সারানো যাচ্ছেনা। জনতার চাপ এসে পড়ছে ম্যাডামের ওপর। ফলে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে দুর্ঘটনার এমনটাই জানালেন তাঁর নিরাপত্তায় থাকা এক আধিকারিক।

আমরা খুবই সমস্যায় পড়ে গেছিলাম যেদিন নদী পেরিয়ে একটা গ্রামের কালী পুজায় গিয়েছিলাম ম্যাডামের সঙ্গে। জায়গাটার নাম স্থানীয় মানুষজন বলছিলেন গোলগ্রাম। ওখানে পৌঁছানোর পরই পিলপিল করে মানুষ ছুটে আসলেন ম্যাডামের কাছে। নিমেষে মন্ডপ ফাঁকা হয়ে গেল, আশেপাশের দোকানপাটও ফাঁকা। ম্যাডামকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষ যার মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা। সবাই-ই ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলতে চায়, দেখতে চায়। ভিড়ের চাপে বাচ্চা গুলো কেঁদে উঠেছিল। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমরা তো ভীষন ভয় পেয়ে গেছিলাম। কমিটির লোকেরা অবশ্য সাহায্য করেছিল খুবই। সেদিন ওই ঘন্টা দুয়েক সময় মারাত্মক অবস্থা ছিল। এত পপুলারিটি থাকলে ভিভিআইপিদের ভিড় এড়িয়ে চলা উচিৎ বলে জানালেন এক নিরাপত্তা রক্ষী।

ডেবরার বিজেপি নেতারাও জানালেন ঘাটাল
লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়ে ভারতী ঘোষ যখন ডেবরায় প্রচারে আসেন তখন এত মানুষের উৎসাহ দেখেননি তাঁরা। তা স্বত্ত্বেও ওই নির্বাচনে ভারতী ঘোষ এই ডেবরা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৪ হাজারের বেশি ভোটে লিড পেয়েছিলেন। তাঁদের মতামত অন্ততঃ ১৫হাজার ভোটের ব্যবধানে এবার জিততে চলেছেন ভারতী ঘোষ। বিজেপি নেতাদের দাবি গোলগ্রামের কালীপুজো থেকে ভারতী ঘোষ ফেরার পরেই গিয়েছিলেন তৃনমূল প্রার্থী হুমায়ুন কবীর কিন্তু তাঁকে ঘিরে সেই উচ্ছাস উদ্দীপনা নজরে পড়েনি।

অবশ্য শুধু গোলগ্রাম নয় নদীর ওপারে চারটি গ্রামপঞ্চয়েত গোলগ্রাম, মলিঘাটি, ভবানীপুর এবং ভরতপুরে শাসক বিরোধী ক্ষোভ রয়েছে যথেষ্ট তার একমাত্র কারণ লোয়াদা সেতুর সংযোগকারী রাস্তা গত ১০বছরে করে উঠতে পারেনি বর্তমান সরকার। বাম আমলে সেতু নির্মাণ হলেও জটিলতা তৈরি হয়েছিল সংযোগকারী রাস্তা নিয়ে। ডেবরার বামপন্থীদের মতে নন্দীগ্রাম সিঙ্গুরের ধাঁচে স্থানীয় মানুষকে উসকে দিয়ে তখন এই সংযোগকারী রাস্তা হতে দেয়নি তৃনমূলের নেতারাই। আজ সেই ফাঁদে আটকে গেছে তৃনমূলই। তৃনমূলের নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন, সেতুর সংযোগকারী রাস্তা সহ গোলগ্রাম থেকে আষাঢ়ি অবধি রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। মাঝখানে লকডাউনে সেই কাজ কিছুটা ব্যাহত হলেও ফের কাজ শুরুর মুখে এবং আগামী ৬মাসের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। ওটা নিয়ে শুধু শুধু রাজনীতি করা হচ্ছে।

যদিও মানুষ আর এই কথায় খুব একটা যে ভরসা করছেনা তারই ইঙ্গিত বোধহয় ভারতী ঘোষকে ঘিরে এই উপচে পড়া ভিড়ে। কিন্তু কারও কারও মনের মধ্যে প্রবল হতাশাও। তাঁদের বক্তব্য জন প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ধোঁকা খেতে খেতে বিশ্বাস উঠে গেছে। লোয়াদা সেতু দিয়ে মানুষ এপার ওপার করতে পারবে এটা আর তাঁরা বিশ্বাস করতে পারেননা। ভারতী ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘মানুষকে দোষ দেওয়া যায়না তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতা দিয়েই তো শিক্ষা নেন। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি ডেবরায় আমার উন্নয়ন কাজ শুরুই হবে দু’পাড়ের মানুষকে ওই সেতু দিয়ে যুক্ত করার মধ্যে দিয়েই। ওখানে যাঁরা সেতু নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন চালিয়ে আসছেন তাঁদের নিয়েই আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা জানেন ইতিমধ্যেই কতটা এগিয়েছি আমরা সেতুর বিষয়ে।’

RELATED ARTICLES

Most Popular