নিজস্ব সংবাদদাতা: ৯ বছর আগে সরকারি ক্ষমতায় এসে মূখ্যমন্ত্রী সদম্ভ ঘোষণা ছিল তাঁর সরকার জল কর নেবেনা। কিন্তু খড়গপুর পৌরসভার মাসের শেষে পকেট কেটে জল কর নিয়ে নেয় কিন্তু মুখে বলে জলকর নয় পরিষেবা মূল্য বা সার্ভিস চার্জ। কিন্তু সে জলকর দিয়েও মুক্তি নেই খড়গপুরের মানুষের, দু’বেলাই পুরসভার নল বেয়ে কালো জল গড়িয়ে আসে। খড়গপুর পৌরসভার এক বরিষ্ঠ তৃনমূল কাউন্সিলর ‘দ্য খড়গপুর পোষ্ট’কে জানালেন, “সকালে উঠে ভয়ে ভয়ে থাকি কালো জল যেন না আসে। আসলেই বউয়ের মুখ ঝামটা।”
শুধু তাই নয়, একদা কংগ্রেসের ওই প্রাক্তন কাউন্সিলর জানালেন, “জল প্রকল্পের যে টুকু কাজ শুরু হয়েছিল আর কংগ্রেস আমলে শেষ হয়েছিল তার ওপরই টিকে আছে এই শহরের পানীয় জল সরবরাহ। দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের পুরো কোটি কোটি টাকা এখন মাটির তলায় পাইপ লাইন হয়ে শুয়ে আছে আর পাইপ কেনার বখরা ঢুকেছে কয়েকজন নেতার পকেটে।”
সারা রাজ্যের মতই নির্বাচন হয়নি খড়গপুর পৌরসভার। পেছনের দরজা দিয়ে প্রশাসক বানিয়ে শাসক দলের নেতাদেরই কামানোর পাকা বন্দোবস্ত। যেখানে ৩৪বছরের বাম আমলে পৌরসভা, পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে প্রতিটি স্থানীয় প্রশাসনে নিয়ম করে নির্বাচন হয়েছে সেখানে পাঁচবছরেই মুখ থুবড়ে পড়েছে মা-মাটি-মানুষের সরকার।
এমনই সব দাবি নিয়ে বুধবার শুরু হয়েছে বাম-কংগ্রেসের খড়গপুর পৌরসভা অভিযান। অভিযান শুরু হতেই অবরুদ্ধ খড়গপুর শহরের দক্ষিণ অংশ। শতশত ছাত্র যুব মহিলার মিছিল এসেছে তিন দিক থেকে। কৌশল্যার দিক থেকে পুর্ব মুখি মিছিলে সামিল হয়েছে বুলবুলচটি, কৌশল্যা, বারবেটিয়া, মিরুপুর, সাঁজোয়াল, ডেভলপমেন্ট, সাউথ সাইড, পাঁচপীর। পৌরসভার পশ্চিমভাগ থেকে মিছিল এসেছে প্রেমবাজার, তালবাগিচা, রবীন্দ্রপল্লী, ঝুলি, হিজলি সোসাইটি, ছোটট্যংরা, ঝাপেটাপুর, বিশ্বরঞ্জননগর ও চিত্তরঞ্জননগর।
দক্ষিণভাগের মধ্যমুখী মিছিলে যোগ দিয়েছে ইন্দা, পিরবাবা, পাঁচবেড়িয়া, সুভাসপল্লী, ভবানীপুর, খরিদা, মালঞ্চ, নিমপুরা, আরামবাটি। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর পদযাত্রায় আন্দোলিত গোটা শহর।
মিছিলে মিছিলে অবরুদ্ধ শহরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পৌরসভার সামনের যান চলাচল। দিঘা ও কাঁথির বাস, ট্রাক ঘুরছে বাইপাস, ৬০নম্বর জাতীয় সড়ক ঘুরে, ছোট গাড়ি হলে কোনোমতে পুরানো বাজারের ভেতর দিয়ে। কেশিয়াড়ি, ভসরাঘাট, খড়িমাথানির গাড়ি ঘুরছে আইআইটি ফ্লাই-ওভার দিয়ে গিরিময়দান, গোলবাজার হয়ে বাস স্ট্যান্ড। খড়গপুর পৌরসভার সামনে বামপন্থী দলগুলি ও কংগ্রেসের উদ্যোগে পৌরসভা ঘেরাও করার পাশাপাশি একটি সভার আয়োজন করা হয়েছে যেখানে বক্তব্য রাখেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সন্তোষ রানা এবং কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সমীর রায় সহ উপস্থিত নেতৃত্ব।
অবিলম্বে পৌর নির্বাচন, পরিশ্রুত পানীয়জল, রেল এলাকার বস্তিবাসীদের বাস্তু লিজ, সবার জন্য ঘর ইত্যাদি দাবি গুলো তোলা হয়েছে। এই সময়ে বাম-কংগ্রেস জোটের এই জমায়েত বিধানসভার প্রাক্কালে মহড়া দিয়ে দিল বলা যেতে পারে। সিপিএম, সিপিআই এবং কংগ্রেসের এই ওয়ার্ম-আপ নজর কেড়ে নিল শহরবাসীর। আগামী কয়েকমাস যৌথ কর্মসূচির পরিকল্পনা হিসাবে বুধবারের এই পদযাত্রা ও সভা বাম কংগ্রেস জোটকে কতটা ডিভিডেন্ড দেয় সেটাই এখন দেখার।