নিজস্ব সংবাদদাতা: সরকারের নির্দেশ রয়েছে অফিস গুলিতে জমায়েত করা যাবেনা, বিভিন্ন শুনানি বন্ধ, উপযুক্ত স্বাস্থ্য বিধি যেমন সাবান দিয়ে হাত ধুয়েই সরকারি অফিসে প্রবেশ করা যাবে ইত্যাদি। সেই নিয়ম মেনেই পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর-২ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের দপ্তরেও (বি.এল.অ্যান্ড এল.আর.ও) সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের ঘরে প্রবেশ করতে প্রথমে নিষেধ ও পরে দুরত্ব বজায় রেখেই আর্জি পেশ করতে বলায় ক্রুদ্ধ অধ্যাপকের হাতে বেধড়ক ধোলাই খেলেন দপ্তরের দুই রাজস্ব আধিকারিক। মারের চোটে নাক ফেটে রক্ত ছুটল একজনের, অন্যজনের হাতে গুরুতর চোট। এরপরই ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মারধর করার অভিযোগে এক দাসপুর থানায় এফআইআর করেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিক। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল দাসপুর এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে কলকাতার একটি সরকারি কলেজে কর্মরত ওই অধ্যাপকের নাম পার্থসারথী বেরা। বাড়ি দাসপুর থানার সোনাখালি সংলগ্ন সয়লা গ্রামে । বুধবার পার্থসারথী নিজের জমি জায়গা সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে সস্ত্রীক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তুহিন ঘোষের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর দপ্তরে যান। ঘরে প্রবেশের মুখেই দপ্তরের পিওন তাঁকে বাধা দেন। বলেন, এভাবে আধিকারিকের দপ্তরে প্রবেশ করা যাবেনা। সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু অধ্যাপক সেই বারন না মেনে জোর করেই ঢুকে যান তুহিন ঘোষের দপ্তরে।
ঘোষ ওই অধ্যাপককে বলেন, ওখান থেকেই আপনার বক্তব্য বলুন। কেন তাঁকে চেয়ারে বসতে না দিয়ে দুর থেকেই দাঁড়িয়ে বক্তব্য পেশ করতে বলা হল এই আভিযোগ তুলে চিৎকার করতে শুরু করেন। এমন কি ঘোষকে তুই তোকারি শুরু করেন।চিৎকার শুনে ছুটে আসেন দুই রাজস্ব আধিকারিক মনীশ নস্কর। অধ্যাপিককে সংশ্লিষ্ট কক্ষ থেকে বের করতে গেলে তাঁদের ওপর কিল চড় ঘুসি চলতে থাকে। হচকিত আক্রমনে আহত হন কৌশিক ও মনীশ। নাক ফেটে রক্ত বের হয় একজনের, অন্যজনের হাতে জোরালো চোট লাগে। অন্যান্য কর্মীরা ছুটে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। রাগে গজগজ করতে অফিস চত্বর ছাড়েন ওই অধ্যাপক।
ইতিমধ্যেই খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। তুহিন ঘোষ ও আক্রান্ত আধিকারিকদের সাথে কথা বলেন পুলিশ আধিকারিকরা। এরপরই কর্তব্যরত সরকারী কর্মচারীদের কাজে বাধা, মারধর ইত্যাদি কয়েকটি ধারায় আভিযোগ দায়ের হয়। প্রয়োজনে ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মহামারী প্রতিরোধ আইনেও মামলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ আধিকারিক। করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই অধ্যাপককে পুলিস খুঁজছে।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তুহিন ঘোষ জানান, আমি নিজে বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ, সর্দি জ্বরে ভুগছি। তারওপর করোনা সংক্রান্ত নির্দেশিকা। তাই অফিসে এলেও জেলার নির্দেশে কোনও শুনানি করিনি। প্রতিটি ভিজিটরের সঙ্গেই দূরত্ব বজায় রেখেই কথা বলেছি। তাঁকেও দূরত্ব রেখে কথা বলার অনুরোধ করতেই তিনি চটে যান। আমাকে ‘তুই-তোকারি’ দিয়ে সম্বোধন করে উত্তেজিত হয়ে যা-তা মন্তব্য করেন। তাঁকে শান্ত করতে এসেই মার খান আমার আধিকারিকরা।
ঘটনার পরই নিজের মোবাইলটি সুইচ অফ করে দেন অধ্যাপক ফলে যোগাযোগ করা যায়নি তাঁর সঙ্গে। পুলিশ তাঁর খোঁজ করছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে কলেজগুলি ছুটি থাকায় অধ্যাপক কোথায় আত্মগোপন করেছেন কিনা দেখছে পুলিশ।