Homeএখন খবরসৌরভ জল্পনার মধ্যেই মন্ত্রীত্ব ছাড়লেন লক্ষীরতন শুক্লা, ছাড়লেন তৃনমূলের জেলা সভাপতির পদও

সৌরভ জল্পনার মধ্যেই মন্ত্রীত্ব ছাড়লেন লক্ষীরতন শুক্লা, ছাড়লেন তৃনমূলের জেলা সভাপতির পদও

অশ্লেষা চৌধুরী:রাজ্যের মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিলেন লক্ষী রতন শুক্লা, ছেড়ে দিলেন জেলা সভাপতির পদও। ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন এই ফার্স্ট বোলারের আচমকা সিদ্ধান্তে হতভম্ব তৃনমূল কংগ্রেস শুধু তাই নয় তাঁর এই সিদ্ধান্ত ফের সৌরভ গাঙ্গুলির মূখ্যমন্ত্রীত্বের সম্ভবনাকে সামনে নিয়ে চলে এল। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দাদা’র হাত ধরেই একদিন জাতীয় ক্রিকেটে জায়গা করে নিয়েছিলেন শুক্লা। জাতীয় দল থেকে প্রথমে অধিনায়কত্ব পরে দলের ওপর থেকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার পর ছিটকে যান লক্ষীরতনও কিন্তু দাদার প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাশাপাশি ছিল আন্তরিক সম্পর্ক। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নটা উঠেই গেল যে তাহলে সৌরভের ভাবী মূখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভবনার মুখেই কী তৃনমূল থেকে সরে আসলেন লক্ষী? যদিও বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না। বিধানসভার মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে চান বলেও ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা ইস্তফাপত্র পাঠান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবং সেই ইস্তফা গ্রহণ করা হবে বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। পাশাপাশি তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতির পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার। তবে এখনই বিধায়কপদ ছাড়ছেন না তিনি। লক্ষ্মীরতন আরও জানিয়েছেন, রাজনীতি থেকে অবসর চেয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত। লক্ষ্মীরতন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে নাকি দাবী করেছেন, তিনি অন্য কোনও দলে যাবেন না, রাজনীতি থেকেই অবসর নিচ্ছেন। আবার ক্রিকেট মাঠে ফিরতে চান তিনি। কিন্তু ধোঁয়াশা থাকছেই কারণ লক্ষ্মীরতন রাজনীতি ছাড়লেও বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না বরং জানিয়ে দিয়েছেন, বিধায়ক হিসেবে নিজের সময়সীমা শেষ করবেন।

এদিকে এভাবে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সৃষ্টি হয়েছে জোর জল্পনা। তিনিও কী শেষমেষ শুভেন্দুর পথেই হাঁটবেন? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সকলের মনে। তৃনমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, লক্ষ্মীরতন যদি সত্যিই মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন, তবে তিনি দুঃখিত হবেন। তৃণমূলের কুণাল ঘোষ দাবী করেছেন, কেন ঠিক ভোটের আগে লক্ষ্মীরতন এভাবে দল ছাড়লেন তাঁরা জানেন না। দল তাঁকে বিধায়ক পদ দিয়েছে, মর্যাদা দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করেছেন, শুধু রাজনীতি নয়, অন্যান্য পেশার মানুষকেও নিয়ে এসে দায়িত্ব দিতে। তাঁরা যথেষ্ট ভাল কাজ করছেন। বিজেপির দেউলিয়া দশা, তাই তারা অন্য দলের দিকে এভাবে নজর দিচ্ছে।

হাওড়ার আরও এক মন্ত্রী অরূপ রায় আবার দাবী করেছেন, লক্ষ্মীরতন পদত্যাগ করেছেন বলেই তিনি জানেন না। ঠিক ভোটের আগে জেলা সভাপতির পদ ছেড়ে চলে যাওয়ার অর্থ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেনাপতির চলে যাওয়ার মত। লক্ষ্মীরতনের সঙ্গে তাঁর মনমালিন্য রয়েছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে তা অস্বীকার করেছেন অরূপ বাবু। তাঁর বক্তব্য, সম্পর্কে লক্ষ্মীরতন তাঁর ছোট ভাইয়ের মত, দুজনের অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে লক্ষ্মী নাকি আগেও তাঁকে বলেছেন, রাজনীতির জন্য তিনি নিজের খেলাধুলোর জগতে নজর দিতে পারছেন না।‘

তবে বিজেপিও মুখিয়ে রয়েছে লক্ষ্মীরতনকে দলে তানার জন্য। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, লক্ষ্মীরতন কেন পদত্যাগ করলেন তা তাঁরা জানেন না, সেটা তিনিই বলতে পারবেন। তবে অনেকের সঙ্গেই তাঁদের কথা চলছে বলেই জানিয়েছেন তিনি, আর একথা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

আসলে কিছুদিন থেকেই লক্ষ্মীরতনের দল ছেড়ে পদ্ম শিবিরে যোগদানের গুঞ্জন উঠছিল। এরই মাঝে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনে হাওড়ার কদমতলায় জেলা সদর দফতরের অনুষ্ঠানে রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় উপস্থিত থাকলেও সেই অনুষ্ঠানে কিন্তু হাজির ছিলেন না তৃণমূলের সদর সভাপতি লক্ষীরতন শুক্লা এবং দলের কোর্ডিনেটর এবং বনমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায়। আর এই ঘটনার ৪ দিনের মাথাতেই লক্ষ্মীরতনের এই পদক্ষেপ।

তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর রাজনীতির চাপে পড়েই তিনি খেলায় মন দিতে পারছেন না, আর সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত তাঁর। কিন্তু এই যুক্তি মানতে রাজি নন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মধ্যে যিনি খেলার ময়দান ছেড়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন তিনি সবটা বুঝেই এসেছিলেন। লক্ষীরতনের নতুন করে আর বড় খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে বরং রাজনীতিতেই দ্বিতীয় ইনিংসের পথে লক্ষীরতন আর তাঁর ক্যাপ্টেন হতে চলেছে দাদাই। অবশ্য কোনটা সঠিক তা জানার জন্য আর কয়েকটা মাস অপেক্ষা করতে হবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular