শুধু ধোঁয়া উঠছে একটি চিমনি দিয়েই |
নিজস্ব সংবাদদাতা: গোটা রাজ্যে শিল্পের প্রকৃত হাল কি তাই বুঝিয়ে দিচ্ছেন কোলাঘাট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ৬টা ইউনিটের মধ্যে ৫টা ইউনিটেই উৎপাদন বন্ধ, চলছে মাত্র ১টি ইউনিট! শনিবার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানালেন কোলাঘাট থার্মল পাওয়ার প্রজেক্ট বা কেটিপিপির জেনারেল ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্ত্তী। রাজ্যে শিল্পের বেহাল দশাই এরজন্য দায়ি কিনা এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে চক্রবর্ত্তী এটা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, কেটিপিপির ইতিহাসে এই প্রথম যেখানে বিদ্যুতের চাহিদা না থাকার দরুণ মাত্র ১টা ইউনিট চালাতে হচ্ছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎ যাচ্ছেনা বলেই কি এই সংকট ? প্রশ্ন করতে সাংবাদিকদের চক্রবর্ত্তী অদ্ভুদ উত্তর দিয়ে জানিয়েছেন, ‘শিল্প ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ যাচ্ছে কিনা আমার জানার কথা নয় কারন আমরা নিজেরা কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ করিনা। আমরা বিদ্যুৎ বিক্রি করি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পরিবহন নিগমকে। তারা শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎ দেন নাকি বাড়িতে বিদ্যুৎ দেন সেটা আমাদের জানার কথা নয়।” বলাবাহুল্য জেনারেল ম্যানেজার শিল্পে বিদ্যুতের চাহিদা কম বিষয়টি আসলে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, শীতকালে এসি ফ্যান ইত্যাদি চলেনা তাই বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
নিশ্চিতভাবেই হাস্যকর যুক্তি কারন গত কয়েকবছরে রাজ্য সরকারের দাবি অনুযায়ী গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাই এসি না চললেও গৃহের জন্য বিদ্যুৎয়ের চাহিদা বেড়েছে। আর যেমন এসি চলেনা তেমন শীতকালে রুমহিটার, গীজার ইত্যাদি ব্যবহার হয়। আর সবচেয়ে বড় কথা যিনি দাবি করছেন যে, তিনি জানেননা বিদ্যুৎ পরিবহন নিগম কাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তিনি কেন চাহিদা কমের যুক্তি হিসাবে এসি ফ্যান ইত্যাদি ব্যবহার হচ্ছেনা বলে দাবি করছেন?
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
বাস্তব অবস্থাই হচ্ছে শিল্পে বিনিয়োগ কম আর একের পর এক শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং তাঁর সঙ্গে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মুল্যবৃদ্ধি সংকট ডেকে এনেছে কোলাঘাটে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল কার্যত ধুঁকছে। রোহিত ফেরোটেক্স, মর্ডান ইন্ডিয়া কনকাস্ট, রেণুকা সুগার পুরোপুরি বন্ধ। মানাকসিয়ার একটা প্ল্যান্ট বন্ধ। এছাড়াও অজস্র ছোটবড় কারখানা হয় ধুঁকছে নয় বন্ধ হয়ে গেছে। আদতে এই সব শিল্পগুলিই ছিল কোলাঘাট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মূল গ্রাহক। ফলে চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এর পাশাপশি রয়েছে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মুল্যবৃদ্ধি। এই মুল্যবৃদ্ধির কারনে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্টান গুলি নতুন করে তাঁদের কারখানা সম্প্রসারন করতে অথবা নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা করতেও ভয় পাচ্ছেন। আইওসি, মিতসুবিশি কিংবা হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের মত বড় কারখানা গুলি আবার কারখানার এমন আধুনিকীকরণ করছে যাতে বিদ্যুতের ব্যবহার কম করতে হয়। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা এতটাই কমে গেছে যে ওই শিল্পাঞ্চলের জন্য একটি পৃথক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্টা করার কাজ শেষ করেও তা চালু করতেই পারেনি একটি বেসরকারি কোম্পানী।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
বিদ্যুতের এই চাহিদা কমে যাওয়া এখন চরমে উঠলেও এর শুরুটা হয়েছিল ২০১৩থেকেই এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা বলেন, ২০১৩ এবং ২০১৯য়ে দুটি বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে কোলাঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। ট্রান্সফারের আগুন লেগে যায়, বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। এর কারন প্ল্যান্টে পরিচর্যার অভাব। যখন বিদ্যুতের চাহিদা জোরালোভাবে কমে যায় তখন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় প্ল্যান্ট গুলি। ফলে মেইনটেন্যান্স বা পরিচর্যার অভাব ঘটে। কোলাঘাটে এখন সেই অবস্থাই চলছে। কোলাঘাট কার্যত এখন রাজ্যে শিল্পমন্দার প্রকৃত মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছে।