ওয়েব ডেস্ক : ইদানীং নানা কারণে বারংবার শিরোনামে আসছে কলকাতা মেডিকেল কলেজের নাম। এবার এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় রীতিমতো সোরগোল পরে গিয়েছে মেডিক্যাল কলেজ চত্বর। পিপিই পড়ে এসে বেডে শুয়ে থাকা এক করোনা চিকিৎসাধীন রোগীর গলার হার এবং আংটি ছিনতাই করলো ২ দুষ্কৃতী। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিয়ের আইসোলেশন ওয়ার্ডে। জানা গিয়েছে, যেহেতু ওই ২ ছিনতাইবাজ পিপিই পড়ে এসেছিল, সেহেতু তাদের মুখ চেনা যায়নি। ঘটনার সময় ওই রোগিণী ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে বিষয়টি নজরে আসিতেই রোগিণী ও তাঁর পরিবারের তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়৷ এদিকে ভরদুপুরে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে এমন ছিনতাইয়ের ঘটনায় রীতিমতো তাজ্জব চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পর পরিবারের তরফে বউবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। জানা যায় এই ঘটনায় হাসপাতালেরই কয়েকজন কর্মী জড়িত৷ সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতেই প্রথমে ২ চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের জেরা করায় উঠে আসে আর একজনের নাম। ফের একজনকে আটক করা হয়। এই নিয়ে ঘটনায় মোট ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিংয়ে ৭৭২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন বসিরহাটের বাসিন্দা বছর ৪৮ এর এক মহিলা। দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগ নিয়ে রোগীর সঙ্গে এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় গোটা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে ব্যাপক তল্লাশি শুরু হয়েছে৷ এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তাও নজরে রাখা হচ্ছে। ঘটনায় পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই রোগিণী ঘুমিয়ে থাকার সুযোগ নিয়ে ওই তিনজন দুষ্কৃতির মধ্যে দুজন ওয়ার্ডে এসে ওই মহিলার সোনার হার আংটি ছিনটাই করে। প্রথমে বিষয়টি নজরে আসে ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত এক নার্সের। তিনি ধরতে গেলে পিপিই পরে থাকা দুই দুষ্কৃতী পালাতে শুরু করেন। নার্স তাদের পিছনে তাড়া করেও তাদের ধরতে পারেননি। এরপর তিনি দ্রুত বিষয়টি সুপারের অফিসে জানান।
ঘটনাটি জানাজানি হতেই করোনা আক্রান্ত ওই রোগিণী প্রথমে কলকাতা মেডিকেল কলেজের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। রোগিণীর অভিযোগ পাওয়া মাত্রই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। দ্রুত পুলিশে খবর দেওয়া হয়। এদিকে খবর পাওয়া মাত্রই বউবাজার থানা এবং কলকাতা মেডিকেল কলেজের ফাঁড়ির কর্তা ও কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর রোগিণীর পরিবারের সাথে কথা বলে হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর প্রথমে এসএসবিতে কর্মরত দুই কর্মী রোহিত ও ধর্মেন্দ্রকে আটক করে বউবাজার থানার পুলিশ। এরপর তাদের জেরা করে আরও ১জনকে আটক করা হয়।
এদিকে এই প্রথম নয়, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বেশ কয়েকবার হাসপাতাল থেকে রোগিদের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনা একাধিকবার নজরে এসেছে৷ ফলে এভাবে বারংবার চুরির ঘটনায় রীতিমতো অসহায়তার সুরে হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, “কিভাবে আটকাব তা বুঝতে পারছি না। এদিন ভর্তি হয়েছেন ওই রোগী। দুপুরে দুজন পিপিই ড্রেস পড়ে ওই রোগীর কাছে গিয়ে বলে, আপনার হার এবং আংটি খুলে দিন। আপনার পরিবারকে দিতে হবে। হাসপাতালে সোনার জিনিস পড়ে থাকা যায় না। মহিলা দিতে অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু তারপর একপ্রকার জোর করেই তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় হার এবং আংটি।” তবে যদিও এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও হাসপাতালের সুপার অবশ্য এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।