ভীষ্মদেব দাশ, কোলাঘাটঃ স্বামীকে খুনের অভিযোগে স্ত্রীকে গণপ্রহার এলাকার বাসিন্দাদের। লাঠি, রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করার পর মাথার চুল কেটে দিল উত্তেজিত প্রতিবেশীরা। প্রতিবেশীদের দাবি, অভিযুক্ত গৃহবধূ তার বাপেরবাড়ির লোকেদের মদতেই স্বামীকে খুন করেছে। আক্রান্ত বধূর বাবা ও বোনকে ঘরবন্দি করে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। আক্রান্তদের উদ্ধার করতে এসে আক্রান্ত হতে হল পুলিশকেও।
বৃহস্পতিবার এভাবেই স্বামীকে খুনের অভিযোগে লকডাউনের মধ্যেই ক্ষোভের আগুন জ্বলল কোলাঘাট থানার কাঁউরচন্ডী গ্ৰামে। ঘটনার খবর পেয়ে আক্রান্তদের উদ্ধার করতে এসে উত্তেজিত জনতার হাতে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশও। পুলিশের লাঠিচার্জে শান্ত হয় পরিস্থিতি। এই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে আটক ৮ গ্রামবাসীকে। গণপিটুনি ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে বধূর স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় রুজু হয়েছে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা।
তমলুকের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অতীশ বিশ্বাস বলেন,”যুবকের মৃত্যুর বিষয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তা থানায় দায়ের করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে যে নৃশংসতা দেখানো হল তা নিন্দনীয়। এই ধরনের ঘটনা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।” পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম সুব্রত দাস (২৯)। পারিবারিক অশান্তির কারণে সুব্রত আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা। এরপরই বুধবার রাতে বাড়িতে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তা মানতে চাননি এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি নিজের স্বামীকে খুন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছে সুপর্ণা এবং তাঁর বাপের বাপের বাড়ির লোকেরা। তাই রাতেই পুলিশ ডেকে দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন কাঁউরচন্ডী গ্ৰামের বাসিন্দারা। বধূ সুপর্ণাকে ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুপর্ণাকে বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বার করে উত্তেজিত জনতা। লাঠি, রড নিয়ে শুরু হয় বেধড়ক মারধর। পুরুষদের সঙ্গে লাঠি নিয়ে মারধর করেন মহিলারাও। পরে তাঁর মাথার চুলও কেটে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পাশের গ্রাম গোবরা থেকে দৌড়ে আসেন সুপর্ণার বাবা-মা ও বোন। তাঁদেরও ঘরবন্দি করে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে কোলাঘাট থানার পুলিশ এলে জনরোষে পড়তে হয় পুলিশকেও। আক্রান্ত বধূ ও তার পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের ওপর চড়াও হয় গ্রামবাসীরা। পুলিশ ভ্যান থেকে তাঁদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় গ্রামবাসীরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে নামে পুলিশ বাহিনী। লাঠিচার্জ করে গ্রামবাসীকে ছত্রভঙ্গ করে উদ্ধার করা হয় আক্রান্তদের।
স্থানীয় সূত্রে জানাগিয়েছে, বছর ছয়েক আগে বিয়ে হয়েছিল সুব্রত-সুপর্ণার। দম্পতির ৩ বছরের এক পুত্র সন্তানও আছে। সুব্রতের নেশাভাঙ করাকে কেন্দ্র করেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি চলছিল। মারধর, অশান্তির জেরে গ্রামে সালিশি সভা বসেছে কয়েকবার। কিন্তু তাতেও শান্তি ফেরেনি দাম্পত্য জীবনে।
স্থানীয় বাসিন্দা অমল মাইতি অভিযোগ করে বলেন, ”দুজনের মধ্যে প্রতিনিয়ত দাম্পত্য কলহ লেগেই ছিল। তিনদিন আগেও আমরা গ্রামবাসীরা বসে তা মীমাংসার চেষ্টা করেছিলাম। রাতের অন্ধকারে গ্রামবাসীদের কাউকে না জানিয়ে পুলিশ কীভাবে দেহ নিয়ে চলে গেল? আমরা নিশ্চিত সুপর্ণাই তার বাপেরবাড়ির লোকেদের মদতে স্বামীকে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমরা চাই পুলিশ প্রকৃত ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিক।”
আক্রান্ত গৃহবধূ সুপর্ণা বলেন, ”গতকাল রাতেও মদ খেয়ে এসে আমাকে ব্যাপক মারধর করেছে স্বামী। পরে দুজনেই ঘুমোতে চলে যাই। রাতে শাশুড়িই আমাকে ডেকে স্বামীর মৃত্যুর খবর জানান। রাতে দুজনে মিলে মৃতদেহ নামাই। স্থানীয় বাসিন্দাদের বারবার ডাকলেও তারা কেউ এগিয়ে আসেনি। বাধ্য হয়ে পুলিশে খবর দিলে রাতে পুলিশ মৃতদেহ নিয়ে যায়। এটা আমার ভুল আমি জানতাম না। যার জন্য এত বড় ঘটনা ঘটে যাবে। আমি খুন করিনি। আমি দোষী হলে নিশ্চিত আমার শাস্তি হবে।