নিজস্ব সংবাদদাতা: এই প্রথম কোনও খড়গপুর শহরের করোনা আক্রান্ত যুবকের মৃত্যু হল। বছর চল্লিশের ওই যুবকের মৃত্যু হল রবিবার খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। জানা গেছে চিকিৎসার কোনো রকম সুযোগ না দিয়েই মৃত্যুর কোলে ঝুঁকে পড়ে ওই যুবক। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার বেলা ১০টা নাগাদ। খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে এই দিন সাড়ে ৯টা নাগাদ মালঞ্চ এলাকার ওই যুবককে আনা হয় হাসপাতালে। যুবকের তখন প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে যুবককে নিয়ে যাওয়া হয় খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সদ্য গঠিত ‘অবজারভেটরি ওয়ার্ডে। হাসপাতালে সংক্রমন ঠেকাতে আগে এই ওয়ার্ডে আনা হয় রোগিদের এরপর তাঁদের আ্যন্টিজেন পরীক্ষা করে তারপর পজিটিভ হলে গুরুত্ব অনুযায়ী শালবনী কিংবা সেফ হোমে পাঠানো হয় আর নেগেটিভ হলে প্ৰয়োজনীয় ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যুবককে অবজারভেটরি ওয়ার্ডে নিয়ে আসার পরই তাঁর রক্ত সংগ্ৰহ করা হয় আ্যন্টিজেন পরীক্ষার জন্য। তারপর তা পাঠানো হয় ল্যাবে। হাসপাতালে আসার পরও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা বেড়ে চলে। আমরা প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে চলে যাচ্ছিল। এরপর ধিরে ধিরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে যুবক, এক সময় নাড়ির গতি থেমে যায়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন মৃত্যু হয়েছে তাঁর। আর এই মৃত্যুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই আ্যন্টিজেন পরীক্ষার রিপোর্ট এসে পৌঁছায়, দেখা যায় পজিটিভ হয়েই ছিলেন ওই যুবক।
যুবকের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দুদিন আগে জ্বর হয়েছিল যুবকের। সেই জ্বর কমে গেলেও শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছিল বটে কিন্তু কোনও উপশম হচ্ছিলনা। আজ অর্থাৎ রবিবার সকাল থেকে শ্বাসকষ্টর দমক বাড়তে থাকে। চোখ মুখ উল্টে যাওয়ার জোগাড় হয়। তড়িঘড়ি একটি আ্যম্বুলেন্স জোগাড় করে তাঁকে আনা হয় হাসপাতালে কিন্তু শেষ রক্ষা হলনা।
এরপরই হাসপাতালের পক্ষ থেকে যুবকের পরিবারের কয়েকজনের আ্যন্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায় যুবকের স্ত্রী ও মেয়ের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। কয়েকজনের নেগেটিভ আসলেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি চিকিৎসকরা। ফের তাঁদের আরটি/পিসিআর পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হবে তাঁদের। উল্লেখ্য এই নিয়ে চলতি সপ্তাহেই ৬জনের মৃত্যু হল খড়গপুর শহরের। কয়েকদিন আগেই ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে মৃত্যু হয় এক চিকিৎসক সহ ৫জনের।
রবিবার এই যুবকের মৃত্যু আরও একটি কারনে উল্লেখযোগ্য যে এই নিয়ে ১৫টি মৃত্যু দেখেল শহর কিন্তু এত কম বয়সে মৃত্যু এই প্রথম। খড়গপুর শহরের পাঁচবেড়িয়ার যে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির প্রথম মৃত্যু হয়েছিল মেদিনীপুর শহর লাগোয়া তৎকালীন কোভিড হাসপাতালে তাঁর বয়স ছিল ৪৭ বছর। এরপরের প্রতিটি মৃত্যুই ৫৮বছর বা তার উর্দ্ধে হয়েছে। যুবকের অন্য কোনও সমস্যা ছিল কিনা দেখা হচ্ছে। প্রশাসনের দায়িত্বেই যুবকের মৃতদেহ সৎকার করা হবে শহরের মন্দিরতলা বৈদ্যুতিক চুল্লিতে।