নিজস্ব সংবাদদাতা: যে ঠিকানায় করোনা রোগির থাকার কথা সে ঠিকানায় রোগি নেই, আছে ডাক্তার! তাহলে রোগি কই? খবর নিয়ে জানা গেল রোগি পালিয়েছে ভাইজ্যাক। লকডাউন কাটিয়ে উঠে অনেকেই ঝাড়া হাত পা। সেরকমই একটি পরিবার ভাইজ্যাক থেকে বেড়াতে চলে এসেছিল খড়গপুর। যে তিনজন বেড়াতে এসেছিল বলে দাবি করা হচ্ছে তাঁদের ১৬বছরের মেয়ে এবং তার বাবা ও জেঠু ছিল। নিজেদের প্রাইভেট কারেই ভাইজ্যাক থেকে সোজা গাড়ি চালিয়ে তিন সদস্যের পরিবার খড়গপুরে চলে আসে।
খড়গপুরে প্রবেশের আগেই তাঁরা এক পরিচিত হাতুড়ে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং বলে যে খড়গপুর শহরে এক পরিচিতের বাড়িতে উঠবেন তাঁরা তবে তার আগে তাদের জন্য করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট যোগাড় করে দিতে হবে। কোয়াক ডাক্তার তাঁদের বলে সোজা খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে চলে আসতে। সেই মত খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে চলে আসে ওই পরিবার। এদিক থেকে কোয়াক ডাক্তারও পৌঁছে যান। হাসপাতালের খাতায় মেয়েটির নাম লেখা হলেও ঠিকানা আর ফোন নম্বর দেওয়া হয় ওই চিকিৎসকের। মেয়েটির বাবার নামের সঙ্গে অবশ্য অন্য একটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়। ২৭তারিখ এই নমুনা দেওয়া হয়।
২৯ তারিখ ফলাফল আসার পর পুলিশ ওই ফোন নম্বর অনুযায়ী ফোন করে জানতে পারে যে যারা নমুনা দিয়েছিল সেই পরিবার আর নেই নমুনা দিয়েই তারা ভাইজ্যাক চলে গেছে। খড়গপুর পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, “আমি তিনজনকেই নিয়ে গিয়ে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওরা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। আমার চেম্বার খুলতে দেরি হবে বলে কিছুক্ষন থেকে চলে আসি। ওদের নাম রেজিস্ট্রেশন করার সময় আমারই ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল। সোমবার ওদেরকে হাসপাতালে রেখে আমি বাড়ি ফিরেছি। ঘন্টা দুয়েক পরে আমার কাছে ফোন করে ওই পরিবার জানায় যে, ওঁরা নমুনা দিয়েই খড়গপুর ছেড়ে চলে গেছেন। ওড়িশার বালেশ্বরে পৌঁছে ওরা ফোন করে জানায় যে, ওরা ভাইজ্যাকেই ফিরে যাচ্ছেন কেননা এখানে ওরা পজিটিভ হয়ে পড়লে পুরো পরিবারকেই এখানে আটকে যেতে হবে।”
মজার ব্যাপার হল তিনজন থাকলেও নমুনা দিয়েছিল ২জন। মেয়েটি এবং তার বাবা নমুনা দেয়। অথচ কারো বাড়িতে থাকতে গেলে তিনজনের নেগেটিভ রেজাল্ট চাই। মনে করা হচ্ছে মেয়েটি পজিটিভ এটা আগেই জানত পরিবার। তারা এটাও জানত যে বাকি দুজন নেগেটিভ। তবুও পাছে সন্দেহ না হয় তাই মেয়ের সঙ্গে বাবাও নমুনা দেয় কিন্তু জেঠু দেয়নি। এঁরা মনে করেছিলেন এই চিকিৎসককে দিয়ে একটি সার্টিফিকেট ম্যানেজ করা যাবে কিন্তু হাসপাতালে নমুনা দিতে গিয়ে এরা টের পেয়ে যান, কাজটি সহজ হবেনা বরং এখানে পজিটিভ হয়ে ধরা পড়ে গেলে মুশকিল তাই নমুনা দিয়েই পালিয়েছেন তাঁরা।
কোনও কারনে ১৬বছরের মেয়েটির নেগেটিভ সার্টিফিকেট দরকার ছিল কিন্তু তা বলে ভাইজ্যাক ছেড়ে খড়গপুর কেন? কোয়াক ডাক্তার জানাচ্ছেন, বাবার চাকরি সূত্রে এক সময় এই পরিবারটি খড়গপুরে বসবাস করত। ৩০বছর আগে খড়গপুর ছাড়ে। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইজ্যাক বা বিশাখাপত্তনম গ্রুপ মারফৎ আলাপ হয় আমার সঙ্গে। আমিও ওই গ্রুপেই আছি। সেই সূত্র ধরেই ওরা আমার কাছে ফিট সার্টিফিকেট চেয়েছিল। কিন্তু বুঝতে পারেনি আমি ওদের হাসপাতালেই নিয়ে যাব। লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দিয়েই ওরা বুঝতে পারে এখানেও ফেঁসে যাবে তাই পালিয়েছে।
বুধবার খড়গপুর শহরে এই ঘটনা ছাড়াও আরও ৯জন পজিটিভ এসেছেন। যার মধ্যে রেল আবাসনের মা ও মেয়ে রয়েছে। এছাড়াও ডিআরএম অফিসে কর্মরত ২জন রয়েছেন। এছাড়াও সোনামুখী, ঝাপেটাপুর, নিমপুরাতে নতুন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। পুরাতন বাজার এলাকায় বাস করেন খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালেরই এক রক্ষীর পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে।
তবে এদিনের যে রিপোর্ট সব চেয়ে নজর কেড়েছে তাহল খড়গপুর শহরের খরিদা ৩৬পাড়া এলাকার ২৬বছরের এক মৃতা সদ্য প্রসূতি তরুনীর পজিটিভ ফল আসা । গত সোমবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগে সকালে পুত্র সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই তরুণী। সাড়ে তিনটে নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার রাতে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল ওই প্রসূতিকে। চিকিৎসকদের সন্দেহ ছিল ওই প্রসূতি করোনা আক্রান্ত ছিলেন তাই মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্ৰহ করা হয় তার। মঙ্গলবার অমীমাংসিত আসলেও বুধবার পজিটিভ আসে। যদিও শিশুটি করোনা মুক্ত বলেই জানা গেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম।
সবমিলিয়ে এখনও অবধি খড়গপুর শহরের ভাইজ্যাক পলাতকাকে বাদ দিয়ে ১২৬জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেল। এরমধ্যে ৭ জন মৃত এবং ৪০জন সক্রিয় করোনা আক্রান্ত রয়েছেন। বাকিরা করোনা মুক্ত হয়েছেন।