নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা সন্ক্রমনের বাড়বাড়ন্তর মুখে দাঁড়িয়ে অঘোষিত লকডাউনে চলে গেল খড়গপুর শহর। রবিবার শহরের মাইক প্রচার করে জানিয়ে দেওয়া হল বিকাল ৫ টার পর বাজার বন্ধ রাখতে হবে। মজার ব্যাপার পুলিশ কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অদ্ভুত ভাবে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন পুলিশ এবং কর্তারা। সরাসরি কেউই স্বীকার করতে চাননি এই ঘোষনার কথা কিন্তু পুলিশের মাইক এদিন ঘুরে বেড়িয়েছে ইন্দা, খরিদা, মালঞ্চ, গোলবাজার, কৌশল্যা, ঝাপেটাপুর, ডিভিসি, প্রেমবজার, তালবাগিচায় আর জানিয়ে দিয়েছে আজ (রবিবার)থেকে বিকাল ৫টার পর বাজার খোলা রাখা যাবেনা।
যদিও খড়গপুরের দায়িত্বে থাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কিংবা এসডিপিও খড়গপুর সহ সমস্ত পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়ে দিয়েছেন, এরকম কোনও নিয়ম হয়নি, কেবলমাত্র কন্টেনমেন্ট এলাকায় দোকানপাট বন্ধ থাকার কথা, শহরের বাকি অংশে দোকানপাট স্বাভাবিক থাকবে, রাত ৯টা অবধি। তাহলে কারা ঘোষনা করল এই কথা? কোনও উত্তর মেলেনি।
এদিকে শহর জুড়ে এই মাইকিংয়ের পরেই ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেছে খরিদা, সুভাসপল্লী, গোলবাজার, বাসস্ট্যান্ড, ইন্দা মোড় সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। সর্বত্রই ব্যবসায়ী কিংবা দোকানদারেরা জানিয়েছেন পুলিশের নাম করে করা ওই মাইক প্রচারের পরেই দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। যদিও হঠাৎ করে এই ঘোষনায় সব দোকান বিশেষ করে খাবার দোকানগুলি বন্ধ করতে একটু সময় নিয়েছে ঠিকই তবে আগামীকাল থেকে বিকাল ৫টাতেই দোকান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পুলিশ বা মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ঘোষনার কথা স্বীকার না করা হলেও ঘোষনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন খড়গপুর শহরের বিধায়ক প্রদীপ সরকার। বিধায়ক জানিয়েছেন, ‘ বাজার গুলিতে অত্যধিক জটলা দেখা যাচ্ছিল। মানুষজন বেপরোয়া ভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সবাই মনে করতে শুরু করেছেন যে অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে শহরকে রক্ষা করার জন্যই পুলিশের পক্ষ থেকে এই ঘোষনা করা হয়েছে।”
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেটা স্বীকার করতে অসুবিধা কোথায়? নাম গোপন রাখার শর্তে পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “রাজ্য সরকারের ঘোষিত লকডাউন নীতি অনুযায়ী বাজার চালু থাকার কথা সন্ধ্যা ৭ টা অবধি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কন্টেনমেন্ট জোন নয় এমন জায়গায় বাজার বন্ধ করা যায়না। মুশকিল হচ্ছে খড়গপুর শহরের সাকুল্যে ১০টির মত কন্টেনমেন্ট জোন করা হয়েছে এবং তা অত্যন্ত অল্প পরিসরে। বাদ বাকি শহর খোলা পড়ে আছে আর নিময়নীতি না মেনেই কাতারে কাতারে মানুষ বাইরে বেরিয়ে পড়ছেন। এদিকে খড়গপুর শহরে করোনা সন্ক্রমন বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় বাজারের সময়সীমা ২ঘন্টা কমিয়ে আনা হয়েছে যার আইনি বৈধতা নেই। তাই এর কোনও রেকর্ড নেই আর সে কারনে পুলিশ ও প্রশাসন এই কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে পারবেননা কিন্তু ঘটনা হল এছাড়া আপাতত বিকল্প কোনো উপায় নেই।”
প্রায় অর্ধ শতাধিক আক্রান্তের শহর এখন খড়গপুর। মৃত্যু হয়েছে ৬জনের, তবুও বেপরোয়া শহর। আর সেই বেপরোয়া শহরবাসীকে নিয়ন্ত্রন করতে বাজারের সময় ২ঘন্টা কমানোর পাশাপাশি সোমবার থেকেই শহর জুড়ে শুরু হবে মাস্ক অভিযান। শহরের প্রান্তরে প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়ে চলবে এই অভিযান। বিনা মাস্কে বাড়ির বাইরে বের হলেই পথচারী থেকে বাইক আরোহী, সাইকেল, অটো, টোটো, চারচাকার চালক সব্বাইকেই গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন খড়গপুর শহরের পুলিশ কর্তারা।