নিজস্ব সংবাদদাতা: রবিবার ছুটির দিন খড়গপুর শহরের খরিদা বাজারে অন্যতম তৃণমূল নেতা দেবাশিস চৌধুরীর ওরফে মুনমুনের পার্টি অফিসের সামনে এক প্রকান্ড হোর্ডিং নজর কেড়েছিল শহরের। অনেকটাই সাহিত্যের ভাষায় লেখা সেই হোর্ডিং টাঙানো হয়েছিল তৃণমূল কর্মীদের নামেই যেখানে লেখা ছিল “দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের মূল্য যেখানে নেই, যেখানে মূল্য পায় চালাকি, সেখানে বেদনা অবশ্যম্ভাবী। এই বেদনা থেকে জন্ম নিতে নিজস্ব ভূবন। সেখানে হতে পারে নানা সামাজিক প্রক্রিয়াজাত নতুন নতুন সৃষ্টি। সমাজে ভালবাসার মূল্য কম নয়।”
সাধারন এই হোর্ডিংয়ের মধ্যে খোঁচা ছিল ঠিকই কিন্তু তার মধ্যে যে এতটা পেট্রল ছিল যা কিনা অন্যের মনে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে তা জানা গেল ১২ঘন্টার মধ্যেই। যখন কেউ বা কারা এসে ওই হোর্ডিং টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে দিয়ে যায়।
মুনমুন চৌধুরীর এক অনুগামী জানিয়েছেন, “এই হোর্ডিং ছিঁড়েছে পুলিশের লোকেরাই। তাঁদের আরও দাবি খড়গপুর টাউন থানার আই.সি রাজা মুখার্জীর উপস্থিতিতেই ওই হোর্ডিং নামানো হয়েছে। পুলিশ কার হাতে তামাক খাচ্ছে আজ মানুষ দেখতে পেল।”
১২ঘন্টা আগে সাত সকালে ওই হোর্ডিং মানুষের নজর কেড়ে ছিল। তাঁরই কর্মীদের টাঙানো ওই হোর্ডিংয়ের প্রতি তাঁর সমর্থন আছে জানিয়ে মুনমুন বলেছিলেন, “যে ভাবে দলের পুরানো কর্মীরা ক্রমাগত দলে মর্যাদা হারাচ্ছেন তাতে কর্মীদের আবেগের পাশে আমি আছি।” মুনমুন বলেন,” যাঁরা অতীতকে ভুলিয়ে দিতে চায় লড়াইটা তাঁদের বিরুদ্ধেই। তাই এই আবেগটা যথার্থ।” এখুনি দল ছাড়ার কথা ভাবছিনা জানিয়ে দিয়েও মুনমুন অনেকটাই হতাশার সঙ্গে বলেছেন, “বর্তমানে যাঁরা জেলার নেতা তাঁদের অনেককেই দীর্ঘদিন ধরেই দেখছি। তাঁদের কোনও বাসনা বা ইচ্ছাই নেই প্রকৃত কর্মীদের সম্মান দেওয়ায়।”
এবারকার ঘটনা ২১শে জুলাইয়ের পর সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে। এ ধাপেও কোনোও কমিটিতে ঠাঁই পাননি মুনমুন কিন্তু তার চেয়েও বোধহয় বড় কথা এবার খড়গপুর শহর সহ চার চারটি বিধানসভার দায়িত্বে খড়গপুর শহরের বিধায়ক প্রদীপ সরকার।
ঠিক এই মুহূর্তে এখন মুনমুনের দলে টিকে থাকাটা যেন পড়ে পাওয়া ১৪ আনার মতই। দলে আছেন, কিন্তু নেই। পদ নেই, গুরুত্ব নেই নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার সময় দল যে টুকু মর্যাদা দেয় সেটাও নেই। ২০১১ সালের পর দলের ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, বিস্তার যতই বেড়েছে ততটাই বহরে কমেছেন খড়গপুর শহর ছড়িয়ে একদা তৃণমুলের জেলা যুব সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী ওরফে মুনমুনের। অন্যদিকে অনেকটাই চা ওয়ালা নরেন্দ্র মোদির মতই চমক প্রদ উত্থান শহরের বিধায়ক প্রদীপ সরকারের। ভারতী ঘোষের দল ভাঙানোর দৌলতে খড়গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান থেকে বিধায়ক হয়ে সাম্প্রতিক দলীয় রদ বদলে নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ছাড়াও খড়গপুর গ্রামীন, শালবনী, দাসপুরের দায়িত্বে।
স্বাভাবিক ভাবেই এবার ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙেছে মুনমুন অনুগামীদের আর তারই প্রতিফলন ঘটেছে রবিবারের হোর্ডিংয়ের মধ্যে। মুনমুনের অনুগামীরা আরও জানিয়েছেন, আগুনটা আসলে জ্বলেছে প্রদীপ সরকারের বুকের মধ্যেই। অযোগ্য হওয়া স্বত্ত্বেও একের পর এক পদ পেয়েই যাচ্ছেন। আজকের হোর্ডিং তাই গায়ে জ্বালা ধরিয়েছে আর সে কারনেই পুলিশ দিয়ে হোর্ডিং নামানো হয়েছে। পুলিশ অবশ্য এই হোর্ডিং নামানোর কথা অস্বীকার করেছে। আর প্রদীপ সরকার জানিয়েছেন, ওই কাজ তৃনমূল কর্মীরা করেছেন বলে মনেই হয়না, মনে হয় দলকে বদনাম করতে বিজেপির লোকেরাই এটা করেছে।