নিজস্ব সংবাদদাতা: আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি ১৫০০ আক্রান্ত ছুঁয়ে যাবে খড়গপুর রেল পরিবারের সদস্যরা। যার মধ্যে বর্তমান কর্মী এবং তাঁদের পরিবার সদস্যরাই সংখ্যায় বেশি। কিছু রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এবং পরিবার। প্রতিদিনই গড়ে ৩০ থেকে ৩৫জন রেলকর্মী আক্রান্ত হচ্ছেন, আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁদের পরিবার। কিন্তু কিছুই করার নেই, এই ভয় নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে কর্মী থেকে আধিকারিক, ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক, সিগন্যাল, কন্ট্রোলার, গ্যাংম্যান, ড্রাইভার, গার্ড প্রভৃতি সামনের সারিতে থাকা কর্মচারীদের। কয়েকজন কর্মীর মৃত্যুও হয়েছে কিন্তু তারপরেও এই স্তরে কর্মী কমানো হয়নি বা বলা ভালো কমানো যায়নি।
রেলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর বিশেষ করে এপ্রিল মাস থেকে আক্রান্ত বেড়েছে হুহু করে। আর ১১ই মে অবধি খড়গপুর রেলকর্মী পরিবারে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০২৬ (1026)। এরপর ১২ই মে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৬ জন এবং ১৩ই মে ২৮জন এবং ১৪ই মে ৩২জন। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে সামনের সপ্তাহের মাঝামাঝি সংখ্যাটা ১৫০০হাজার ছুঁয়ে যাবে। সমস্যা হচ্ছে রেলকর্মীরা নিজেরা তো আক্রান্ত হচ্ছেনই তারই সাথে আক্রান্ত হচ্ছে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে বিশেষ করে যাঁরা বৃদ্ধ বাবা-মা কিংবা বাচ্চা রয়েছে এমন রেল কর্মী পরিবারগুলিতে।
রেলসূত্রে জানানো হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকেই সরকারি অফিস , কলকারখানায় ৫০শতাংশ কিংবা তারও কম কর্মী নিয়ে কাজ করতে বলা হলেও সেই নীতি রেলে অনুসৃত হচ্ছেনা। আ্যকাউন্টস কিংবা পেমেন্ট বিভাগে এই নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কারখানা বা ওপেনলাইনে কর্মী হ্রাস করা হয়নি। রেলের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেছেন, ‘ যেখানে কম কর্মীর উপস্থিতিতে কাজ করানো সম্ভন সেখানে করা হচ্ছে কিন্তু যেখানে তা সম্ভব নয় সেখানে সবাইকে কাজ করতে হচ্ছে। লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকলেও মেল, এক্সপ্রেস ট্রেন চলছে, চলছে মালগাড়ি। স্বাভাবিক ভাবেই ট্রেনের ইঞ্জিন মেরামত, বগি মেরামত, লাইনের দেখভাল, বিদ্যুৎ সরবরাহ, সিগন্যাল, কন্ট্রোল পুরোদস্তুর চালু রাখতে হয়েছে। না হলে ট্রেন চলবেই বা কী করে আর সেই যাত্রা নিরাপদ হবে কী করে? আমরা যেটা করতে পারি এবং করছিও তা হল সামাজিক দূরত্ব বহাল রেখে, মাস্ক পরে যাতে কাজ করা হয় সেই ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে।”
যদিও রেলকর্মীদের বক্তব্য, রেলের কাজে সবসময় এই নীতি মানা সম্ভব হচ্ছেনা। এক রেলকর্মী জানিয়েছেন, ‘”যখন একটি ইঞ্জিন মেরামত করার জন্য একাধিক ব্যক্তিকে একটি ইঞ্জিনের ভেতরে একাধিক ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে হচ্ছে তখন ইঞ্জিনের সংকীর্ণ পরিসরে আমাদের গা ঘেঁষাঘেঁষি করেই দাঁড়াতে হয়। একই ভাবে লাইন মেরামত, ক্রেনের ব্যবহার, বিদ্যুৎ সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখতে মেরামতি ইত্যাদি অনেক জায়গাতেই সামাজিক দূরত্বনীতি মানা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে সংক্রমন ছড়াচ্ছে।”
দক্ষিণপূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়নের খড়গপুর শাখার সহকারি সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত মল্লিক বলেন, ‘ আমরা রেলের কর্মীরা জানি যে জাতির স্বার্থে আমাদের কাজ করে যেতে হবে কারন রেল পরিষেবা হচ্ছে জাতির লাইফ লাইন। কাজ করতে আপত্তি নেই আমাদের। আমরা খালি চাইছি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রেলকর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজটি করা হোক। সেনাবাহিনীতে যেমন সমস্ত সেনাকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে তেমনই প্রতিটি রেলকর্মীকে প্রতিষেধক দেওয়া হোক।”
ইতিমধ্যেই মেনস ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মল্লিক এবং সংগঠনের খড়গপুর কারখানার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক অজিত ঘোষাল রেল কর্তৃপক্ষর কাছে একটি দাবিপত্র পেশ করে বলেছেন, যত বেশি সম্ভব রেলকর্মী, অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী এবং তাঁদের পরিবারকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হোক। কারখানা বা অন্য যেখানে একসাথে অনেক কর্মী কাজ করেন সেখানে ক্যাম্প করে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। তাঁরা আরও দাবি করেছেন যে, অবিলম্বে খড়গপুর ডিভিশনাল হাসপাতাল বা মেন হাসপাতালে একটি উপযুক্ত পরিষেবা সমন্বিত উন্নত হোম চালু করা হোক।