নিজস্ব সংবাদদাতা: মাত্র ১কিলোমিটারের মধ্যে গৃহস্থের জালে আটকে পড়েছে প্রমান সাইজের চন্দ্রবোড়া। প্রমান সাইজ মানে প্রমান সাইজ! সাড়ে চারফুট লম্বা আর ২কেজির গায়ে ওজন। এতবড় চন্দ্রবোড়া সাপ সচরাচর নজরে পড়েনা। ভাইপার প্রজাতির সাপটি বিষধর সর্প মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিষ দাঁতের অধিকারী যার হোমোটক্সিন শরীরে প্রবেশ করলে সময় মত চিকিৎসা না হলে মৃত্যু অনিবার্য। সেই রকম একটি সাপ ধরা পড়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদার এক গৃহস্থের বাড়িতে। বেলদা মফঃস্বলের সত্যনারায়ণ মন্দির সংলগ্ন অজিত পয়ড়্যার বাড়ির উঠোনে পড়ে থাকা একটি জালে আটকে পড়ে ক্রুদ্ধ সাপটি গর্জন করছিল।
বাড়ির লোকেরা সাত সকালে সাপটি দেখতে পেয়েই খবর দেয় বেলদা বনদপ্তরে। মাত্র ১কিলোমিটার দুরে যাদের অফিস কিন্তু সেই সাপ হাইজ্যাক করে নিয়ে গেল চল্লিশ কিলোমিটার দুরে খড়গপুরের হিজলি বনদপ্তর! বিষয়টি নিয়ে দুই বনদপ্তরের চাপান উতোর দেখল বেলদাবাসী।ঘটনা হল সাপটি দেখতে পেয়েই অজিত বাবু প্রথমে খবর দেন বেলদা বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যদের। তাঁরা সাপটিকে ওই অবস্থায় দেখে খবর দেন বেলদা বন দপ্তরকে। কিন্তু দীর্ঘক্ষন বেলদা বনদপ্তর আসছেনা, এদিকে সাপের গায়ে নাইলনের জালের ফাঁস আটকে পড়ছে ক্রমশ।
বেলদার মানুষ এমনিতে খুবই বন্যপ্রাণ সচেতন। যে কারনে বেলদা ও তার সংলগ্ন অঞ্চল থেকে মানুষের দেওয়া খবরে সাপের পাশাপাশি গেকো, কচ্ছপ ইত্যাদি উদ্ধার হয়। বেলদা বনদপ্তর দীর্ঘক্ষণ না আসায় খবর দেওয়া হয় হিজলি বনদপ্তরকে। ১১টা নাগাদ পৌঁছে যায় হিজলির পাঠানো সাপ ধরতে ওস্তাদ সমীর সিং। কায়দা কসরত করে ১ঘন্টার চেষ্টায় সাপটিকে জাল মুক্ত করে তাকে ব্যাগে ভরে চলে যান সমীর।
দুপুর ১টা ২০নাগাদ ঘটনা স্থলে আরেক ওস্তাদ কে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছান বেলদার বনকর্মী কিঙ্কর চন্দ। এসে দেখেন সাপ হাওয়া।
সব বেতান্ত শোনার পর কেন তাঁদের এলাকায় এসে হিজলি সাপ ধরে নিয়ে যাবে বলে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি। অন্যদিকে হিজলি বনদপ্তর জানায়, খবর পেয়েই তাঁরা গেছেন। একটি বন্য প্রাণ কে বাঁচানো নিয়ে কথা। বেশি দেরি হলে সাপটি মারা যেতে পারত। অজিত পয়ড়্যা বলেন, আমরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরই হিজলিকে খবর দিয়েছি। বাড়ি থেকে সাপটি না নিয়ে যাওয়া অবধি আমরাও শান্তি পাচ্ছিলামনা। নাওয়া খাওয়া মাথায় উঠেছিল আমাদের।
বেলদা জানিয়েছে সাপ ধরার লোক জোগাড় করতেই দেরি হয়েছে তাঁদের। সব মিলিয়ে সাপকে ঘিরে জমজমাট টানা পোড়েন চলে। অবশ্য খালি ফেরেনি বেলদা বনদপ্তরও। পর মুহুর্তেই খবর আসে বেলদা থানার টাকরার গ্রামে মাছ ধরার জালে আটকে গেছে বিশাল খরিস। না, এবার অবশ্য হাইজ্যাক হয়নি খরিস। সাপটি উদ্ধার করে বেলদাই। তবে হিজলির সাপ ধরার পদ্ধতিতে সন্তুষ্ট নয় বিজ্ঞান মঞ্চ। তাঁদের দাবি কোনও যন্ত্র ছাড়াই লাঠির সাহায্যে সাপটি কে ধরা হয়েছে যাতে বিপদ ঘটতে পারত। যাই হোক, দিনের শেষে দু’দুটি সাপ মিলল বেলদা থেকেই! ওই যে আগেই বলা হয়েছে এখানকার মানুষ অত্যন্ত সচতেন তাই ফাঁদে পড়া সাপ না মেরে তুলে দিয়েছেন বনদপ্তর কে। দিনের শেষে জয় তাই বেলদার।