নিজস্ব সংবাদদাতা: বিয়ের ১০দিনের মাথায় শ্বশুরবাড়ি থেকেই বাইকে তুলে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেল দুই যুবক। এদিকে গৃহবধূকে কিডন্যাপ করার পরই মনের দুঃখে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে গৃহবধূর স্বামীও। গত ২৪ঘন্টা ধরে দুজনের খোঁজ না পাওয়ায় উত্তাল হয়ে উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়নগড় থানা এলাকা। বৃহস্পতিবার দিনভর পথ অবরোধের পর বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির গ্রামের বাসিন্দারা। মহিলারা হুমকি দিয়েছেন অবিলম্বে ওই গৃহবধূ ও স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে না পারলে নারায়নগড় থানা এলাকা অচল করে দেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে নারায়নগড় থানার নাড়মা গ্রামপঞ্চায়েতের অধীন নয়াগ্রামের বাসিন্দা প্রশান্ত সিংয়ের সঙ্গে খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার রাখাজঙ্গল এলাকার পূজা হাঁসদার প্রেম ছিল। ১০দিন আগে আইনিভাবে বিয়ে হয় দুজনের। বিয়ের পর পূজা খড়গপুর থেকে চলে আসে এবং নয়াগ্রামে প্রশান্তর বাড়িতে থাকতে শুরু করে। গতকাল অর্থাৎ বুধবার খড়গপুর থেকে পূজার বাপের বাড়ির লোকেরা নারায়ণগড় থানায় প্রশান্তের বিরুদ্ধে একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করতে আসেন। এরপর থানার তরফে উভয়পক্ষকে ডেকে পাঠানো হয়। থানাতে গ্ৰামবাসী সহ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি নব পরিণীতা গৃহবধু পূজা হাঁসদা থানায় দাঁড়িয়ে সাফ জানিয়ে দেন তিনি বাপের বাড়ি যাবেন না। পূজা আরও জানিয়ে দেন তিনি সাবালিকা এবং নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ে করেছেন। তিনি তাঁর
স্বামীর সাথে শ্বশুরবাড়িতেই থাকবেন।
এরপর আর থানার কিছু বলার ছিলনা। দু’পক্ষই থানা থেকে বেরিয়ে আসে। পূজা ফিরে যায় শ্বশুরবাড়িতেই। কিন্ত বুধবার দুপুরেই গৃহবধূর মা ও কাকা সহ আরও কয়েকজন তারমধ্যে নয়াগ্ৰামের পাশের একটি গ্ৰামের দুজন স্থানীয় যুবক মিলে প্রশান্তের বাড়িতে চড়াও হয়। জোর করে নব পরিণীতা গৃহবধূকে তুলে নিয়ে চলে যায়। আর পুরো ঘটনাটি দুই সিভিক পুলিশের চোখের সামনে ঘটেছে। ঘটনার পরই বুধবার রাতে বাড়িতে একটি চিঠি
লিখে রেখে উধাও হয়ে যায় প্রশান্ত।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁর খোঁজখবর করার কাজ শুরু করেন গ্ৰামবাসীরা। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। জানা গিয়েছে এইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রশান্ত বাড়ি ফেরেন নি। আর এই ঘটনায় গোটা এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। গ্ৰামবাসীরা পথ অবরোধ শুরু করেন। এই ব্যাপারে প্রশান্ত সিংয়ের মা কিরন সিং জানিয়েছেন বুধবার দুপুরে বৌমার বাপের বাড়ির লোকেরা জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। বাধা দিতে গেলে তাঁকে হেনস্তা করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি বলেন বৌমা যেতে চায় নি। মুখে কাপড় বেঁধে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছে। পুলিশকে জানানোর পর আশ্বাস দেওয়া হয় এক ঘন্টার মধ্যে বৌমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু গোটা একদিন পার হয়ে যাওয়ার পরেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় নি। আর স্ত্রীকে এইভাবে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর বুধবার রাত থেকে ছেলে মনের দুঃখে ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছে।
এরপরই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। গ্ৰামের গৃহবধুকে অবিলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে আর উধাও হয়ে যাওয়া ছেলেকে খুঁজে বের করে ঘরে ফেরাতে হবে এই দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পথ অবরোধ শুরু করেন নারায়ণগড় থানার নারমা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের নয়াগ্ৰাম এলাকার মানুষজন। মকরামপুর-তেমাথানি রাজ্যসড়কের মদনমোনচক মোড়ে এই অবরোধ শুরু হয়। অবরোধে সাধারন মানুষের সাথে স্থানীয় গ্ৰাম পঞ্চায়েত সদস্য সামিল হয়েছেন। প্রশান্তের মা বলেন ” আমরা গরীব। আর বৌমার বাপের বাড়ির অবস্থা ভালো। এই আর্থিক বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে আমার ছেলে ও পরিবারকে।” এলাকার আরেক বাসিন্দা শুভেন্দু নন্দী একই দাবি জানিয়ে বলেছেন, “দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক ও নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করেছে। দেশের আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে এই অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ অবিলম্বে দুজনকেই এনে দিক। সেই দাবিতে পথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। যতদিন না দুজনকেই ফেরানো হচ্ছে ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।”
আর স্থানীয় গ্ৰাম পঞ্চায়েত সদস্য অনিমা রাউত বলেছেন ” গৃহবধূকে অপহরণ করা হয়েছে সিভিক পুলিশের চোখের সামনে। আর ছেলেও উধাও হয়ে গিয়েছে। অথচ এঁরা ভালোবাসা করে আইনিভাবে বিয়ে করেছেন। দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক।” তিনিও জানিয়েছেন গ্ৰামবাসীদের আন্দোলনের সাথে থাকবেন। অপরদিকে পুলিশ জানিয়েছে গৃহবধূকে খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে বিকাল অবধি ছেলের বাড়ির তরফে লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পরিবারকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হবে।